ইভ্যালির বকেয়া নির্ধারণ করতে পারেনি অডিট দল

লেনদেনের কোনো রেকর্ড সংরক্ষণ করেনি এ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি
ইভ্যালির লোগো। ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইভ্যালি তাদের লেনদেনের কোনো ধরনের রেকর্ড সংরক্ষণ করেনি। সেই কারণে কে তাদের কাছ থেকে কত টাকা পাবে, সেটা যাচাই করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আদালত নিযুক্ত পরিচালনা বোর্ডের অডিট দল। ফলে ইভ্যালির পাওনাদারদের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই কম।

গ্রাহক ও বিক্রেতা বেশ কিছুদিন ধরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে ইভ্যালির অফিসের বাইরে নিয়মিত অবস্থান করে নিজেদের টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে আসছে।

আদালত নিযুক্ত ইভ্যালির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, 'কোম্পানির কোনো রেকর্ড ছিল না, যার ওপর ভিত্তি করে আমরা কাজ করব।'

শীর্ষস্থানীয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি ফার্ম হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংকে ইভ্যালির বিস্তারিত নিরীক্ষার জন্য নিযুক্ত করেছিল পরিচালনা বোর্ড।

হাইকোর্ট নিযুক্ত ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব কবির মিলন জানান, গত ২১ সেপ্টেম্বর ৫ সদস্যের ওই বোর্ড তাদের পদত্যাগপত্রের পাশাপাশি ৪ হাজার পৃষ্ঠার একটি অডিট রিপোর্টও আদালতে পাঠিয়েছেন।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিরীক্ষকরা ইভ্যালির ৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকার লেনদেনের সন্ধান পেয়েছেন। তবে, কোম্পানির এ লেনদেনের কোনো ধরনের কাগজপত্র নেই।'

'মানুষ কেন ওই টাকা জমা দিয়েছে, কারা জমা দিয়েছে, কারা টাকা তুলেছে এবং কেন তুলেছে, এ ধরনের কোনো তথ্য ইভ্যালি সংরক্ষণ করেনি', বলেন তিনি।

২০১৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন কৌশল ও অবিশ্বাস্য ছাড়ের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে ইভ্যালি। কিন্তু, বকেয়া কিংবা পরিশোধ সংক্রান্ত কোনো ধরনের তথ্য প্রতিষ্ঠানটি সংরক্ষণ করেনি।

'সুতরাং, এখানে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা সন্দেহ করছি', যোগ করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

উদাহরণস্বরূপ, বোর্ড নগদ চেকের কিছু কপি খুঁজে পেয়েছে। তবে, কী উদ্দেশ্যে, কাকে সেগুলো ইস্যু করা হয়েছিল, সেই সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য কোথাও উল্লেখ নেই।

একইভাবে, অডিটে দেখা গেছে, অনেকগুলো ভাউচার বিতরণ করা হয়েছিল। তবে, কেন সেগুলো তৈরি করা হয়েছিল এবং কার জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেই সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

ইভ্যালির মোট ঋণ কত, তা বের করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, 'এটিই ছিল ইভ্যালির জালিয়াতির কৌশল। জালিয়াতির উদ্দেশ্যেই তারা যাত্রা শুরু করেছিল। তাদের উদ্দেশ্যই ছিল বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের পর কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া।'

ছলচাতুরির মাধ্যমে তারা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি ফার্ম এসআর ইসলাম অ্যান্ড কোংয়ের লেটারহেড ব্যবহার করে জাল অডিট রিপোর্ট তৈরি করেছিল।

'আমরা ওই ফার্মের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি যে, তারা ইভ্যালির কোনো ধরনের অডিট করেনি', বলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

ওই ৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বাইরে আরও লেনদেন হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করতে পারেনি অডিট দল।

উদাহরণস্বরূপ, ইভ্যালি কর্মকর্তাদের বেতন দিয়েছিল নগদে।

'অনেকের বেতন ১ লাখ টাকা দেখানো হলেও নগদে তাদের ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে কোনো ধরনের কর ছাড় দেওয়া হয়নি', বলেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

বর্তমানে বিভিন্ন এসক্রো অ্যাকাউন্টে ইভ্যালির ২৫ কোটি টাকা রয়েছে। এ ছাড়া, ২টি গুদামে তাদের ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, 'ঋণদাতারা যে পরিমাণ অর্থ পাবেন বলে দাবি করছেন, সেই তুলনায় ইভ্যালির বর্তমান সম্পদ একেবারেই নগণ্য।'

গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সেসব অর্থ ফেরত দেওয়ার কোনো উপায়ই ইভ্যালির নেই। তবে, যদি কোনো বিনিয়োগকারী বোর্ডে আসে, তবে, কিছু সম্ভাবনা রয়েছে।'

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়ে নিজেদের জায়গা থেকে সমস্যা সমাধানের যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের নেতৃত্বাধীন বোর্ড।

মাহবুব কবির মিলন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বুধবার আমরা নতুন বোর্ডের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেছি। এখন আর আমরা ইভ্যালির সঙ্গে জড়িত নই।'

নতুন বোর্ডে রয়েছেন ইভ্যালির মূল চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী শামীমা নাসরিন, শামীমার মা ফরিদা তালুকদার ও তার বোনজামাই মো. মামুনুর রশীদ।

এ ৩ জনের দায়ের করা পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বোর্ডটি গঠনে গত ২৪ আগস্ট নির্দেশ দেন আদালত।

গ্রাহকের দায়ের করা মামলায় গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত এপ্রিলে জামিনে মুক্তি পান শামীমা। এরপরও গ্রাহকরা আরও বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করেন।

যদিও অর্থ আত্মসাতের ৯টি মামলায় রাসেল জামিন পেয়েছেন, তবে, অন্যান্য মামলা বিচারাধীন থাকায় তাকে এখনো কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Drug sales growth slows amid high inflation

Sales growth of drugs slowed down in fiscal year 2023-24 ending last June, which could be an effect of high inflationary pressure prevailing in the country over the last two years.

16h ago