হেঁটে বাংলাদেশ: টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, ভোমরা থেকে তামাবিল

হেঁটে বাংলাদেশ
হেঁটে বাংলাদেশ বা 'ওয়াকিং অ্যাক্রস বাংলাদেশ' ক্রস কান্ট্রি ট্যুর। ছবি: সংগৃহীত

হেঁটে বাংলাদেশ বা 'ওয়াকিং অ্যাক্রস বাংলাদেশ' শিরোনামে ক্রস কান্ট্রি ট্যুর আমাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার অংশ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ট্যুরটি করে ফেলার ইচ্ছে ছিল।  কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায় আশানুর সুইডেন চলে যাওয়ায়। সে দেশে ফিরে আসার পর আবারো পরিকল্পনা করি।

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ও ভোমরা থেকে তামাবিল পর্যন্ত প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার আমরা হাঁটব বলে পরিকল্পনা করি। বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের টেকনাফের শাহ পরী দ্বীপ থেকে আমাদের এই পদযাত্রার শুরু।

পদযাত্রার প্রতিপাদ্য 'বিপন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষা করি, প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে এগিয়ে আসি।'

আমরা দুজন ঢাকা ও সিলেটে থাকার কারণে আলাদা আলাদাভাবে চট্টগ্রাম এসে মিলিত হই। আমাদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন উত্তম কাব্য ও হাবিবুর রহমান হাবিব। 

সিলেট থেকে বিনয়, কাব্য ও হাবিব সাড়ে ৯টার বাসে রওনা দিয়ে এবং আশানুর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে যোগ দেওয়ার পর রোববার দুপুর ১২টায় আমরা কক্সবাজার পৌঁছাই।

দুপুরের খাবার খেয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে টেকনাফ রওনা। মেরিন ড্রাইভ হয়ে ভ্রমণ সবসময়ই মনোমুগ্ধকর। সৈকতে ঢেউয়ের আছড়ে পড়া দেখতে দেখতে টেকনাফ পৌঁছাই আমরা।

অফ সিজন থাকায় কম খরচে একটা রিসোর্টে রুম পেয়ে যাই। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রেকি করতে শাহ পরীর দ্বীপে রওনা দেই। অটোরিকশা চালক আমাদের দ্বীপের জেটিতে নামিয়ে দেয়।

আমরা স্টার্টিং পয়েন্ট খুঁজতে থাকি। দ্বীপের দক্ষিণ দিকে বেড়িবাঁধ। সেদিকেই হাঁটতে থাকি। বাঁধের সঙ্গে একটা খাল, ভাটা থাকায় তখন প্রায় শুকনো ছিল। খাল পার হয়ে অল্প কয়েকটা বাড়িঘর দেখতে পাই। বাসিন্দাদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান যে বিজিবির অনুমতি পেলে দক্ষিণ দিকে যাওয়া যাবে।

বিজিবি ছাউনিতে গিয়ে বিজিবি সদস্যদের আমাদের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে বললে তারা অনুমতি দেন। প্যারাবন বামে রেখে সৈকত দিয়ে দ্রুত হাঁটতে থাকি। 

এক সময় বন শেষ হলে দেখতে পাই সৈকতের এই অংশটা খালি। লাল কাঁকড়া দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তখন ভাটা থাকায় আমরা আরও কিছু দক্ষিণে যেতে পারি। পূর্ব পাশে নাফ নদীর মোহনায় মিয়ানমারের পাহাড়গুলো খুব কাছ থেকে দেখা যাচ্ছিল। দক্ষিণ পশ্চিম দিকে সেন্টমার্টিনও দেখা যাচ্ছিল বেশ স্পষ্ট করে। 

সূর্য ডোবার একটু আগে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিণের শেষ বিন্দুতে এসে পৌঁছাই। শুরু হয় আমাদের যাত্রা। যদিও তা পরদিন ভোরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিস্থিতি ও ডাকাতির ভয় বিবেচনা করে যাত্রা শুরু করে দেই।

মাত্র ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার হেঁটে বাদ দেই নিরাপত্তার কথা ভেবে। স্থানীয়রা বলেছিলেন যে অনেকে বেড়িবাঁধে ছিনতাইয়ের শিকার হন।

আগের রাতে যেখানে থেমেছিলাম আজ সকালে আবার সেখান থেকে শুরু করি। সূর্যের তাপ প্রখর হয়ে যাওয়ায় হাঁটতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। এর মধ্যেই ঝাউবনে ভুলে ব্যাগ ফেলে আসি। প্রায় দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর তা বুঝতে পারি। ব্যাগ খুঁজতে অতিরিক্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। এটা অবশ্য আমাদের পদযাত্রার হিসাবে ধরা হয়নি।

জানা গেল, বেড়িবাঁধের ভেতরে সরকার বিদেশি পর্যটকদের জন্য ট্যুরিজম পার্ক বানাবে। সেখানে ইতোমধ্যে বালু ভরাট হয়ে গেছে।

এ এলাকার বাসিন্দাদের প্রধান পেশা সাগরে মাছ ধরা ও শুঁটকি তৈরি করা। শাহ পরীর দ্বীপে স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। তবে স্থানীয়রা খুবই আন্তরিক। আমাদের তারা খুব সহজেই গ্রহণ করছে, উৎসাহ দিয়েছে।

সৈকতের পাড় ধরে হাঁটার সময় শিশুদের ফুটবল খেলা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্যের সঙ্গে সারি সারি সাম্পানের রঙ-বেরঙের পতাকায় সজ্জিত অপূর্ব দৃশ্য খুবই মনোমুগ্ধকর ছিল। 

দুপুরে আমাদের এক্সপেডিশনের অফিসিয়াল হিসাবে অনুযায়ী ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার হেঁটে টেকনাফ বিচে এসে শেষ করি।

পরে রিসোর্টে গিয়ে বিশ্রাম নেই। বিকেল ৫টায় আবার থেমে যাওয়া জায়গা থেকে হাঁটা শুরু করি।

মেরিন ড্রাইভ রাস্তা পাশে রেখে আমরা সৈকত ধরে হাঁটতে থাকি। ঢেউয়ের অবিরাম তাল ছন্দে মশগুল হয়ে এগুতে থাকি। সূর্য হেলে পড়ায় ও বাতাস থাকায় হাঁটতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। 

গোধূলি লগ্নে পশ্চিমাকাশ অন্যরূপ নেয়। পুরোই যেন ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির উর্বর জমিন। রাতের বেলা মজার বিষয় ছিল লাল কাঁকড়ার ঝাঁক।

অন্ধকারে হেডল্যাম্প জ্বালিয়ে এগোতে থাকি। এই পদযাত্রার শুরুতে আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রতিদিন ২৫ কিলোমিটার করে হাঁটা। আজ ১৩ কিলোমিটার হলে আমরা হাঁটা থামিয়ে দেই। সকাল থেকে আজ মোট ২৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার হাঁটতে পেরেছি।

Comments

The Daily Star  | English

Israel army warns 'danger persists' despite ceasefire with Iran

Trump brokered ceasefire agreement in contact with Israel, Iran: White House official

2d ago