ডলারের দাম বাড়লে কার লাভ, কার ক্ষতি

ডলার
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

বিশ্বব্যাপী ডলারের দাম বাড়ছে। বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতিদিনিই এমন সংবাদ আমাদের চোখে পড়ছে। এই তালিকায় অন্যান্য দেশের সঙ্গে আছে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান।

এখন প্রশ্ন—ডলারের দাম বাড়লে কী হয়? সহজ উত্তর—মার্কিন ডলার কিনতে বিভিন্ন দেশকে তাদের মুদ্রার বিপরীতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়।

আবার প্রশ্ন জাগতে পারে, কীভাবে মার্কিন ডলারের বিপরীতে অন্য দেশের মুদ্রার দাম নির্ধারণ করা হয় এবং কেন অন্য কোনো দেশের মুদ্রা বেঞ্চমার্ক হতে পারে না? বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করা যেতে পারে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ডলার প্রধানতম বৈশ্বিক মুদ্রা। যদিও মার্কিন ডলারের পাশাপাশি ইউরো জনপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই দুটির প্রচলন বেশি।

আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোয় বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের অংশ ৬৪ শতাংশের বেশি। ইউরো প্রায় ২০ শতাংশ। ডলার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির শক্তিকে প্রতিফলিত করে।

অপরিশোধিত তেলসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ ঋণ ডলারে অনুমোদিত হয়। বিশ্বের ১৮০ বা এর বেশি অন্যান্য মুদ্রার বেশিরভাগই নিজ নিজ দেশের মধ্যে ব্যবহৃত হয়।

আমরা প্রায়ই পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলি। মনে রাখতে হবে পর্যাপ্ত পণ্য না থাকলে এর দাম বেড়ে যায়। চাহিদা-সরবরাহের মধ্যে ব্যবধান হয়। যখন অর্থনীতিতে অর্থের সরবরাহ বেশি হয়, কিন্তু আমরা যা চাই তা পাই না, তখন ডলারের বিপরীতে মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।

যখন কোনো কিছুর চাহিদা বেশি থাকে, তখন এর দাম বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের চাহিদা বেশি থাকায় ডলারের দামও বাড়ছে। যেসব দেশের রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বেশি, তারা রপ্তানি আয়ের চেয়ে আমদানি বাবদ বেশি খরচ করে। ডলারের দাম বেশি হলে সেসব দেশের আমদানি খরচ বাড়ে।

ডলারের দাম সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। ডলারের দাম বাড়ার আগে বা টাকার অবমূল্যায়নের আগে যে পরিমাণ উপার্জন করতেন এখনো তাই করছেন। তারা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন। কিন্তু, আসলে কী তাই?

বিষয়টি মোটেও এমন নয়। ডলারের দাম বৃদ্ধি মানেই নিজস্ব মুদ্রার দাম কমে যাওয়া। এটি সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে। ডলারের দাম বেড়ে গেলে বেশি খরচে অপরিশোধিত তেল আমদানি করতে হয়।

দাম কি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের জন্য জ্বালানি খরচ বাড়াচ্ছে? তা নয়। তেলের দাম বাড়লে শাকসবজি, ভোজ্য তেল ও খাদ্যশস্যসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের পরিবহন খরচও বেড়ে যায়। ফলে, সেসব পণ্যের দামও বাড়ে। এটি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলে। এটি একটি দেশকে মূল্যস্ফীতির দিকে ঠেলে দেয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়।

অপরিশোধিত তেলের জন্য অতিরিক্ত ডলার খরচ করতে হয় বলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির সক্ষমতা কমতে থাকে। এ কারণে আমদানিনির্ভর দেশগুলোয় বিদেশি পণ্য ব্যয়বহুল হয়।

ডলারের দাম বৃদ্ধি বা টাকার দরপতন বিদেশি শিক্ষা ও ভ্রমণকে আরও ব্যয়বহুল করে তোলে। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়।

আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে, কেন ডলারের দাম বাড়ছে? ইউক্রেন যুদ্ধ ডলারের দাম বৃদ্ধি এবং টাকা বা রুপির দর পতনের গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক দেশ। যুদ্ধের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় তেলের দামও বেড়েছে।

আরও কিছু কারণ ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রাকে দুর্বল করেছে। যেমন, চীনের বিভিন্ন শহরে কঠোর লকডাউন সেখানকার অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। স্বাভাবিকভাবেই এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপসহ অন্যান্য দেশে।

বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা যখন স্টক ও বন্ড বাজার থেকে অর্থ তুলে নেন তখনো বিভিন্ন মুদ্রার দরপতন হয় এবং ডলারের দাম বেড়ে যায়।

প্রশ্ন হলো—ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য নির্ধারণ করে কে? বাংলাদেশ সরকার? যুক্তরাষ্ট্র? নাকি অন্য কেউ? আসলে কেউই করে না।

ডলারের দর বৃদ্ধি কারো কারো জন্য স্বস্তির কারণ হতে পারে। যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত বা অন্যান্য দেশে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসীরা দেশে ডলার পাঠালে বিনিময় হারের কারণে তাদের পরিবার বেশি অর্থ পায়।

টাকার অবমূল্যায়ন রপ্তানিকারকদের ডলারের বিপরীতে আরও বেশি অর্থ পেতে সহায়তা করে। সহজ কথায় বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতা আরও বাড়ায়।

Comments

The Daily Star  | English

BNP's name being misused for personal gains: Rizvi

He urges party men to remain vigilant against committing misdeeds

1h ago