পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মসময় এখন সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সরাসরি পাঠ প্রদানে গড়ে ১৩ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ফ্যাকাল্টি সদস্যদের পাঠদানে কাজের চাপ নির্ধারণ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রণীত একটি নীতিমালার মাধ্যমে এই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষকদের দীর্ঘ সময় ক্যাম্পাসে রাখা এবং সঠিক শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কতজন শিক্ষক প্রয়োজন তা নির্ধারণে 'টিচিং লোড ক্যালকুলেশন পলিসি ফর পাবলিক ইউনিভার্সিটি টিচার্স' শীর্ষক নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।

ইউজিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নীতিমালা অনুযায়ী একজন অধ্যাপকের সরাসরি পাঠদানের সময় হবে ১০ ঘণ্টা, সহযোগী অধ্যাপকের ১২ ঘণ্টা, সহকারী অধ্যাপকের ১৪ ঘণ্টা এবং প্রভাষকের ১৬ ঘণ্টা।

ক্লাসে লেকচার দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেক শিক্ষককে প্রতি সপ্তাহে ১ ঘণ্টা করে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করতে হবে।

ইউজিসি কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী সপ্তাহে নীতিমালা কার্যকর হলে শিক্ষকদের ক্যাম্পাসে অবস্থান এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

আগামী সপ্তাহের মধ্যে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নীতিমালা পাঠানো হবে।

কর্মকর্তাদের মতে, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করেন না এবং এর পরিবর্তে তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে। অনেকে ৫-৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন। তাদের মধ্যে অনেকে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন।

ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, 'আমরা আশা করছি, নীতিমালা বাস্তবায়নের পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আরও বেশি সময় ক্যাম্পাসে থাকবেন।'

তিনি জানান, গত মঙ্গলবার ইউজিসির বৈঠকে এই নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে।

কমিশন কর্মকর্তারা আরও জানান, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক অপরিহার্য। এটি নিশ্চিত করতে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি কোনো নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষকের সংখ্যা নির্ধারণেও সহায়ক হবে।

ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, 'নীতিমালা বাস্তবায়নের পর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কতজন শিক্ষক লাগবে তা নির্ধারণ করা সহজ হবে। এ ছাড়া, এই নীতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অর্গানোগ্রাম তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। খ্যাতিমান শিক্ষাবিদদের সহযোগিতায় ইউজিসি এই নীতিমালা প্রণয়ন করছে।'

দেশের ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার ৫০০ শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।

নীতিমালায় একজন শিক্ষকের সাপ্তাহিক ৪০ কর্মঘণ্টাকে ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো— কন্ট্যাক্ট আওয়ারর্স ও নন- কন্ট্যাক্ট আওয়ারর্স। ৪০ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থনা ও মধ্যাহ্নভোজের বিরতির জন্য ৫ ঘণ্টা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

কন্ট্যাক্ট আওয়ারর্সে একজন শিক্ষককে ১৩ ঘণ্টা শ্রেণীকক্ষে লেকচার দিতে হবে, ব্যবহারিক ক্লাস নিতে হবে, টিউটোরিয়াল ক্লাস করতে হবে, শিক্ষার্থীদের প্রকল্প, ইন্টার্নশিপ বা থিসিস তত্ত্বাবধান করতে হবে।

নন- কন্ট্যাক্ট আওয়ারর্সে কোর্সের উপকরণ তৈরি, গবেষণা, প্রবন্ধ ও বই লেখা, প্রশ্ন তৈরি করা, পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক মিটিংয়ে যোগদান করবেন একজন শিক্ষক।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো বিভাগ বা ইনস্টিটিউট প্রধানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি সময় দেওয়ার সময়কাল হবে ৬ ঘণ্টা।

বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের অধ্যয়ন ছুটির কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নির্দিষ্ট বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের জন্য ২০ শতাংশ অতিরিক্ত শিক্ষক রাখার জন্য ইউজিসিতে আবেদন করতে পারবে বলেও নীতিমালায় বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নির্দিষ্ট বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের পাঠদানের সক্ষমতার উপর ভিত্তি করে এই আবেদন করবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, পাঠদানের সক্ষমতা হিসাব করে নির্দিষ্ট বিভাগে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেলে অবসরগ্রহণ পর্যন্ত অতিরিক্ত সংখ্যক শিক্ষক চাকরিতে বহাল থাকবেন।

ইউজিসি সচিব ফেরদৌস বলেন, নীতিমালা না থাকায় কতজন শিক্ষক প্রয়োজন তা নির্ধারণে গুরুতর সমস্যা রয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা দেখেছি যে ৫ জনের প্রয়োজনের বিপরীতে ১০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আবার কিছুক্ষেত্রে ১০ জনের বিপরীতে ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে।'

ইউজিসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাজের একটি নীতি চালু রয়েছে। একজন পূর্ণকালীন শিক্ষকের কর্মঘণ্টা একটি শিক্ষাবর্ষে ৩০ কর্ম সপ্তাহের জন্য সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার কম হওয়া উচিত নয় এবং শিক্ষককে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ ঘণ্টার জন্য থাকতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের প্রতি সপ্তাহে ১৪ ঘণ্টা সরাসরি পাঠদান করতে হবে। সহকারী অধ্যাপকদের জন্য এই সময় ১৬ ঘণ্টা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, নীতিমালাটি কার্যকর হলে তারপর বলা যাবে এটা ভালো না খারাপ।

তিনি বলেন, 'আমাদের শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্তর্জাতিক র‌্যাঙ্কিং উন্নত করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের উদ্ভাবনী গবেষণা পরিচালনা করতে হবে এবং গবেষণাভিত্তিক শিক্ষা চালু করতে হবে। আমরা যদি কাজের সময়কে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার করতে পারি, তাহলে এই নীতিমালা আমাদের জন্য ভালো হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Disrupting office work: Govt employees can be punished within 8 days

The interim government has moved to amend the Government Service Act-2018 to allow swift disciplinary action against its employees who will be found guilty of disrupting official activities.

8h ago