৩ ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ সিলেট নগরী
সিলেট নগরীতে আজ সোমবার সকালে বৃষ্টির পর জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধ নগরীতে কর্মক্ষেত্রে ও বিভিন্ন কাজে বাইরে বের হওয়া নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
বৃষ্টিতে নগরীর শাহজালাল উপশহর, চৌহাট্টা, পাঠানটুলা, বাগবাড়ি, আম্বরখানা, খাসদবির, মীরের ময়দান, শিবগঞ্জ, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, নাইওরপুল, মির্জাজাঙ্গাল, লালাদিঘীর পাড়, মাছিমপুর, রায়নগর, লাউয়াইসহ বিভিন্ন এলাকায় ১-৩ ফুট পর্যন্ত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
বিকেল পর্যন্ত এগুলোর মধ্যে অনেক এলাকার পানি নামেনি এবং জলাবদ্ধ রাস্তায় চলাচল করতে হয় নগরবাসীকে।
নগরীর বাগবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মাসুম তালুকদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোর থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে এলাকার ছড়া (প্রাকৃতিক খাল) উপচে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামার পর পানি ধীরে ধীরে নামছে।'
সিলেটের আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সকাল ৬টা-৯টা পর্যন্ত ১০৮ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল রোববার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৩ দশমিক ৫ মিলিমিটার। গত শনিবার মোট ১১৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।'
তিনি জানান, 'পুরো সেপ্টেম্বর মাসে যে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, মাসের প্রথম কয়েকদিনেই তার অর্ধেক বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।'
এদিকে বৃষ্টি হলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিলেট সিটি করপোরেশনে শত শত কোটি টাকার প্রকল্পের বাস্তব সুফল সম্পর্কে।
রুহুল কুদ্দুস বাবুল নামে একজন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, 'আধুনিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে একটা সায়েন্টিফিক মহাপরিকল্পনার দরকার ছিল, কিন্তু সিলেট মহানগরে সেটা হয়নি। হাজার কোটিরও অধিক টাকা সরকার বরাদ্দ দিয়েছেন নাগরিক দুর্ভোগ দূর করতে। সমস্যা সমাধান তো দূরে থাক সমস্যা দিন দিন জটিল হচ্ছে।'
তিনি লিখেন, 'এত উন্নয়নের (?) পরও সাধারণ ভারি বর্ষণে শহর পানিতে তলিয়ে যায়। হাজার কোটি টাকার শ্রাদ্ধ। ... মনে হচ্ছে ষোল আনাই মিছে! পরিবেশবান্ধব ও পরিকল্পিত নগরায়ন করা না হলে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি নেই।'
পাহাড় ঘেঁষা নগর সিলেটের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১১টি প্রাকৃতিক খাল যেগুলো স্থানীয়ভাবে ছড়া হিসেবে পরিচিত। এগুলোর ১৬টি শাখা আছে এবং সব খালের পানি নগরীর মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা নদীতে মিশেছে।
২৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার মূল নগর এলাকায় ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রাকৃতিক খাল ছাড়াও নগরীতে নালা-নর্দমা আছে ৯৭০ কিলোমিটার এবং পাকা ড্রেন আছে ৬৫০ কিলোমিটার।
নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত অর্থবছরে সিলেট সিটি করপোরেশন ২০৯ কোটি টাকার কাজ করেছে। এ খরচসহ গত এক যুগে জলাবদ্ধতা নিরসন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে মোট ব্যয় হয়েছে ৮৬৯ কোটি টাকা।
তবে সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা আগের চেয়ে কমেছে দাবি করে সিলেট সিটি করপোরশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুষলধারে বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতা হবেই, পানি নেমে যাওয়ার জন্য তো কিছুটা সময় প্রয়োজন হয়।'
তিনি বলেন, 'নগরীর ছড়া, খাল, নর্দমা ও ড্রেন বারবার পরিষ্কার করা হলেও নগরবাসীর অসচেতনতায় তা ভরাট হয়ে যায় দ্রুত। তাছাড়া পাহাড়ি ছড়া দিয়ে টিলার মাটি ধুয়ে এসেও ভরাট করে ফেলে প্রাকৃতিক এসব ছড়া ও খাল।'
সিলেট সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'নগরীর মধ্যবর্তী সুরমা নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর নাব্যতা কমে গেছে এবং নগরীর পানি খুব ধীরে নামে। এছাড়াও নগরীর পার্শ্ববর্তী হাওরাঞ্চলও ভরাট হয়ে যাওয়া জলাবদ্ধতার সমস্যা বাড়ছে।'
'সুরমা নদী খননের বিষয়ে আমরা বিভিন্ন ফোরামে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। তবে শিগগির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানতে পেরেছি,' যোগ করেন তিনি।
Comments