সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র শততম জন্মবার্ষিকী আজ

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌। ছবি: সংগৃহীত

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র শততম জন্মবার্ষিকী আজ।

১৯২২ সালের ১৫ আগস্ট তিনি চট্টগ্রামের ষোলশহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর মাত্র ৪৯ বছর বয়সে প্যারিসে মারা যান। সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। 

পেশায় কূটনীতিক হলেও একাধারে তিনি ছিলেন সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী, ভাস্কর ও সাংবাদিক। 'চাঁদের অমাবস্যা', 'কাঁদো নদী কাঁদো' ও 'লালসালু' তার অমর সৃষ্টি। কল্লোল যুগের ধারাবাহিকতায় তার আবির্ভাব হলেও তিনি ইউরোপীয় আধুনিকতায় পরিশ্রুত নতুন সাহিত্য বলয়ের ভিত্তি তৈরি করেন।

৮ বছর বয়সে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌ তার মাকে হারান। এর ২ বছর পর তার বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন টাঙ্গাইলের করটিয়ায়। বিমাতা এবং বৈমাত্রেয় ২ ভাই ও ৩ বোনের সঙ্গে ওয়ালীউল্লাহর সম্পর্ক কখনোই অবনতি হয়নি। ওয়ালীউল্লাহ্‌র ২৩ বছর বয়সে তার বাবা কলকাতায় চিকিৎসা করতে গিয়ে মারা যান।

তার পিতৃ ও মাতৃ বংশ অনেক শিক্ষিত ছিল। জানা যায়, বাবা এমএ পাশ করে সরাসরি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরিতে ঢুকে যান; মাতামহ ছিলেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স থেকে পাশ করা আইনের স্নাতক; বড় মামা এমএবিএল পাশ করে কর্মজীবনে কৃতী হয়ে খানবাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন এবং তার স্ত্রী (ওয়ালীউল্লাহর বড়ো মামী) ছিলেন নওয়াব আবদুল লতিফ পরিবারের মেয়ে, উর্দু ভাষার লেখিকা ও রবীন্দ্রনাথের গল্প-নাটকের খ্যাতিমান উর্দু অনুবাদক।

পারিবারিক পরিমণ্ডলের সাংস্কৃতিক আবহাওয়া সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র মনন ও রুচিতে প্রভাব ফেলে। পিতার বদলির চাকরির সুবাদে পূর্ব বাংলার বিভিন্ন জায়গা দেখার সুযোগ হয়। শিক্ষাজীবনও কেটেছে দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে। ১৯৩৯ সালে তিনি কুড়িগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪১ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। তার আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিলো ডিস্টিঙ্কশনসহ বিএ। পরে অর্থনীতি নিয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হয়েও তা শেষ করেননি।

ছাত্রজীবনে ওয়ালীউল্লাহ্‌ একাধিক মাসিকপত্রে লেখালেখির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৫ সালে দৈনিক স্টেটসম্যানের সাব-এডিটর পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর কর্মজীবনের শুরু। ১৯৪৭ সালে রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের সহকারী বার্তা সম্পাদক হয়ে ঢাকায় আসেন এবং ১৯৫১ সালে যুক্ত হন কূটনৈতিক পেশায়। কর্মজীবনের বড় একটা সময় তিনি বিদেশে কাটান।

১৯৫৫ সালে ফরাসি নাগরিক অ্যান মেরির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ওয়ালীউল্লাহ্‌। ধর্মান্তরিত বিদেশিনীর নাম হয় আজজা মোসাম্মত নাসরিন। তাদের ২ সন্তান—কন্যা সিমিন ওয়ালীউল্লাহ্‌ ও পুত্র ইরাজ ওয়ালীউল্লাহ্‌।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র প্রথম উপন্যাস 'লালসালু' ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন মেরি। ফরাসিতে এর নাম দেওয়া হয় 'L`arbre sans raciness' অর্থাৎ শিকড়বিহীন গাছ। পরে উপন্যাসটি ১৯৬৭ সালে 'ট্রি উইদআউট রুটস' নামে ইংরেজিতেও অনূদিত হয়। এ ছাড়া তিনি ছোটগল্প ও নাটকও রচনা করেছেন। তার দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম 'নয়নচারা' এবং 'দুই তীর ও অন্যান্য গল্প'। তার লেখা ৩টি নাটক হচ্ছে- 'বহিপীর', 'তরঙ্গভঙ্গ' ও 'সুড়ঙ্গ'।

সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌কে বাংলাদেশের সাহিত্যে আধুনিক গদ্যের জনক বলা হয়। তিনি পাঠককে প্রভাবিত করেছিলেন তো বটেই, তার সাহিত্যে প্রভাবিত হয়েছেন আরও অনেক সাহিত্যিক।

১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে মারা যান বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান এই লেখক। গভীর রাতে পড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের ফলে তার মৃত্যু হয়। প্যারিসের উপকণ্ঠে তারা একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন। সেখানেই ঘটে এই দুর্ঘটনা। প্যারিসেই সমাহিত করা হয় তাকে।

Comments

The Daily Star  | English

Next nat'l polls: BNP urges CA, CEC to disclose what they discussed

Ensuring free and fair polls is now the main responsibility of EC and govt, he says

1h ago