জ্বালানি সংকটে লোডশেডিং বেড়েছে, নভেম্বরের আগে উন্নতির লক্ষণ নেই

মঙ্গলবার ঢাকার সব এলাকায় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হয়েছে। এমনকি মধ্যরাতের পরেও লোডশেডিং হয়েছে। পূর্ববর্তী মাসগুলোতে তীব্র জ্বালানি সংকটের মাঝেও এ ধরনের পরিস্থিতি দেখা যায়নি।

গ্যাস ও জ্বালানি স্বল্পতার কারণে ৫৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। ফলে গত ১ সপ্তাহ ধরে এই অসহনীয় পরিস্থিতি চলছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর তথ্য অনুযায়ী গতকাল বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল ৪ হাজার ১১৮ মেগাওয়াট, যা জাতীয় চাহিদার এক তৃতীয়াংশ।

৩ দিনের সপ্তাহান্তে লোডশেডিংয়ের এত বেশি ছিল যে, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনে চলছে, সেগুলো রাতে বন্ধ রাখা হচ্ছে। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে।'

'আমরা আশাবাদী ছিলাম, অক্টোবর থেকে লোডশেডিং থাকবে না, কিন্তু গ্যাস সংকটের সমাধান করতে না পারায় আমরা এটি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছি। এ মাসেও কিছুটা সমস্যা থাকবে, কিন্তু আমি আশা করব আগামী মাস থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে', যোগ করেন তিনি।

গত সপ্তাহে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর থেকেই লোডশেডিং পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে এবং গত কয়েকদিন ধরে গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

গত সপ্তাহে রাজধানীর অন্তত ৪২টি এলাকায় রাত ১২টা থেকে ২টার মধ্যে লোডশেডিং হয়েছে।

এসব এলাকার মধ্যে আছে মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, ডেমরা, গোলাপবাগ, পোস্তগোলা, ধানমন্ডি, গেন্ডারিয়া, জুরাইন, রিং রোড, এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবন, গ্রীন রোড, কলাবাগান, বাংলা মোটর, নিউ মার্কেট, সোবহানবাগ ও নিকেতন।

এর মধ্যে অন্তত অর্ধেক এলাকায় রাত ১টা থেকে ২টার মধ্যে লোডশেডিং হয়েছে। এর আগের কয়েক মাসের লোডশেডিংয়ের সময়সূচিতে রাত ১২টার পর লোডশেডিং অন্তর্ভুক্ত ছিল না।

এ সপ্তাহে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডিপিডিসি) আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার ৭টি এলাকায় রাত ১২টার পর লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ঘোষণা করেছে। প্রয়োজনে অন্যান্য এলাকাতেও মধ্যরাতের পর লোডশেডিংয়ের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

এই ৭ এলাকা হলো মুগদাপাড়া, মাদারটেক, ধলপুর, জিগাতলা, হাজারীবাগ, ডেমরা ও গণকটুলি।

মগবাজার, খিলগাঁও, রামপুরা, কাকরাইল, ধানমন্ডি, কামরাঙ্গীরচর, পরীবাগ, কারওয়ানবাজার, গ্রীন রোড, আগারগাঁও এবং অন্যান্য এলাকার সময়সূচিতে বলা হয়েছে যে মধ্যরাত থেকে সকাল ৯টার মধ্যে লোডশেডিং হতে পারে।

ডিপিডিসির বেশিরভাগ এলাকায় রাত ১১টা থেকে মধ্যরাতের মধ্যে লোডশেডিং হওয়ার কথা রয়েছে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) এখনও মধ্যরাতের পর লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ঘোষণা করেনি। তবে বিদ্যুতের সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ বিতরণে ব্যবহৃত ৬২টি ফিডারে আজ রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে লোডশেডিং হতে পারে।

সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হতে পারে উত্তরায়। তালিকায় আরও আছে শাহ আলী, বারিধারা এবং বনানী, বসুন্ধরা, বাড্ডা, কাফরুল, মহাখালী, গাবতলি, মিরপুর ডিওএইচএস, মিরপুর-১০ ও ১২, ভাটারা এবং কল্যাণপুরের মতো এলাকা।

পিডিবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে গতকাল লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৯৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চাহিদার চেয়ে ১০ শতাংশ কম উৎপাদন করেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম।

ডিপিডিসি ও ডেসকো কর্মকর্তাদের মতে, গতকাল ঢাকায় প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ঘাটতি ছিল এবং তাদেরকে এলাকাভিত্তিক ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং করতে হয়েছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, গত সপ্তাহে বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট।

'আমরা চাহিদা জানিয়ে রাখছি কিন্তু সে অনুযায়ী সরবরাহ পাচ্ছি না। তারা (পিডিবি) দিনে বেশ কয়েকবার বিদ্যুতের বরাদ্দ পরিবর্তন করছে, যা বিতরণকে প্রভাবিত করছে', যোগ করেন তিনি।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমীর আলী জানান, এ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে (সোমবার) সর্বোচ্চ ২৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল। গত সপ্তাহে এক দিনে সর্বোচ্চ ঘাটতি ছিল ১৭০ মেগাওয়াট।

'সুষ্ঠু বরাদ্দ না পেলে আমাদের কিছুই করার নেই', যোগ করেন তিনি।

কাউসার জানান, লোডশেডিংয়ের সময়সূচি অনুসরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, 'গত মাসে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সময়সূচি বজায় রাখা গেলেও এখন এটা ৬০ শতাংশে নেমে এসেছে।'

রাজধানীর বাইরে পরিস্থিতি আরও খারাপ। কিছু জেলায় রাত ১২টা থেকে ৬টার মধ্যে ১ ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং হচ্ছে।

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) গতকাল ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় এ সপ্তাহের জন্য ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের সময়সূচি ঘোষণা দিয়েছে।

বিআরইবির পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সাভার, গাজীপুর ও ময়মনসিংহের কিছু এলাকায় ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে।

'আজ (গতকাল) বিকেল ৫টায় উৎপাদন ঘাটতি ছিল ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট', যোগ করেন তিনি।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

1h ago