‘একজন বাংলাদেশি ফিল্মমেকার হিসেবে আমি অনুতপ্ত, ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত’

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে নির্মিত বলিউড সিনেমা ‘ফারাজ’র প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভালে। একই ঘটনা থেকে ‘অনুপ্রেরণা’ নিয়ে নির্মিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ‘শনিবার বিকেল’ আটকে রেখেছে সেন্সর বোর্ড।

গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে নির্মিত বলিউড সিনেমা 'ফারাজ'-এর প্রিমিয়ার হতে যাচ্ছে লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভালে। একই ঘটনা থেকে 'অনুপ্রেরণা' নিয়ে নির্মিত বাংলাদেশি চলচ্চিত্র 'শনিবার বিকেল' আটকে রেখেছে সেন্সর বোর্ড।

'ফারাজ' নির্মাণ করেছেন ভারতের হংসল মেহতা এবং 'শনিবার বিকেল' নির্মাণ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

প্রায় ৩ বছর আগে সেন্সর ছাড়পত্রের জন্য জমা দেওয়া হয় 'শনিবার বিকেল'। প্রথম প্রিভিউয়ের পর সেন্সর ছাড়পত্র পাওয়া কথা বলা হলেও দ্বিতীয় প্রিভিউ করে তা আটকে দেওয়া হয়। এরপর প্রায় সাড়ে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও 'শনিবার বিকেল' ছাড়পত্র পায়নি।

গত ২৯ আগস্ট প্রথমবারের মতো এই সিনেমার বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সিনেমায় কিছু বিষয় 'সংযোজন' করতে হবে। সংযোজন হলে সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে যে সমস্যা আছে, তা কেটে যাবে।

বিষয়টি পরিচালক ও প্রযোজককে 'জানানো হবে' বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কোনো সিনেমায় দৃশ্য সংযোজনের জন্য সেন্সর বোর্ডের নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি 'নতুন' কিছু বলে মনে হয় কি না জানতে চাইলে দ্য ডেইলি স্টারকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, 'সংযোজনের বিষয়টি তো কিছুটা নতুনই। এটা তো স্ক্রিপ্ট কীভাবে লিখতে হবে সেটা বলে দেওয়ার মতো ব্যাপার হয়ে যায়। "শনিবার বিকেল" এ দৃশ্য সংযোজনের কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এটি একটি "ওয়ান শট ফিল্ম"। যদিও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি। তবে, সংযোজনের বিষয়ে আমি এখনো বিশ্বাস করতে চাই যে তথ্যমন্ত্রী দৃশ্য সংযোজনের কথা বলেননি। তিনি হয়তো অন্য কিছু সংযোজনের কথা বলেছেন। সেটা কী, তা জানার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।'

'ফারাজ' সিনেমার বিষয়ে তিনি বলেন, 'ভারতের সিনেমাটি দর্শকের সামনে হয়তো অল্প সময়ের মধ্যেই আসবে। ছবিটা লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হচ্ছে আগামী অক্টোবরে। যতদূর অনুমান করতে পারি, ছবিটি মুক্তি পেতে খুব বেশিদিন সময় লাগবে না।'

'ফারাজ' প্রসঙ্গ টেনে ফারুকী আরও বলেন, '"ফারাজ" সিনেমাটি যে তৈরি হচ্ছে, সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম। ছবিটি দর্শকের সামনে আসছে সেটা এখন জানছি। আমার ভারতীয় ফেলো ফিল্মমেকার হানসাল মেহতার জন্য আমি আনন্দিত যে সে তার ছবিটা শেষ করে প্রিমিয়ার করতে পারছে। কিন্তু, একই সঙ্গে আমার মন খুবই খারাপ "শনিবার বিকেল" সেন্সর ছাড়পত্র না পাওয়ায়। একজন বাংলাদেশি ফিল্মমেকার হিসেবে আমি অনুতপ্ত, ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত।'

সিনেমার গল্পের বিষয়ে তিনি বলেন, 'বোম্বেতে যে ছবিটা বানানো হয়েছে, সেটাতে হোলি আর্টিজান উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেখানে হোলি আর্টিজানে যারা ছিলেন, সেই চরিত্ররা আছে। এমনকি ছবির নামও 'ফারাজ'। আর আমি যে ছবিটা বানিয়েছি, সেই ছবিতে হোলি আর্টিজান বলে কোনো কিছুর উল্লেখ নেই এবং হোলি আর্টিজানে যারা ছিলেন, তাদের কোনো চরিত্র আমার ছবিতে নেই। আমার ছবির প্রতিটি চরিত্র কাল্পনিক। আমি একটা কাল্পনিক গল্প বানিয়েছি টেরর অ্যাটাকের ওপর। হোলি আর্টিজানের ঘটনা থেকে আমি ইন্সপিরেশন নিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'নির্মাতা যখন গল্প বানায়, ছবি বানায়, সেই ইন্সপিরেশন কোথা থেকে নেয়? বাস্তব জীবন থেকেই তো ইন্সপিরেশন নেবে। এই ইন্সপিরেশন নিয়ে বানানো ছবি কেন দেখাতে পারব না, সেটা আমি বুঝতে পারিনি। আমি নিশ্চিত, সরকারের দায়িত্বশীল মহলে যারা আছেন, তাদের অনেকেও এটা বুঝতে পারছেন না। সরকারের ভেতরে-বাইরে অনেকের সঙ্গে কথা আমার হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি, সরকারের ভেতরে ও বাইরে অনেকেই এই ছবিটি আটকে রাখার সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না।'

'আমি বিশ্বাস করতে চাই যে তথ্য মন্ত্রণালয় ও আপিল বোর্ড আমার ছবিটা ছেড়ে দেবে', যোগ করেন তিনি।

সেন্সর বোর্ডের এ ধরনের সিদ্ধান্ত কী বার্তা দেয় জানতে চাইলে ফারুকী বলেন, 'এখানে ২টি দিক আছে। এটা যেমন অর্থনৈতিকভাবে প্রযোজককে বিপন্ন করছে, একই সঙ্গে অন্য প্রযোজককে বার্তা দিচ্ছে যে তুমি ছবি বানানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকো। এ ধরনের বার্তা খুব বিপজ্জনক। গল্প লেখার আগেই যদি এভাবে চিন্তা করতে হয়, তবে সেটা তরুণ প্রজন্মের কাছে ভালো বার্তা দেয় না।'

তিনি আরও বলেন, 'আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে একটা ছবি আটকে আছে। কিন্তু এর মধ্য দিয়ে সব নির্মাতার কাছে একটা বার্তা যাচ্ছে, স্ক্রিপ্ট রাইটাররা একটা আতঙ্কের মধ্যে থাকছেন। তারা বুঝতে পারছেন না যে, কী লিখবেন আর কী লিখবেন না; কেন লিখবেন, কেন লিখবেন না। এই যে একটা পরিস্থিতি এটা ক্রিয়েটিভ এক্সপ্রেশনের জন্য খুবই বিপজ্জনক।'

'আমাদের হাত-পা বেঁধে বলা হচ্ছে, যাও, ওদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করো' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটা আরও বিপজ্জনক, কারণ আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি সেখানে আপনি ঘরে বসে ওয়েব প্লাটফর্মে সব দেখতে পাচ্ছেন। আমাদেরকে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে তাদের সঙ্গে, যারা অনেক বেশি স্বাধীনভাবে ছবি বানাতে পারছে।'

'আমার যদি ঢাল-তলোয়ার সব কেড়ে নেন, আমি তাহলে কী করে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করব। এই জন্যই বলছি, একটা ছবি আটকে আছে, শুধু এভাবে দেখলে হবে না। এটা আসলে পুরো ইন্ডাস্ট্রির ওপর একটা বড় ইমপ্যাক্ট ফেলবে। আমরা গল্প বলার স্বাধীনতা চাই। এটা শুধু একটা ছবির জন্য না। আমরা সব ছবির জন্য স্বাধীনতা চাই', যোগ করেন তিনি।
 

Comments

The Daily Star  | English
PM Sheikh Hasina

Govt to seek extradition of Hasina

Prosecutors of the International Crimes Tribunal have already been appointed and the authorities have made other visible progress for the trial of the ones accused of crimes against humanity during the July students protest

34m ago