রহিমা বেগম জানালেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল

রহিমা বেগম
খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে মেয়েদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন রহিমা বেগম। ছবি: দীপংকর রায়/ স্টার

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে দেওয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুলনা থেকে নিখোঁজ রহিমা বেগম জানিয়েছেন তাকে অপহরণ করা হয়েছিল।

আজ রোববার খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে প্রায় এক ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে তিনি অপহরণের বর্ণনা দিয়েছেন। তবে তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটি তিনি বলতে পারেননি।

পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা জানান।

'ওই রাতে পানি আনতে গেলে তিন-চার জন তার মুখে কাপড় ধরে কিছু একটা দিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়' বলে পিবিআইকে জানিয়েছেন রহিমা বেগম।

পিবিআই পুলিশ সুপার জানান, রহিমা বেগম প্রথমে কথা বলেননি। যখন তার মেয়েরা তার সামনে আসেন এবং দেখা করেন তখন তিনি পিবিআই এর পুলিশ সুপারের রুমে বসে কথা বলেন।

রহিমা বেগম বলেন, 'অপহরণের পর কোথায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকে তিনি জানেন না। সেখানে গিয়ে সাদা স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নেওয়া হয়। সেখানে যাদের সাথে জমিজমা নিয়ে গণ্ডগোল তাদের মধ্যে কিবরিয়া, মহিউদ্দিন নামে কেউ ছিলেন।'

'তোকে ছেড়ে দিলাম প্রাণে মারিনি', বলে তারা আমাকে ছেড়ে দেয় বলেন রহিমা বেগম।

এরপর তিনি জানান, 'তিনি ঘুরতে ঘুরতে মনি নামে এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তার সাথে তাদের বাড়িতে থাকেন।'

পরে মনি তাকে এক হাজার টাকা দেন। সেই টাকা নিয়ে তিনি একরাত একদিন বাসে উঠে মোকসেদপুর এসে নামেন।

এতদিন কেন ছেলে মেয়েদের সাথে যোগাযোগ করেননি এর উত্তরে তিনি বলেন, 'আমার কাছে কোনো মোবাইল ফোন ছিল না'।

আপনি খুলনায় আসেননি কেন এর উত্তরে তিনি বলেন, 'যারা আমাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা আমাকে ভয় দেখিয়েছিলেন। আমি ভয়ে খুলনায় আসিনি।'

রহিমা বেগম আরও বলেন, যখন তাকে অপহরণ করা হয় তার স্বামী বেল্লাল ঘটক দোতলায় দাঁড়িয়ে দেখছিলেন। রহিমা বেগম তাকে নামতে নিষেধ করেন এবং নিরাপদে দরজা আটকে দিতে বলেন।

পিবিআই এর পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা রহিমা বেগমের কাছ থেকে এটুকু জানতে পেরেছি। যেহেতু তিনি বলেছেন তার স্বামী তাকে দেখেছিলেন অপহরণের সময়। তাই তার সঙ্গে আমরা কথা বলব। ঘটনা নিয়ে ক্রসচেক করব। যেহেতু তিনি জেলাতে আছেন তাই তাকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'

'তাছাড়া রহিমা বেগম দুই তিন জন অপহরণকারীর নাম বলেছেন, কিবরিয়া, মহিউদ্দিন। আমরা তাদের মোবাইলের কললিস্ট দেখব তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করব সেই সময় তারা কোথায় ছিলেন', বলে জানান পিবিআই এর পুলিশ সুপার।

'রহিমা বেগমকে আদালতে তোলা হচ্ছে আজ। আদালত যেভাবে আমাদেরকে নির্দেশ দেবেন আমরা সেটি ফলো করব। আদালত যদি রহিমা বেগমকে তার সন্তানদের জিম্মায় দেয় তাহলে তিনি সেখানে যাবে। আর যদি অন্য কোনো নির্দেশনা দেয় আমরা সেটি পালন করব' বলে জানান, পুলিশ সুপার।

মরিয়ম বেগমকে আজ ভোর ৫টার দিকে দৌলতপুর থানা থেকে নগরীর সোনাডাঙ্গা ভিকটিম সেন্টারে আনা হয়। সকাল ৮টার দিকে তার সন্তানরা তার সাথে দেখা করতে আসেন কিন্তু তারা কথা বলতে পারেননি। বেলা ১১ টার দিকে রহিমা বেগমকে পিবিআই খুলনার অফিসে আনা হয়। 

পিবিআই পুলিশ সুপার বলেছেন, রহিমা বেগম কিছুটা শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

বেলা ১টার দিকে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ চার মেয়ে পিবিআই অফিসে আসেন।

মরিয়ম মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার মাকে জীবিত উদ্ধার করায় আমরা খুশি। মায়ের সাথে আমরা দেখা করতে চাই এবং কথা বলতে চাই। তিনি কোথায় ছিলেন কিভাবে ছিলেন এসব বিষয়ে আমরা জানতে চাই।'

'মায়ের আত্মগোপনে আমরা ভাইবোন জড়িত কিনা এ নিয়ে অনেকে সন্দেহ করছেন। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমরা যদি কোনোভাবেই এই ঘটনার সাথে জড়িত হই বা থাকি তাহলে তদন্ত করে আমাদের বিরুদ্ধে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু আমরা কোনভাবেই জানতাম না আমার মা কোথায় গিয়েছেন।'

'তাছাড়া আমি আগেও বলেছি আমার মা যদি নিজে আত্মগোপন করে থাকেন তাহলে প্রচলিত আইনে তার শাস্তি হোক। আমরা চাই এই ঘটনায় যথাযথ তদন্ত হোক।'

'জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আমাদেরকেও জড়ানো হচ্ছে। আমরা সন্তানরা নাকি তার কাছে টাকা চেয়েছি এসব বিষয় একেবারেই ভিত্তিহীন, মিথ্যা বলে দাবি করেন মরিয়ম মান্নান।

পিবিআই পরিদর্শক এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ডেইলি স্টারকে বলেন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল আমিনের আদালতে রহিমা বেগমকে তোলা হয়েছে সেখানে তিনি জবানবন্দি দিচ্ছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

S Alam threatens int'l legal action against govt over asset freezing: FT

Alam says his family's bank accounts were frozen, they were subjected to travel bans, and they lost control of their companies, all while facing investigations for alleged money laundering without formal notification.

1h ago