‘তুমি তো বাবা হারানোর দুঃখ বোঝ, এটা কেন বোঝ না’
'তুমি তো বাবা হারানোর দুঃখ বোঝ, এটা কেন বোঝ না?'—কান্নাভেজা কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে এটুকু বাক্য বলেছিল শিশু আনিসা।
অষ্টম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী 'নিখোঁজ' ইসমাইল হোসেন বাতেনের মেয়ে আনিসা ইসলাম।
পরিবারের অভিযোগ—রাজধানীর মিরপুরের নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৯ সালের ১৯ জুন বাতেনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।
শুধু আনিসাই নয়, তার মতো বাবা 'হারানো' আরও অনেক শিশু আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে রাজধানীর শাহবাগে সমবেত হয়েছিল।
বিভিন্ন সময়ে 'গুম' হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ছবি নিয়ে স্বজনরা তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরেন। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া সমাবেশে আনুমানিক ৪০ ভুক্তভোগী পরিবারের শ খানেক সদস্য সমবেত হয়েছিলেন।
'মায়ের ডাক' আয়োজিত সমাবেশে মা-সন্তানরা তাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দেওয়ার আকুতি জানান।
রামপুরা থানার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ মো. মোয়াজ্জেম হোসেন তপু 'গুম' হন ২০১৬ সালে। ছেলের সন্ধান চেয়ে শাহবাগে কাঠ ফাটা রোদে দাঁড়িয়েছিলেন মা সালেহা বেগম।
তিনি বলেন, 'ছেলে অন্যায় করলে তো বিচার করতে পারতো। একটা অন্যায় আরেকটা অন্যায় দিয়ে ঢাকা যায় না।'
আবেগজড়িত কণ্ঠে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'তপুর বাবা ছেলেকে না দেখে মারা গেছেন। আমাকেও হয়তো ছেলেকে না দেখে মরতে হবে।'
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'যেখানে গুমের লোকদের নেওয়া হয় সেখানে আমি প্রায় ৪০ ঘণ্টা ছিলাম। আমি জানি সেগুলো কী রকম। সেসব কেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হবে।'
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, 'গুমের বিষয় তদন্তের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করতে হবে।'
'মায়ের ডাক'র আহ্বায়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, 'গুম হওয়ার প্রায় সাড়ে ৯ মাস পর মাছচাষ বিশেষজ্ঞ ইমাম মাহাদী হাসান ডলার যেমন পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন সবাই তেমন ফিরে আসুক, এই প্রত্যাশা করি।'
বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৫২২ জন 'গুম' হয়েছেন বলে জানিয়েছে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
Comments