হেঁটে বাংলাদেশ: কক্সবাজার সৈকতের ১০২ কিলোমিটার সম্পন্ন

সৈকত
কক্সবাজার সৈকতে নোঙর করা মাছ ধরার নৌকা।। ছবি: বিনয় ভদ্র

মেরিন ড্রাইভের অংশ ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বাকিটা হেঁটে শেষ করার পরিকল্পনা করি। যদিও এটি আমাদের 'ওয়াকিং অ্যাক্রস বাংলাদেশ' এক্সপেডিশনের অংশ ছিল না। কিন্তু বিশ্বের দীর্ঘতম এ সমুদ্র সৈকত পুরোটা হাঁটা এবং এর প্রকৃত দৈর্ঘ্য হিসাব করতেই এই পরিকল্পনা।

বুধবার কক্সবাজার শহর পৌঁছানোর পর গত ৩ দিন বিশ্রাম নিয়েছি। পা হাঁটার পুরোপুরি উপযোগী না থাকায় ৩ দিন বের হইনি।

সেদিন কক্সবাজারের কলাতলী মোড়ে যেখানে শেষ করেছিলাম রোববার সেখান থেকে হাঁটা শুরু করি। মোড় থেকে সরাসরি সৈকতে চলে যাই। সোজা উত্তর দিকে হাঁটতে থাকি।

পর্যটকদের কিছুটা ভিড় দেখা গেছে সৈকতে। সুগন্ধা বিচ বেশ জমজমাট। রোদ ছিল, বেশ বাতাসও ছিল। তাই হাঁটতে বেগ পেতে হয়নি। লাবনী বিচ অতিক্রম করার পর পুরো সৈকতে কোনো পর্যটকের দেখা মেলেনি।

চিংড়ি রেণু
চিংড়ি রেণু আহরণের জন্য পেতে রাখা জাল। ছবি: বিনয় ভদ্র

চিংড়ির রেণু আহরণে ব্যস্ত কিছু স্থানীয়দের সৈকতে পেলাম। কয়েকজন নারীকেও দেখলাম ঝিনুক আহরণ করতে।

হঠাৎ দেখতে পাই বেশ বড় আকৃতির মৃত জেলিফিশ পড়ে আছে সৈকতে। দুদিন আগে পত্রিকায়ও পড়েছিলাম যে কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসছে অনেক জেলিফিশ।

জেলিফিশ এক ধরনের অমেরুদণ্ডী প্রাণী যাদের পৃথিবীর সব সাগর, মহাসাগরে দেখতে পাওয়া যায়। ঘণ্টাকৃতি জেলিসদৃশ প্রাণীটি প্রাণীজগতের নিডারিয়া পর্বের সিফোজোয়া শ্রেণীর অন্তর্গত। জেলিটিন সমৃদ্ধ ছাতার মতো অংশ এবং ঝুলে পড়া কর্ষিকা এই দুই অংশ নিয়ে প্রাণীটির দেহ গঠিত। অন্তত ৫ হাজার কোটি বছর ধরে সাগরে এদের বাস।

জেলিফিশ
সৈকতে ভেসে আসা জেলিফিশ। ছবি: বিনয় ভদ্র

কক্সবাজার বিমানবন্দরের পশ্চিমে সাগরপাড়ে নতুন একটা ঝাউবন দেখতে পেলাম। গাছগুলো খুব একটা বড় হয়নি। বন সংলগ্ন সৈকত ধরে এগোতে থাকি। আজ আশানূর ভাই আসেননি, বিশ্রাম নিচ্ছেন, স্পিকারও আনা হয়নি।

সাগরে এক সময় সোনাদিয়া দ্বীপ দৃশ্যমান হয়। মহেশখালীর দক্ষিণ অংশে সোনাদিয়ার অবস্থান। ৬ বছর আগে সোনাদিয়ার দক্ষিণে ক্যাম্পিং করেছিলাম। আমার মতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর সৈকত সোনাদিয়ায়। সাদা বালুর সৈকত।

সেন্টমার্টিনের সৈকত কোরাল পরিপূর্ণ। কক্সবাজারের সৈকতে পলির আধিক্য। তাই পানি ঘোলা। সোনাদিয়া সৈকতের পানি নীল। সঠিক তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজপ্রাপ্যতা না থাকায় পর্যটকরা সোনাদিয়ায় খুব কম যায়।

সৈকত দক্ষিণ থেকে উত্তর হয়ে হালকা পূর্বদিকে বাঁক নেয়। সেখানে বেশ কিছু মাছ ধরার নৌকা নোঙর করে আছে। ওপারে সোনাদিয়া দ্বীপ ও মহেশখালী। পথে একটা খাল পড়ায় থেমে যাই।

সৈকতের পাশে কক্সবাজার বিমানবন্দরের এক্সটেনশন চলছে। সংরক্ষিত এলাকা, সৈকতও নেই। সামনে অল্প জায়গায় বন বিভাগের সৃজন করা ম্যানগ্রোভ বন।

শুঁটকি
কুতুবদিয়া পাড়ার শুঁটকি পল্লী। ছবি: বিনয় ভদ্র

সৈকতের পাড়ে কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় শুঁটকি পল্লী। এলাকার নাম কুতুবদিয়া পাড়া। এখান থেকে ইজিবাইকে করে শহরে ফেরা যায়।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের এখানে সমাপ্তি বলা যায়। যার শুরু বঙ্গোপসাগরের নাফ নদীর মোহনা থেকে।

টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপ থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজার শহর সংলগ্ন কুতুবদিয়া পাড়ার উত্তরে শেষ হয়েছে এই সৈকত।

মাছ ধরা
সমুদ্রে যাওয়ার জন্য নৌকা প্রস্তুত। ছবি: বিনয় ভদ্র

অ্যাপসের হিসেব অনুযায়ী আজ ৯ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার বিচ হাইকিং করেছি। সমুদ্র সৈকত ধরে হেঁটে বেড়ানোকে বিচ হাইকিং বলা হয়। 

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের শুরু থেকে শেষ পয়েন্ট পর্যন্ত মোট হাঁটা হয়েছে ১০৭ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার। সঠিক হিসাবের জন্য ৫ কিলোমিটার বাদ দিলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য ধরতে পারি ১০২ কিলোমিটার। 

এর মধ্যে পুরো সৈকত কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন না। মাঝে ছোট-বড় অনেক খাল আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Moody's downgrades Bangladesh's ratings to B2, changes outlook to negative

“The downgrade reflects heightened political risks and lower growth, which increases government liquidity risks, external vulnerabilities and banking sector risks, following the recent political and social unrest that led to a change in government,” said Moody’s.

1h ago