ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতে দাম বৃদ্ধি: কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ফাইল ছবি

ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমাতে এর দাম বাড়ানো হয়েছে বলে কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, 'আমরা ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস ও ডিএপি সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করছি। ডিএপি সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদনে কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব। ডিএপি সারে শতকরা ১৮ ভাগ নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের উপাদান আছে। এজন্য ডিএপির ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য সরকার ডিএপি সারের মূল্য প্রতি কেজি ৯০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৬ টাকা করে কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছে।'

'এ উদ্যোগের ফলে বিগত কয়েক বছরে ডিএপি সারের ব্যবহার দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, ডিএপির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ভেবেছিলাম ইউরিয়া সারের ব্যবহার কমবে, কিন্তু কমেনি,' যোগ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সারের দাম বৃদ্ধি, মজুদসহ সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, 'আমরা ইউরিয়া সারের বর্তমান ব্যবহার কমপক্ষে ২০ শতাংশ কমিয়ে ইউরিয়ার ব্যবহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পারি। এতে ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না, বরং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। একইসঙ্গে কৃষকের খরচও কমবে। এটি করতে হলে কৃষকসহ সবার সচেতনতা প্রয়োজন।'

তিনি বলেন, 'এছাড়া নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বছরে ব্যবহার হয় ৩২ লাখ টনের বেশি। এর পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এসব সারের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে ৪ গুণ বেড়েছে, কিন্তু দেশে আমরা দাম বাড়াইনি। কাজেই, ইউরিয়া সারের কেজিতে ৬ টাকা দাম বৃদ্ধির ফলে ফসলের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।'

বর্তমানে দেশে চাহিদার বিপরীতে সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুদ আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'সারের দাম বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে দেশের কোথাও যেন কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা নিবিড়ভাবে মনিটর করছি। কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দাম বেশি নিলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।'

মন্ত্রী আরও বলেন, 'আমরা লক্ষ্য করছি যে সারের দাম বাড়ায় বিএনপিসহ কিছু বাম দল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিএনপির সার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ চরম নির্লজ্জতার প্রমাণ বলে আমি মনে করি। বিএনপির শাসন আমলে সারসহ কৃষি উপকরণের চরম সংকট ছিল। বিএনপি তাদের সময়ে কৃষককে সার দিতে না পেরে পালিয়ে ছিল। সারের জন্য বিএনপি সরকার ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। বিপরীতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সারের উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত রেখেছে। গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের কোনো সংকট হয়নি।'

২০০৫-০৬ অর্থ বছরের তুলনায় বর্তমানে ২৮ গুণ বেশি বা ২৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে এবং এর ফলে দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।

ব্রিফিংয়ে কৃষিমন্ত্রী জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রতি কেজি ইউরিয়াতে ভর্তুকি ছিল ১৫ টাকা, টিএসপিতে ২ টা ৫৩ পয়সা, এমওপিতে ২ টাকা ৬২ পয়সা, ডিএপিতে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। বর্তমানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ইউরিয়াতে ৫৯ টাকা, টিএসপিতে ৮৬ টাকা, এমওপিতে ৯১ টাকা ও ডিএপিতে ১০৭ টাকা।

মন্ত্রী বলেন, 'কোভিড পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে যা ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ। বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়ার আমদানি ব্যয় ৮১ টাকা, টিএসপি ১০৮ টাকা, এমওপি ১০৬ টাকা এবং ডিএপিতে ১২৩ টাকা।'

সারে প্রদত্ত সরকারের মোট ভর্তুকি প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে বলেও জানান মন্ত্রী।

তিনি জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি ছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভর্তুকি লেগেছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Chief adviser returns home after joining COP29 in Baku

Chief Adviser Professor Muhammad Yunus returned home this evening wrapping up his Baku tour to attend the global climate meet Conference of Parties-29 (COP29)

1h ago