কলা গাছ দিয়ে তৈরি প্রতীকী শহীদ মিনারে শিশুদের শ্রদ্ধা

খালি পায়ে প্রভাতফেরি করে কলা গাছ দিয়ে তৈরি প্রতীকী শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে শিশুরা। ছবি: স্টার

শরীয়তপুরে ৬৯৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫৪৪টিতে কোনো শহীদ মিনার নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে কলা গাছ দিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার বানিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে শিশুরা।

'শরীয়তপুরে ৫৫১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার, কলাগাছের মিনারে শিশুদের শ্রদ্ধা' শিরোনামে গত বছর দ্য ডেইলি স্টারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর এক বছরে মাত্র সাতটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে।

যদিও জেলা শিক্ষা অফিস বলছে সরকারি বরাদ্দ ও সামাজিক সহযোগিতা পেলে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব। এ ব্যাপারে তথ্য নিতে গেলে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা শিক্ষা অফিস থেকে শহীদ মিনারের স্থাপনের বরাদ্দ চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেওয়া হয়।

শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের ছয় উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মোট ৬৯৮টি। এর মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ১৫৪টিতে।

শরীয়তপুর সদরে ১২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০টিতে, ডামুড্যায় ৬৯টির মধ্যে নয়টিতে, গোসাইরহাটে ৯৮টির মধ্যে ৯২টিতে, জাজিরায় ১২৩টির মধ্যে ছয়টিতে, নড়িয়ায় ১৩১টির মধ্যে ১৭টিতে এবং ভেদরগঞ্জে ১৫১টির মধ্যে ২০টি প্রাথমিক স্কুলে শহীদ মিনার আছে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেসব স্কুলে শহীদ মিনার নেই সেখানে শিশুরা কলাগাছ, বাঁশ ও ককশিট দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালন করছে।'

আমরা আজই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি পাঠাব। বরাদ্দ পেলে শিগগির বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারব। সামাজিকভাবে উদ্যোগ নিয়ে চাইলেই যে কেউ শহীদ মিনার নির্মাণে এগিয়ে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমারা সব ধরনের সহযোগিতা করব।'

মঙ্গলবার বিকেলে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ৫৯ নং দক্ষিণ বালুচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের দপ্তরী মোশাররফ হোসেনকে নিয়ে শিশুরা কলা গাছ দিয়ে প্রতীকী শহীদ মিনার তৈরি করছে। শিশুরা নিজেরাই কলা গাছ সংগ্রহ করে কাঁধে করে নিয়ে এসেছে শহীদ দিবস পালনের জন্য। তারা নিজেরাই মাটি খুঁড়ে কলাগাছ মাটিতে পুঁতছে।

আজ সকালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু শিক্ষার্থীরা খালি পায়ে জবা, গাঁদা ও ঘাস ফুল নিয়ে এসেছে ভাষা শহীদের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। জাতীয় সংগীত ও পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে তাদের শহীদ দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। পতাকা উত্তোলন শেষে শিশুরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তাদের মধ্যে বাংলা ভাষায় সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, একুশের কবিতা আবৃত্তি ও শহীদ মিনারের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোকেয়া বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের বিদ্যালয়ে স্থায়ী কোনো শহীদ মিনার নেই। শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর নিজেদের বাড়ি থেকে কলা গাছ নিয়ে আসে, তারপর মাটি খুঁড়ে কলা গাছ বসিয়ে পোস্টার-কাগজ মুড়িয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে। আমরা তাদের এই কাজে সহযোগিতা করি। শিক্ষার্থীরা অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের কাজটি খুব আনন্দের সঙ্গেই করে।'

বিদ্যালয়ে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমাদের সেই পরিকল্পনা আছে। এখানে যেহেতু আর্থিক বিষয় জড়িত, আশা করছি আগামী বছর শিক্ষক, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করতে পারব।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh exports to EU

RMG exports to EU rise by 2.99% in Jan-Nov

In the 11 months, Bangladesh shipped garments worth $18.15 billion, second highest after China

1h ago