‘অন্য জাত পলিশ করে মিনিকেট নামে বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে’
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, মিনিকেট নামে জমিতে যে ফসল হয়, এটা কিন্তু বাস্তবতা, এটা অস্বীকার করা যাবে না। স্থানীয় মানুষই এ নাম দিয়েছে। কাজেই মিনিকেট নাম থাকবে না, কিন্তু জানিনা এটা কেমনে তুলে ধরা যাবে। তবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
তিনি বলেন, 'বিভিন্ন মিলাররা অন্য জাতগুলোকে পলিশ বা সাইজ করে মিনিকেট নামে বিক্রি করে, সেটা বন্ধ করার জন্য আমাদের কঠোর ভূমিকা রাখতে হবে এবং ব্যবস্থা নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় মিলে মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন মিলের কোন চাল তারা কেনে, কোনটা বাজারজাত করছে, কোনটা মিনিকেট করছে পলিশ করে, সেটা আমাদের দেখতে হবে।'
আজ শনিবার দুপুর ১টায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বার্ষিক গবেষণা কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশে ৩০-৪০ বছর আগে মূলত সরিষার তেলই মানুষ খেত। এটাই আমাদের মূল ভোজ্য তেল ছিল। সরিষার ভালো জাত ছিল, উৎপাদনশীলতা কম ছিল, মানুষ বাড়ছিল, মানুষ ধান আবাদে চলে গেছে। বেশিরভাগ জমিতে ধান উৎপাদন হতো। বিদেশ থেকে সয়াবিন, পাম তেল সস্তায় ইমপোর্ট করে আমরা তেলের চাহিদা মেটাতাম। এটা এমন পর্যায়ে গেছে ৯০ ভাগ আমাদের বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। আজকে অত্যন্ত আশার ও খুশির কথা, আমাদের দুটি অর্জন ও সাফল্য হয়েছে এ সমস্যা সমাধানের। অর্থাৎ, স্থানীয়ভাবে ভোজ্যতেল উৎপাদন হচ্ছে। সেটি হলো আমাদের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা সরিষার অনেক ভালো জাত উদ্ভাবন করেছেন। সেগুলোর উৎপাদনশীলতা ভালো। আগে বিঘা প্রতি যেখানে দেড়-দুই মণ হতো, এখন সেটা ৬-৭ মণ হয়, এই একটা দিক। এখন সরিষা গাছ এতো বড় হয় যে জমিতে মানুষ গেলে ডুবে যায়। আগে সরিষা গাছ ছিল ছোট ছোট।'
তিনি বলেন, 'আরেকটা দিক হলো আমনের জাত। যে আমনের পর সরিষা লাগানো হয়। সাধারণত আমন হয় ১৪০ থেকে ১৫০-৬০ দিনে। এই জাতগুলো চাষ করা হলে তখন আর সরিষা চাষের সময় থাকে না, তখন মানুষ বোরো চাষ করতে চায়। এখানেও আমাদের বিজ্ঞানীরা ধানের এমন জাত আবিষ্কার করছেন, সেটা ১১০-১৫ দিনে হয়। আমন এবং বোরোর মধ্য যে সময়টা, এটার মাঝখানে সেই সময়টাতে সরিষা করা সম্ভব। ৮০-৮৫ দিনে সরিষা এসে যায়। সরিষা তুলে আবার বোরোতে চলে যাওয়া যাচ্ছে। বোরোর উৎপাদনে কোনো ক্ষতি হবে না এবং কৃষক অতিরিক্ত ফসল সরিষা করে অতিরিক্ত ৩০-৪০ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারে। যে উৎপাদন হচ্ছে, এটা দিয়ে বাজারে তেমন কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। এ বছরই আমরা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমাদের কৃষি কর্মকর্তা, টেকনিশিয়ানরা মাঠে কাজ করছেন, চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছেন। আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়েছি আগামী ৩ বছরের মধ্য ৪০-৫০ ভাগ ভোজ্যতেল দেশে উৎপাদন করব। দামের কারণ হলো এখনো আমাদের সরিষা দিয়ে মুড়ি খেতে ভালো লাগে, ভর্তা খেতে ভালো লাগে, ভাজি খেতে ভালো লাগে, সরিষার কদর বাংলাদেশে কমেনি। আবার মানুষ সরিষার তেলে ফিরে যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের বিজ্ঞানীরা যারা কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে রয়েছেন, কৃষি মন্ত্রণালয় সমন্বিত কর্মসূচি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা সারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করে সরিষার আবাদ বাড়াতে চাচ্ছি এবং সরিষা দিয়ে দেশের ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করতে চাচ্ছি।'
কৃষি জমি সুরক্ষার জন্য নতুন আইন এ অঞ্চলে প্রয়োগ না করার প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, 'এই জয়দেবপুরে শিল্প এলাকা হচ্ছে, তাই খুব কঠিন। তারপরও আইন হয়েছে, এটা একটা ভালো দিক। এটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতেই সমস্যা হয়। আস্তে আস্তে এটা হবে। আমরা এই আইন প্রয়োগ করব। এখন যেখানে অর্থনৈতিক জোন হয়েছে, সেখানে সরকার একটা এলাকাকে উন্নত দেশের মতো গ্যাসের সাপ্লাই, পানির সাপ্লাই এবং জমি তৈরি করে দিচ্ছে। শুধু একজন উদ্যোক্তা গিয়ে সেখানে একটা শিল্প স্থাপন করবে। যখন এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে তখন আর চাষের জমি বা ফসলের জমি সেটা শিল্প কারখানা বা ইটভাটায় যাবে না। কাজেই আইন প্রয়োগের জন্য একটা পরিবেশেরও সৃষ্টি করতে হবে। সরকার পাশাপাশি সেটিও করছে। এ সরকারের প্রধান কাজ ও মূল কাজের ফোকাসই হলো শিল্প-কারখানা কীভাবে করা যায়। বড় সমস্যা ছিল গ্যাসের, ভৌত অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, ভালো পোর্ট শিল্প করার জন্য এগুলো প্রয়োজন। তারপর গ্যাস, বিদ্যুৎ এগুলো আগে ছিল না, পানি সরবরাহ ছিল না। এগুলো করে আমরা অর্থনৈতিক জোন করে দিচ্ছি শিল্প করার জন্য, শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ করার পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন লক্ষ্য আগামী দিনে যারা শিক্ষিত যুব সমাজ, এদের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। এদের এমপ্লয়মেন্ট ক্রিয়েট করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। একটি সমৃদ্ধশালী ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়তে হলে শিল্প-কারখানা করে শিক্ষিত যুব সমাজের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সারা জাতির দায়িত্ব হলো এই লক্ষ্যে কাজ করা।'
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তার, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজির আলম, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এফ এম হায়াতুল্লাহ এবং কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
Comments