তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের নজিরবিহীন সামরিক মহড়া
চীন স্বশাসিত দ্বীপ রাষ্ট্র তাইওয়ানের চারপাশে বড় আকারে আকাশ ও নৌপথে সামরিক মহড়া শুরু করেছে। চীনের আপত্তি ও সতর্কতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি মঙ্গলবার তাইওয়ান সফর করেন।
আজ কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, তাইওয়ান সফর শেষে পেলোসি দক্ষিণ কোরিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর চীন সামরিক মহড়া শুরু করেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, তাইওয়ানকে ঘিরে মোট ৬টি এলাকায় আজ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা) 'লাইভ-ফায়ার ড্রিল' শুরু হয়েছে। এই মহড়া ৭ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
পেলোসি পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার রাত থেকে চীনের সামরিক কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে তাইওয়ানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অর্থনৈতিক বিধিনিষেধ আরোপ করে চীন।
বুধবারেও সামরিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। তাইওয়ানের দাবি, এই মহড়া জাতিসংঘের নীতিমালা ভঙ্গ করেছে। এর মাধ্যমে চীন, তাইওয়ানের সীমানায় অনুপ্রবেশ করেছে এবং এটি তাদের আকাশ ও নৌপথ বন্ধ করে রাখার সমতুল্য।
আজ বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম দ্য গ্লোবাল টাইমস এই মহড়াগুলোকে 'পুন:একীভূতকরণ কার্যক্রমের' প্রস্তুতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
চীনের সামরিক বিশেষজ্ঞ সং ঝংপিংয়ের বরাত দিয়ে গ্লোবাল টাইমস আরও জানায়, 'যদি ভবিষ্যতে সামরিক সংঘাত দেখা দেয়, তাহলে খুব সম্ভবত এই মহড়ায় অনুসরণ করা পরিকল্পনাগুলোকে সরাসরি সামরিক অভিযানে রূপান্তর করা হবে।'
পত্রিকাটি আরও জানায়, চীনের সামরিক বাহিনী তাইওয়ান প্রণালীর আশেপাশে দূরপাল্লার আর্টিলারি মহড়াও পরিচালনা করবে।
বেইজিং এর মহড়ার জন্য নির্ধারিত ৬টি এলাকার মধ্যে কয়েকটি তাইওয়ানের জলসীমার মধ্যে পড়েছে।
দ্বীপরাষ্ট্রটি ইতোমধ্যে নৌযান পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ও উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোকে এসব অবস্থান এড়িয়ে চলার বিষয়ে সতর্কবাণী দিয়েছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির সামরিক বাহিনী সতর্ক আছে এবং গভীরভাবে পিএলএ'র গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।
তাইওয়ান এ ক্ষেত্রে রক্ষণাত্নক, কিন্তু সতর্ক মনোভাব রাখবে বলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
তাইওয়ান সেনাবাহিনীর কিনমেন প্রতিরক্ষা কমান্ডের মেজর জেনারেল চ্যাং জোন-সাং জানান, গতকাল বুধবার স্থানীয় সময় রাত ৯টা ও ১০টায় ২ বার চীনের এক জোড়া 'ড্রোন' কিনমেন দ্বীপের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা তক্ষুনি ফ্লায়ার জ্বালিয়ে সতর্ক করি এবং ড্রোনগুলো তাড়িয়ে দিই। এরপর, সেগুলো আবার ফিরে আসে। সেগুলো আমাদের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়েছিল।'
প্রায় ২৫ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রের একজন কূটনীতিক হিসেবে তাইওয়ান সফরে যান হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। বেইজিং এ সফরকে ঘিরে 'গুরুতর পরিণতির' হুমকি দেয়।
সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে তাইওয়ান প্রণালীতে এরকম একটি সংকট দেখা দিয়েছিল।
এরপর থেকে চীন তাদের সামরিক সক্ষমতার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করেছে। ইতোমধ্যে দেশটি তাদের বাহিনীতে বিমানবাহী রণতরী যোগ করেছে এবং হাইপারসনিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে।
Comments