নোয়াখালী

৪৫ দিনে নিউমোনিয়ায় ৩৫ শিশুর মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৫০০

নোয়াখালীতে ৪৫ দিনে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৭১টি শিশু। ছবি: স্টার

নোয়াখালীতে নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। গত ৪৫ দিনে নোয়াখালীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৭১টি শিশু। তাদের মধ্যে চিকিৎসারত অবস্থায় ৩৫টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া শিশুদের অধিকাংশের বয়স ১-৩ দিন।

রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ, সরকারিভাবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ সরবরাহ থাকলেও তারা সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন না। ওয়ার্ডে কর্তব্যরত নার্সরা ওষুধের নাম লিখে হাতে স্লিপ ধরিয়ে দেন। বাইর থেকে সব ওষুধ কিনতে হয়। এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ওয়ার্ডে আসেন না। রোগী দেখেন মেডিকেল অফিসার ও আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের এবং নোয়াখালী ম্যাটসের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

ছবি: স্টার

গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার থেকে ১টা পর্যন্ত নোয়াখালী জেলারেল হাসপাতালের ৪ ও ১৩ নং শিশু ওয়ার্ড ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, অসহনীয় তাপদাহে গত আগস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ৪৫ দিনে জেলার চাটখিল, সোনাইমুড়ী, বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সদর, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার ৯০টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার শিশু নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের ৪ নম্বর শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আকলিমা আক্তার বলেন, 'গত ৪৫ দিনে তার ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৭০টি শিশু ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে আগস্ট মাসে ৮টি এবং সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ দিনে ৪টি শিশুর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া শিশুদের অধিকাংশের বয়স ১-৩ দিন।'

১৩ নং শিশু ওয়ার্ডে ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স মাহমুদা চাঁদ সুলতানা জানান, তার ওয়ার্ডে গত ৪৫ দিনে ৮ শতাধিক শিশু নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩টি শিশুর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে আগস্ট মাসে ১৩টি এবং সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ দিনে ১০টি শিশু মারা যায়। যাদের অধিকাংশের বয়স ১-৩ দিন।

হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের অভিভাবকরা অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তাররা নিয়মিত ওয়ার্ড পরিদর্শনে আসেন না এবং ব্যবস্থাপত্রের সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।

১৩ নং শিশু ওয়ার্ড ইনচার্জ মাহমুদা চাঁদ সুলতানা জানান, হাসপাতালের ২টি শিশু ওয়ার্ডে ২৮টি শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে প্রায় দেড়শ শিশু। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৪৫ থেকে ৫০টি শিশু ও নবজাতক নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

তিনি জানান, ২টি ওয়ার্ডে ১টি করে মোট ২টি নেবুলাইজার মেশিন আছে। যার মধ্যে ১টি প্রায় সময়ই অচল থাকে। এতে করে রোগীদের নেবুলাইজার ও অক্সিজেন দিতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা সেবায় মেট্রোনিডাজল, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও খাবার স্যালাইন, সেফটাজিাডাম, সেফট্রিএক্সন ও এমপিসিলিন ইনজেকশন ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু রোগীর চাপ অস্বাভাবিক থাকায় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণেই রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ ক্রয় করতে হচ্ছে।

আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ইয়াকুব আলী মুন্সি বলেন, 'বৈরী আবহাওয়া, অতিরিক্ত গরম ও ঘামে শিশুরা নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশু জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ালে শিশুদের ৮০ শতাংশ রোগ সেরে যায়। জন্মের পর নবজাতক শিশুর যাতে ঠাণ্ডা না লাগে সে বিষয়ের মায়েদের সতর্ক থাকতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধাত্রীরা গ্রামে ডেলিভারি করাতে গিয়ে বল প্রয়োগের কারণে অনেক শিশু অসুস্থ হয়ে জন্ম গ্রহণ করে। ওইসব শিশুরা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. হাসিনা জাহান চিকিৎসকদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তিনি নিয়মিত কার্যালয়ে অবস্থান করেন। তার হাসপাতালের শিশু চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগী দেখেন।

তবে, গত ৪৫ দিনে হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে কতজন শিশু ভর্তি হয়েছে ও কতজন মারা গেছে তার তথ্য তিনি জানেন না।

তিনি জানান, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ৯০ জন রোগী ভর্তি হয়ে থাকে। তাই ওষুধ সংকট থাকাটাই স্বাভাবিক। মারা যাওয়া অধিকাংশ শিশুর বয়স ১-৫ দিন। ১০০ শয্যার হাসপাতালের জনবল দিয়ে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল পরিচালনা করতে গিয়ে চিকিৎসক নার্স ও কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতাল ২৫০ শয্যার হলেও রোগী ভর্তি থাকে ৮০০ থেকে ৯০০।

Comments

The Daily Star  | English

Nowfel gained from illegal tobacco trade

Former education minister Mohibul Hassan Chowdhoury Nowfel received at least Tk 3 crore from a tobacco company, known for years for illegal cigarette production and marketing including some counterfeit foreign brands.

9h ago