রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ২ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা জমা দেয়নি বিটিসিএল

বিটিসিএল ৫জি প্রকল্পের কাজ পেল হুয়াওয়ে

অব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অন্তত ২ হাজার ২৫৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা জমা দিতে পারেনি।

এমনই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের অডিট রিপোর্টে।

মোবাইল ফোনের এই যুগে এসে মূলত ল্যান্ডলাইন টেলিফোন সেবা প্রদানকারী বিটিসিএল নিয়মিতভাবেই গ্রাহক হারাচ্ছে। টিকে থাকতে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে বেশকিছু টেলিকম সেবা দিচ্ছে।

লাইসেন্সের শর্ত অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি সেবাগুলো থেকে অর্জিত রাজস্বের একটি অংশ বিটিআরসিকে দেবে এবং এই অংশ পরবর্তীতে জমা হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে।

২০০৮ সালের জুলাইয়ে বিটিসিএলকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করা হয়। এর ৩ মাস পর থেকেই অর্জিত রাজস্বের অংশ না দেওয়ার প্রবণতা শুরু হয়।

২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে বিটিসিএল বিটিআরসিকে শর্তের অর্থ দিচ্ছে না বলে জানতে পেরেছে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল। গত জুনে জাতীয় সংসদে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়।

বিটিসিএলের কাছে ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) সেবা থেকে আয়ের অংশ হিসেবে ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে বিটিআরসির।

এ ছাড়া, ২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত ইনকামিং ও আউটগোয়িং আন্তর্জাতিক ফোন কল থেকে অর্জিত রাজস্ব থেকে বিটিসিএলে কাছে বিটিআরসির পাওনা ৯৪৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত অর্থ প্রদান নিয়মিত থাকলেও এরপর আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৬ সালের মে থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিটিসিএলের আইজিডব্লিউ পরিষেবা রাজস্ব থেকে ৩৮৯ কোটি ৩ লাখ টাকা পাবে বিটিআরসি।

২০০৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ল্যান্ডলাইন সেবা থেকে অর্জিত রাজস্ব থেকে বিটিআরসিকে ২৯৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তা পরিশোধ করেনি বিটিসিএল।

একইভাবে, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সেবা থেকে অর্জিত রাজস্ব থেকে বিটিআরসির পাওনা ২ কোটি ৯ লাখ টাকা।

অডিট রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিটিআরসি বিটিসিএলকে পাওনা পরিশোধে বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছে।

কিন্তু কোনো চিঠিরই সাড়া পায়নি তারা।

রিপোর্ট অনুযায়ী, বিটিআরসির চেয়ারম্যান বিটিসিএলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকে বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য চিঠি দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

এতে বলা হয়, বিটিসিএল যদি সময়মতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এই অর্থ সরবরাহ করত, তাহলে সংস্থাটির ঘাটতি মেটাতে সরকারকে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হতো না।

অডিটে আরও বলা হয়েছে, বিটিসিএলের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল এবং এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা সেল নেই।

এর ফলে বকেয়া পরিশোধ করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।

টেলিকম নিয়ন্ত্রকের কাছে বিপুল পরিমাণ বকেয়ার বিষয়ে বিটিসিএল কীভাবে নজর রাখছে, সে বিষয়ে জানতে অডিট টিমের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও বিটিসিএল এর কোনো জবাব দেয়নি।

বিটিসিএলের একটি ক্রয় কমিটি থাকলেও তাদের কোনো ক্রয় পরিকল্পনা নেই।

মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর আদায়ের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দেশিকা বিটিসিএলের বিভিন্ন দপ্তর মানছে না বলেও জানতে পেরেছে অডিট প্রতিষ্ঠানটি।

এমনকি প্রতিষ্ঠানটির কোনো অভ্যন্তরীণ অডিটও হয়নি বলে জানতে পেরেছে বাংলাদেশের কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল।

অডিটে উঠে আসা বকেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল মতিন জানান, ইতোমধ্যে ৯টি কিস্তিতে বকেয়ার একটি অংশ পরিশোধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমরা এখন নিয়মিত টাকা পরিশোধ করছি।'

তবে, বিটিআরসির সাম্প্রতিক একটি নথিতে দেখা গেছে, বিটিসিএলের আইজিডব্লিউ সেবা থেকে তাদের বকেয়ার পরিমাণ ১ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। অডিট প্রতিবেদনে যে বকেয়া উঠে এসেছে তারচেয়ে ১৯২ কোটি টাকা বেশি।

বিটিআরসি তাদের রাজস্বের অংশ বিটিসিএলের কাছ থেকে আদায়ের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র।

তিনি বলেন, 'অনেক ক্ষেত্রে অপারেটররা আদালতে যায়, যার ফলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।'

একসময় অত্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল বিটিসিএল। একে পুনরায় লাভজনক করতে একের পর এক প্রকল্প অনুমোদন করছে সরকার, যার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে হাজারো কোটি টাকা।

২০০৯ সাল থেকে বিটিসিএল প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

এর চলমান প্রকল্পগুলোর জন্য বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩ হাজার ৩১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে 'ডিজিটাল সংযোগের জন্য টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণ প্রকল্পে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, উচ্চগতির ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা চালু করা হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিটিসিএল ম্যানেজমেন্ট থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, তারা এ বছর খুবই ভালো করছে। আমি মনে করি, তারা লাভ করবে।'

বিটিআরসির পাওনা বিটিসিএল পরিশোধ করবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বছর থেকে সবকিছুই ঠিক হয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Domestic tourism heats up this winter

The local tourism industry was suffering from apprehension over the loss of business amid a long recession stemming from mass unrest, which began in July

2h ago