জেলেদের চাল আত্মসাৎ করেছেন রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান: তদন্ত প্রতিবেদন

পটুয়াখালী
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুজ্জামান মামুনের বিরুদ্ধে জেলেদের ভিজিএফের চাল আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রশাসনের গঠিত অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বরাবর ইতোমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান।

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, জাটকা ইলিশ ধরায় বিরত থাকা জেলেদের জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির (ভিজিএফ) আওতায় বরাদ্দকৃত জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল বিতরণে অধিকাংশ প্রকৃত জেলেদের নাম না দিয়ে ভুয়া ও মৃত লোকের নামে চাল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করছেন বলে রাঙ্গাবালী ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুনের বিরুদ্ধে ওই এলাকার ৪১ জন জেলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পটুয়াখালী অফিসে একটি অভিযোগ করেন।

দুদক এ অভিযোগ তদন্তের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিলে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্তের জন্য ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের আলোকে ইউএনও মাশফাকুর রহমান চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল বিষয়টি তদন্তের জন্য রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. খালিদ বিন ওয়ালিদকে আহবায়ক ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বাবুলকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হয় এবং তদন্ত প্রতিবেদনটি রাঙ্গাবালী ইউএনও মাশফাকুর রহমান আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান।

এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রাঙ্গাবালী উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান খালিদ বিন ওয়ালিদ বলেন, 'তদন্তকালে আমরা উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার তালিকা সংগ্রহ করে ভিজিএফ তালিকার সাথে যাছাই বাছাই এবং পর্যালোচনা করি। এতে দেখা যায় যে, ১৯ জন মৃত ব্যক্তির নাম জেলেদের ভিজিএফ এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই তালিকায় থাকা ৭৮ জনের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অথচ ২০১৯-২০, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ এ তিন অর্থবছরে জেলেদের চাল বিতরণে এসব মৃত ও ভুয়া ব্যক্তিদের নামে বরাদ্দকৃত চাল উত্তোলন দেখানো হয়েছে। জেলেদের চাল বিতরণে এসব অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছি।'

এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাশফাকুর রহমান বলেন, 'দুদকে দায়ের করা একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমি উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরীণ একটি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত সম্পন্ন করেছি। তদন্তে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহম্মদ কামাল হোসেন বলেন, 'রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।'

এ ঘটনায় অভিযুক্ত রাঙ্গাবালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান  সাইদুজ্জামান মামুনের মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

3h ago