অর্ধশত বছর ধরে শহীদ পল্টু ক্লাবের ব্যতিক্রমী দুর্গা পূজার আয়োজন
প্রতি বছরই পাবনার প্রতিটি মন্দিরে যথানিয়মে দুর্গা পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে, মন্দির না থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকেই শহরের গোপালপুর আবাসিক এলাকাতেও আয়োজন করা হয় দুর্গা পূজার। ৫০ বছর ধরেই সেখানে এ পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।
গোপালপুর এলাকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পল্টু মোহন চৌধুরীর স্মৃতিকে ধরে রাখতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ওই এলাকার যুবসম্প্রদায় 'শহীদ পল্টু ক্লাব'র ব্যানারে এ পূজার আয়োজন করে আসছে। এ বছর তারা ৫০তম পূজার আয়োজন করেছে।
স্থানীয়রা জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় পল্টু মোহন চৌধুরী তার ২ বন্ধু মতি ও মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের জন্য ছুটে যান। ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর পাবনার নন্দনপুর গ্রামে একটি অপারেশনে যাওয়ার সময় অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তারা। পরে পাক সেনারা তাদের হত্যা করে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গোপালপুর এলাকার যুবসমাজ তাদের স্মরণে গড়ে তোলে শহীদ পল্টু ক্লাব ও মতি স্মৃতি সংঘ। স্থানীয় যুবসমাজকে সংঘবদ্ধ করে এলাকার সামাজিক উন্নয়নে তারা কাজ শুরু করে। আর শহীদ পল্টু ক্লাব স্বাধীনতার পর থেকেই গোপালপুর এলাকায় দুর্গা পূজার আয়োজন করে আসছে।
শহীদ পল্টু ক্লাবের দুর্গা পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতি গৌতম মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাবনায় মন্দিরভিত্তিক পূজার আয়োজন করা হয়ে থাকলেও শহীদ পল্টু ক্লাব এলাকাভিত্তিক ক্লাব পর্যায়ের পূজার প্রচলন শুরু করায় স্থানীয়দের এ নিয়ে আগ্রহ অনেক বেশি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পল্টু মোহন চৌধুরীর স্মৃতি ধরে রাখতে এ পূজার আয়োজন শুরু করা হলেও সবার অংশগ্রহণে তা এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।'
পূজা আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য সঞ্জয় কুমার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্লাব পর্যায়ের এ পূজার আয়োজনে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে সপ্তাহব্যাপী চলে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। সবার আর্থিক ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রতি বছর গোপালপুর এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশে এ পূজার আয়োজন হয়ে থাকে।'
গোপালপুর এলাকার সাংস্কৃতিক কর্মী সুমিত মৈত্র জয় ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহীদ পল্টু ক্লাবের এ পূজার আয়োজনে পাবনার সর্বস্তরের মানুষ ছুটে আসে। দুর্গা পূজার পুরো সময়জুড়েই চলে এলাকায় নানা আনুষ্ঠানিকতা। এতে বিভিন্ন এলাকার অনেকেই অংশ নেয়। শহীদ পল্টু ক্লাবের এ পূজার আয়োজন এলাকার সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ধরে রাখতেও ভূমিকা রাখছে।'
Comments