মৃত্যুর ১৬ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেন ইজ্জত আলী

মৃত্যুর ১৬ বছর পর বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া ইজ্জত আলী মাস্টার। ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধকালে লালমনিরহাটের কালগীঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম চন্দ্রপুরের বাসিন্দা ইজ্জত আলী মাস্টারের বাড়িটি ব্যবহৃত হতো মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয়স্থল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে। স্বাধীনতাযুদ্ধের সেই উত্তাল সময়ে এই বাড়িতেই আশ্রয় নেওয়া ৫ জন বীর ‍মুক্তিযোদ্ধা পেয়েছেন বীর উত্তম খেতাব।

নিজ বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সে সময় তাদের সঙ্গে কয়েকটি সম্মুখসমরেও অংশ নেন ইজ্জত আলী। এভাবে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেশমাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে অবদান রাখা এই ব্যক্তি ২০০৬ সালে ৭৯ বছর বয়সে মারা যান। অবশেষে মৃত্যুর ১৬ বছর পর তার পরিবারের আবেদন ও সহযোদ্ধাদের অনুরোধে তাকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

কালীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল মান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গত ৪ জুলাই মন্ত্রণালয়ের গেজেট অধিশাখা থেকে ইজ্জত আলীকে বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়েছে।

ইজ্জত আলীর এই বাড়িতে থেকেই প্রাশমিক প্রশিক্ষণ নেন অন্তত ৫০০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ছবি: স্টার

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্লাটুন কমান্ডার মনিরুজ্জামান মনিরের সঙ্গে। তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় ইজ্জত আলী মাস্টারের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই বাড়িটি তারা ট্রানজিট ক্যাম্প হিসেবেও ব্যবহার করতেন। সে সময় প্রায় ৫০০ বীর মুক্তিযোদ্ধা এই বাড়িতে থেকেই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।

মনিরুজ্জামান বলেন, 'এই বাড়িতে থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর অনেকে ভারতে প্রশিক্ষণ শেষে আবার এখানে অবস্থান করেই সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। সে সময় প্রতিদিন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের জন্য খাবার রান্না করতেন ইজ্জত আলীর স্ত্রী রাজিয়া খাতুন। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রাগারও পাহারা দিতেন তিনি।'

আরেক বীর মুক্তিযোদ্ধা অপারেশন কমান্ডার আইনুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইজ্জত আলী নিজেও বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নিতেন। তার বাড়িতে থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীক উপাধি পেয়েছেন।'

ইজ্জত আলী মাস্টারের ছেলে কলেজশিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন জানান, তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন তারা। তিনি বলেন, 'আমার বাবা তার জীবদ্দশায় এই আবেদন করেননি। তিনি বলতেন, "একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ কিংবা স্বীকৃতির দরকার হয় না। কেবল দেশপ্রেম থাকতে হয়।"'

ইজ্জত আলী মাস্টারের মেয়ে মাহফুজা আখতারও একজন কলেজশিক্ষক। বাবা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় গর্বিত এই কন্যা বলেন, 'আমরা বাবার কাছ থেকে আমাদের বাড়ির ইতিহাস জেনেছিলাম। কিন্তু বাবার অনুরোধে এটা আমরা ফলাও করে বলতাম না কখনো।'

মাহফুজা আখতার জানান, বাবার সঙ্গে একই সংগ্রামে অংশী হওয়া তার মা রাজিয়া খাতুন এখনো বেঁচে আছেন। তবে শারীরিকভাবে খুব অসুস্থ তিনি। স্বামীর স্বীকৃতিতে তিনি খুব খুশি হয়েছেন।

ইজ্জত আলীর ২ সন্তান আরও জানান, গত বছরের ২৯ আগস্ট উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলা থেকে ১৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এসেছিলেন তাদের বাড়িতে। তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধকালে কোম্পানি কমান্ডার, ক্যাম্প কমান্ডার ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ইজ্জত আলীকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন তারা।

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Climate finance: $250b a year needed

COP29 draft deal says rich nations should pay the amount to fight climate change

14m ago