প্রীতম দাশের মুক্তি ও ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার চায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

প্রীতম দাশ। ছবি: সংগৃহীত

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয়ক কমিটির অন্যতম সদস্য প্রীতম দাশের দ্রুত মুক্তি দাবি করেছে সংগঠনটি।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।

এতে বলা হয়, চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে সংহতি সমাবেশ করায় প্রীতম দাশকে শায়েস্তা করতে রাস্তা খুঁজছিল সরকার। অন্য আর কোনো কিছু না পেয়ে প্রীতম দাশের হিন্দু পরিচয়কে পুঁজি করে তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক বক্তব্যের সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ দাঁড় করায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও প্রশাসন। তারই জের হিসেবে গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই আজ সন্ধ্যায় তাকে তার বন্ধুর বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেছে শ্রীমঙ্গল পুলিশ। প্রীতমের ওপর হওয়া এই জুলুম ন্যায়ের পক্ষে কাজ করা সব মানুষের ওপর জুলুম। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন অবিলম্বে প্রীতম দাশকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।

গত ২৭ আগস্ট চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন শ্রীমঙ্গলে একটি 'সংহতি সমাবেশ' আয়োজন করেছিল। সেই সমাবেশে শ্রীমঙ্গল পুলিশের একাংশের মদদে স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি অংশ হামলা চালায়। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির ২ সদস্য প্রীতম দাশ ও রিয়াজ খানসহ অন্তত ১০ জন সেই হামলায় গুরুতর আহত হন। হামলার একদিন পর গুরুতর আহত অবস্থাতেই হামলাকারীদের নাম প্রকাশপূর্বক তাদের শাস্তির দাবিতে শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে পরপর দুটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়। সেখানে প্রীতম হামলাকারীদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে আহ্বান জানান।

এই সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে শ্রীমঙ্গলে ব্যাপক জনমত ও সামাজিক ঐক্য তৈরি হয়। ফলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশের প্রত্যক্ষ মদদে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা আবেদ হোসেন প্রীতম দাশের ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে শ্রীমঙ্গলে আগে থেকেই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করতে সক্রিয় একটি চক্র এই সাম্প্রদায়িক প্রচারণায় অংশ নেয় এবং শ্রীমঙ্গল শহরে একটি মিছিল বের করে। সেই মিছিলে প্রীতম দাশের ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হয়েছিল যে, প্রীতম ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন এবং তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী, তাকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়।

সেখান থেকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল- তাকে গ্রেপ্তার করা না হলে তার পরের শুক্রবার বাদ জুমা আরও বড় পরিসরে তারা মিছিল করবে। তাদের এই ঘোষণা ও কৃত্রিম সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির অপচেষ্টা বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সহায়তায় ভেস্তে যায়। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনকে উদ্যোগী হয়ে ভূমিকা নিতে চাপ প্রয়োগ করে। সারাদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করা হয় এবং সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেয় শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় সামাজিক নেতৃত্ব। সেখানকার মুসলমান, হিন্দু, রাজনৈতিক, সামাজিক বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্ব এগিয়ে এসে সেই জুমার পরে ঘটতে যাওয়া সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ঠেকিয়ে দেয়। দেশের সাম্প্রতিক সময়কালে প্রথমবারের মতো গণবিরোধী সাম্প্রদায়িক ফাঁদ কীভাবে ভেস্তে দিতে হয় তার একটা নজির তৈরি করে শ্রীমঙ্গল।

সাম্প্রদায়িক হামলার ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার পরও থেমে থাকেনি সরকারের ওই মহল। শ্রীমঙ্গলের পরিস্থিতি যখন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেছে এবং কোনো সাম্প্রদায়িক হামলাও করা যায়নি, তখন আবারও সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার শুরু করেছে সরকার। আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে দেশকে আবারও সংঘাতের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে এই ভোটারবিহীন মাফিয়া সরকার। সরকারের দুঃশাসন, ন্যায্য আন্দোলনে গুলি চালিয়ে মানুষ খুন, ভোটারবিহীনভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, আসন্ন নির্বাচনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দাবিতে দেশের মানুষের মধ্যে যেরকম গণ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, সেগুলো থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে দিতে এই অপতৎপরতা শুরু করেছে সরকার।

আমরা অবিলম্বে প্রীতম দাশের বিরুদ্ধে হওয়া এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তাকে সুস্থভাবে মুক্তি দেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি। আর বাংলাদেশের সব মানুষকে এই জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh alleges border abuse by BSF

Those pushed-in allege torture, abuses in India

A Bangladeshi woman has alleged that India’s Border Security Force (BSF) tied empty plastic bottles to her and her three daughters to keep them afloat, then pushed them into the Feni river along the Tripura border in the dark of night, in a chilling account of abuse at the border.

5h ago