মৃত্যুর ২ বছর পর মুর্তজা বশীরকে ঢাবির চিঠি, পরিবারের ক্ষোভ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন। ছবি: সংগৃহীত

মৃত্যুর ২ বছর পর শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীরকে চিঠি পাঠিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ।

এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিল্পকলার অন্যতম এই দিকপালের বড় মেয়ে মুনীরা বশীর। বিষয়টিকে তিনি অভিহিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের 'অজ্ঞতা' হিসেবে।

২০২০ সালের ১৫ আগস্ট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মুর্তজা বশীর। গত মঙ্গলবার ঢাবির রেজিস্ট্রার অফিস থেকে চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের সিলেকশন বোর্ডে থাকার জন্য মুর্তজা বশীরের ঠিকানায় চিঠি যায়।

মুর্তজা বশীর। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্য

চিঠিতে বলা হয়, 'ভাস্কর্য বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক নিয়োগের জন্য সিলেকশন বোর্ডের একটি সভা আগামী ০৩.১০.২০২২ তারিখ সোমবার বিকেল ৪টায় উপাচার্য মহোদয়ের অফিস কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নীতিমালা অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হবে। সিলেকশন বোর্ডের সম্মানিত সদস্য হিসেবে অনুগ্রহপূর্বক এ সভায় উপস্থিত থাকার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।'

চিঠিতে আরও বলা হয়, 'যদি অনিবার্য কারণবশতঃ আপনি সভায় উপস্থিত হতে অপারগ হন, তাহলে প্রার্থীর পদোন্নতি সম্পর্কে আপনার লিখিত মতামত সরাসরি অথবা গোপন খামে উপাচার্য মহোদয়ের নিকট পাঠানোর জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।'

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মুর্তজা বশীরের মেয়ে মুনীরা বশীর দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, 'মুর্তজা বশীর শিল্প- সাহিত্যের জন্য আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। সে মানুষটি মারা গেছেন ২ বছর হয়েছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তার নামে চিঠি পাঠিয়ে যাচ্ছে। এটা তো অপমান; একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজ্ঞতা ও মূর্খতার শামিল।'

মুনীরা বশীর আরও বলেন, 'জীবিত থাকতে তার (মুর্তজা বশীরের) খোঁজ তারা (ঢাবি কর্তৃপক্ষ) রাখেনি। মারা যাবার পরে এমন আরও কিছু চিঠি এসেছে। সেগুলো আমরা খুলে দেখিনি। কিন্তু এবার আর বিষয়টি সহ্য করতে পারিনি। তাই ফেসবুকে পোস্ট করেছি।'

ওই ফেসবুক পোস্টে মুনীরা বশীর লেখেন, 'কি করা উচিত? বাবা কি কবর থেকে সভায় উপস্থিত হয়ে লিখিত মতামত দিবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অব্যবস্থাপনায় কি করণীয়? কি গালি দেয়া উচিত?

'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) হয়েছেন প্রবীর কুমার সরকার, তিনি কি জবাবদিহিতা করবেন?'

মুর্তজা বশীরকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা নিয়ে এতো বিব্রত হওয়ার কিছু নেই। এখনো বোর্ড বসেনি, সংশোধনের সুযোগ আছে। তাছাড়া রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে সব দেখে আমাকে দেয়, আমি কেবল স্বাক্ষর করি।'

তিনি আরও বলেন, 'ওনার (মুর্তজা বশীর) মৃত্যুর বিষয়টি পরিবার থেকে জানালেও পারত। তাহলে এমন ভুল হতো না।'

মুর্তজা বশীরকে পাঠানো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চিঠি।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে রেজিস্ট্রার অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন প্রবীর কুমার সরকার।

বাংলার জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কনিষ্ঠ সন্তান মুর্তজা বশীর ছিলেন একাধারে চিত্রশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক ও সংগঠক। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন মুর্তজা বশীর ছিলেন অগ্রভাগে।

চিত্রকলায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পদক, ১৯৮০ সালে একুশে পদক এবং ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমি পদক পান মুর্তজা বশীর।

Comments

The Daily Star  | English

‘No room for politics under AL name, ideology’

Nahid Islam, adviser to the interim government, spoke with The Daily Star on the nation's key challenges and the way forward.

13h ago