শহীদ মিনারে তোয়াব খানকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

শহীদ মিনারে তোয়াব খানকে গার্ড অব অনার প্রদান। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। সেখানে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শব্দসৈনিককে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় আজ সোমবার সকাল থেকে সবার শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তোয়াব খানের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। এর আগে ঢাকার জেলা প্রশাসক শহীদুল ইসলামের উপস্থিতিতে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্যালুট জানানো হয়। এ সময় তোয়াব খানের মরদেহবাহী কফিনটি জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়।

শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে তার সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সহকারী প্রতিরক্ষা সচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল জি এম রাজীব আহমেদ তোয়াব খানকে শ্রদ্ধা জানান।

আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, 'তোয়াব খানের মৃত্যুতে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।'

সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, 'তোয়াব খান সারাজীবন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন।'

তোয়াব খানের মরদেহবাহী কফিনে শ্রদ্ধার ফুল। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

গত ১ অক্টোবর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান একুশে পদকপ্রাপ্ত এই সাংবাদিক। তিনি বার্ধ্যক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।

সাংবাদিকতাকে কেবল প্রাতিষ্ঠানিকতার নিগড়ে বন্দি না করে তা আরও সর্বব্যাপী করে তোলার জন্য যেসব উদ্ভাবনী সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছিলেন তোয়াব খান, তার তুলনা বিরল।

তোয়াব খান যখন বাংলাদেশের সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব দেন, তখনই বাংলাদেশের প্রথম ৪ রঙা সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।

একইভাবে মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক তোয়াব খান দেশের সংবাদপত্রে এমন কিছু চালু করেন, যা বাংলাদেশে প্রথম। একসঙ্গে ৫ শহর থেকে পত্রিকা প্রকাশ, খুব সকালে বাংলাদেশের সব জায়গায় পাঠকের কাছে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়া, ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থায় পত্রিকা প্রকাশ, প্রতিদিনের রিপোর্টিং মিটিং, পত্রিকার অঙ্গসজ্জার আমূল সংস্কার- এসব তার মাধ্যমেই হয়েছে।

আবার দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।

তোয়াব খান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন। পরে রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ এবং প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রেস সচিবের দায়িত্বেও দেখা গেছে তাকে।

বাংলাদেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও পিআইবির মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেছেন ১৯৫৫ সালে সাংবাদিকতায় আসা তোয়াব খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এই শব্দসৈনিকের লেখনী ও উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হতো 'পিন্ডির প্রলাপ'।

তোয়াব খানের জন্ম ১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল, সাতক্ষীরায়। তার পিতার নাম আবদুল ওয়াহাব খান ও মা জোবেদা খানম।

দৈনিক সংবাদে তোয়াব খানের পেশাগত জীবন শুরু হয় গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে। এখানে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তানের বার্তা সম্পাদক ছিলেন।

এরশাদ সরকারের পতনের পর আবার দৈনিক বাংলার সম্পাদক হন ১০ মাসের জন্য। পরে দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক পদে যোগ দেন ১৯৯৩ সালে।

গত বছর তোয়াব খান নতুন ব্যবস্থাপনায় আসা দৈনিক বাংলার সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০১৬ সালে একুশে পদক পান তিনি।

 

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

4h ago