‘হার্ড হিটিং সামর্থ্য বাড়াতে গলফ আমাকে সাহায্য করে’

Chamari Athapaththu

মেয়েদের ক্রিকেটে হার্ড হিটারের তালিকা করলে তাতে শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক চামারি আতাপাত্তুর জায়গা নিশ্চিতভাবেই হবে। ২০১৭ সালে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪৩ বলে করেছিলেন ১৭৮ রান। মেরেছিলেন ২২ চার আর ৬ ছক্কা। মেয়েদের এশিয়া কাপ খেলতে সিলেটে এসেছেন চামারি। এখানকার উইকেট, খেলার ধরণ নিয়ে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

টুর্নামেন্ট কেমন যাচ্ছে?

চামারি আতাপাত্তু:  আসলে অধিনায়ক হিসেবে দলের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে আমরা হেরেছি। সবাই জানেন ভারত এই টুর্নামেন্টে ফেভারিট দল কারণ গত তিন সপ্তাহ ধরে তারা ইংল্যান্ডে ভাল ক্রিকেট খেলেছে। তারা তাদের পারফরম্যান্স ধরে রেখেছে। আমরা তাদের কাছে হারলেও অনেক কিছু শিখেছি। এরপর ইউএই ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষে জেতাটা আমাদের জন্য ভাল ছিল। আমরা এইরকম পারফরম্যান্স আগামী কয়েক ম্যাচেও ধরে রাখতে চাই।

ট্রফি জেতার আশা কতটা রাখেন?

চামারি: টি-টোয়েন্টি সংস্করণে কোন কিছু অনুমান করা যায় না। র‍্যাঙ্কিং, আগের পারফরম্যান্স এসব ম্যাটার করে না। আমরা যদি নির্দিষ্ট দিনে ভাল খেলি তবে জিতে যেতে পারি। আমি সব সময় আমার দল নিয়ে ভরসা রাখি, দক্ষতা নিয়েও। আমাদের অভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপ আছে, ব্যাটিং পারফরম্যান্সও জুতসই হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে, নিজেদের দক্ষতা ও সম্ভাবনায় আস্থা রাখলে সম্ভব।

উইকেট নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে, আপনার পর্যবেক্ষণে উইকেটটা কেমন

চামারি: আমার মনে হয় উইকেট খুবই মন্থর ও নিচু বাউন্সের। ব্যাটারদের খেলাটা কঠিন বিশেষ করে আমার জন্য। আমি গতিময় উইকেটে খেলে অভ্যস্ত। কিন্তু এখানকার উইকেট নিচু ও মন্থর। সিনিয়র ব্যাটার হিসেবে অবশ্য আমাকে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। ব্যাটার হিসেবে অজুহাত দিতে পারব না। ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে মানিয়ে নিতে হবে। প্রথম তিন ম্যাচে আমি আমার সেরাটা দিতে পারিনি। অন্য ব্যাটাররা ভাল করছে বিশেষ করে হাসিতা, হাসিনি ও নিলাক্ষী। আমি খুবই খুশি তা নিয়ে। পরের ম্যাচগুলোতে নিজের  উপর আস্থা রেখে নিজের সহজাত খেলাটা খেলতে চাই।

শ্রীলঙ্কায় উইকেট কেমন থাকে?

চামারি: শ্রীলঙ্কান উইকেট মন্থর হলেও বাউন্স থাকে। এরকম নিচু থাকে না। এই উইকেট বেশি স্লো আর নিচু। মন্থর সমস্যা না, কিন্তু নিচু হলে ব্যাট করা খুবই কঠিন আসলে।

মেয়েদের ক্রিকেটে অন্যতম পাওয়ার হিটারদের একজন আপনি। প্রস্তুতি কীভাবে নেন?

চামারি: আমি অনেক কিছু বিশ্লেষণ করি। আমি বরাবরই নিজের সামর্থ্যে আস্থা রাখি। আমি সব সময় প্রতিপক্ষ বোলারদের নিয়ে ঘাটাঘাটি করি। আমাকে নিয়ে প্রতিপক্ষের কেমন পরিকল্পনা থাকতে পারে এসব খতিয়ে দেখার চেষ্টা করি। অনুশীলনে এসব নিয়ে কোচদের সঙ্গে কথা বলি। কোন জায়গাগুলোতে উন্নতি করতে হবে তা দেখাই। প্রতিপক্ষ দল যখন আমার দুর্বলতা খুঁজে বের করে আমি তখন পরিকল্পনা বদলাই, স্কিলটা আবার এডজাস্ট করে নেই। সাহস নিয়ে খেলতে নামি।

প্রচুর জোরে বল মারার ক্ষেত্রে ফিটনেসটাও কি বড় কারণ? 

চামারি: আমি জিমে বেশি বেশি ফিটনেসের কাজ করতে পছন্দ করি। অনেক পরিশ্রম করি নেটে। আর জেনেটিক্যালি আমি বেশ শক্তপোক্ত। এটা একটা কারণ (পাওয়ার জেনারেট করার)। আমি প্রতিনিয়ত উন্নতির চেষ্টা করি। আমি গলফ খেলি ক্রিকেটে ভাল করার জন্য। হার্ড হিটিং সামর্থ্য বাড়াতে গলফ আমাকে সাহায্য করে। কারণ গলফের স্টিকটা দিয়ে অনেকটা ব্যাক লিফটি করিয়ে তীব্র জোরে মারতে হয়। পুরো শরীরকে বলের উপর নিয়ে আসার ব্যাপারটা এতে বেশ হয়।

১৪৩ বলে ১৭৮ রানের সেই ইনিংসটা নিয়ে কিছু বলেন

চামারি: আমি ইনিংসটা কিন্তু ধীরলয়েই শুরু করেছিলাম। তখন শুরুতে আমাদের একাধিক উইকেট পড়ে যায়। আমি ওয়ানডাউনে খেলতে নামি। উইকেট পড়লেও আমি পরিকল্পনা থেকে সরিনি। আমি ঝুঁকি না নিয়েও আমার সহজাত খেলার মধ্যে ছিলাম।  ভিতে খেলছিলাম। বাজে বল পেলেই তীব্র জোরে মারছিলাম। আমি পরে দেখলাম বল খুব ভাল ব্যাটে আসছে। এরপর ভাবলাম তাহলে তো বড় শট মারা যায়। আমি সব সময় নিজের উপর আস্থা রেখেছি। সবাই জানি অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি। আমি অতসব না ভেবে নিজের খেলার মধ্যে ছিলাম।

মনের জোরও নিশ্চয়ই প্রবল ছিল…

চামারি: আপনি যদি ভাবেন অস্ট্রেলিয়া অত বড় দল, এক নম্বর দল, তারা চ্যাম্পিয়ন। তাদের বোলার সেরা তাহলে আপনি খেলতে পারবেন না। আমি নিজের উপর ভরসা রেখে ভেবেছি এরা তো অন্য সবার মতো বোলারই।  ভয়ডরহীন মানসিকতা রাখা দরকার ভেবেছি।  আমি সব সময় এভাবেই খেলতে চাই।

ক্যারিয়ারে কোন লক্ষ্য ঠিক করেছেন?

চামারি: আমি টি-টোয়েন্টিত বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটার হতে চাই। আমি এখন ছয়-সাত-আট-নয় এসব জায়গায় থাকছি। কিন্তু একদম চূড়ায় উঠতে চাই। র‍্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি করা ব্যক্তিগত লক্ষ্য।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে মেয়েদের খেলাধুলোয় অনেক বাধা আছে। শ্রীলঙ্কার অবস্থা কেমন?

চামারি: না। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের মতো আমাদের সমাজ না। আমাদের ওখানে তেমন বাধা দেয়া হয় না মেয়েদের। আমি ক্রিকেটার হিসেবে খুব খুশি এসব কারণে। আমি জানি বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে কিছু বাধা আছে। শ্রীলঙ্কা অন্য এশিয়ার দেশগুলো থেকে এদিক দিয়ে অনেক এগিয়ে। মানুষ বোঝে, সোসাইটি বোঝে। আমার বাবা-মা, পরিবারের সদস্যরা সবাইকে শতভাগ সমর্থন দেয়। শুধু আমার বেলায় না, বাকিদের বেলাতেও একই কথা খাটে। না হলে খেলা সম্ভব হতো না।

ছেলেদের ক্রিকেটে উপমহাদেশে বরাবরই উন্মাদনে অনেক। মেয়েদের ক্রিকেটের আগামী কেমন দেখছেন?

চামারি: অস্ট্রেলিয়ায় কিন্তু মেয়েদের খেলাটা জনপ্রিয়। দর্শকরা ছেলে-মেয়ে বিভাজন করে খেলা দেখতে যায় না। বিশ্বকাপ ফাইনালে দেখেছেন কত দর্শক হয়েছিল। ইংল্যান্ডেও একই অবস্থা। প্রচুর মানুষ আসে মাঠে। ভারতেও পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। আমি নিউজিল্যান্ডের কথা বলব। তারা ত ছেলে-মেয়েদের আয় সমান করে দিয়েছে। আমি মনে করি ভাল উদ্যোগ আসছে।

অন্য দেশ যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সাউথ আফ্রিকা এবং বিশেষ করে উপমহাদেশেও বদলাবে। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাও মেয়েদের বেতন-ভাতা অনেক বাড়াবে আশা করি। আমাদের কিছু স্পন্সরশীপ দরকার। যদি কিছু খেলা জিততে পারি তাহলে স্পন্সর আসবে। ক্রিকেট বোর্ড তাহলে পেমেন্ট বাড়িয়ে দেবে।  মিডিয়ার সমর্থনও খুব দরকার। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ভারতের মিডিয়ায় প্রচুর কাভারেজ হয়। বাকিদেরও তেমনটা দরকার।

বাংলাদেশ দলে আপনার বন্ধু আছে?

চামারি: বাংলাদেশ দলে আমার ভাল বন্ধু আছে। জাহানারা আলম। ওর সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলেছি এবং সালমা খাতুন। এই দুজন ঘনিষ্ঠ।

বিগব্যাশ, সিপিএল, আইপিএলের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলার অভিজ্ঞতা কেমন

চামারি: এটা একদম ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। সব সময় দেশের হয়ে খেলি, এসব হচ্ছে ভিন্ন। অন্য দেশের খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলে, মিশে অনেক অভিজ্ঞতা হয়। নিজেদের মধ্যে ভাবনা বিনিময় হয়। যখন আমরা মিলিত হই অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়। উন্নতির ক্ষেত্র তৈরি হয়। একই ড্রেসিংরুমে  নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা, ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের পাই। ভিন্ন ভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি থেকে যাই আমরা। ভিন্ন সংস্কৃতির নির্যাস নিতে পারি।

অর্থনৈতিকভাবেও তো এটা মেয়েদের ক্রিকেটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ

চামারি: অবশ্যই। যখন বিগ ব্যাশ খেলি, আইপিএল, সিপিএল, উইম্যান হান্ড্রেড বল খেলি। আগামী বছর মেয়েদের পিএসএলও চালু হবে। এটা নারী ক্রিকেটারদের জন্য ভাল কারণ এটা আমাদের জন্য ভাল। তাতে করে আয়ের ক্ষেত্র বাড়ে, আমাদের জীবন নিশ্চিন্ত হয় আরও।

Comments

The Daily Star  | English

Enforced disappearances: Eight secret detention centres discovered

The commission raised concerns about "attempts to destroy evidence" linked to these secret cells

2h ago