রিজার্ভ কমায় আমাদের ঝুঁকি নেই: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব

kaykaus.jpg
ছবি: সংগৃহীত

করোনা অতিমারির পরে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভ কিছুটা কমে গেলেও তাতে ঝুঁকি নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস।

আজ বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের অনুরোধ জানানো প্রসঙ্গে কায়কাউস বলেন, আমাদের এখানে সম্প্রতি আইএমএফ একটি মিশনে এসেছে, আমাদের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে। এটা কিন্তু রুটিন, প্রতি বছরই হয়। জাইকা, এডিবি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়। আইএমএফের সঙ্গেও কথা হয়। আমরা কী কী ফ্যাসিলিটি নিতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

আমাদের সংকট যেটা সবাই বলছে, রিজার্ভ নিয়ে সবারই এক ধরনের মাথা ব্যথা হয়ে গেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন ২১ থেকে ২০ বিলিয়ন হয়েছিল তখন মানুষের ধারণা ছিল এত টাকা দিয়ে কী হবে? এমনকি ২০১৯ সালেও আমাদের ৩০ বা ৩১ বিলিয়ন ছিল, কারো কোনো চিন্তা ছিল না। ৪০ বিলিয়ন পার হওয়ার পরে মনে হচ্ছে যেন, একটু এদিক-ওদিক হলেই দেশের ভিত্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। তাতে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। অতএব আমাদের এখানে দেখা যাচ্ছে, একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। আমাদের ৪২ বিলিয়ন ডলার ছিল সেটা একটু কম হয়েছে, বলেন তিনি।

কায়কাউস আরও বলেন, সাধারণত বলা হয় ৩ মাসের আমদানি ব্যয় যদি থাকে তাহলে ওই অর্থনীতিটা মজবুত। আমাদের ৫ মাসের অধিক আমদানি ব্যয় আছে। এর আগে বলা হতো, ৩ মাসের খাদ্য আমদানির ক্যাপাসিটি আছে কি না। এখন আমরা শুধু খাদ্য আমদানি হিসাব করি না, আমাদের মোট যে আমদানি হয় সেটা হিসাব করছি। তাতে দেখা যাচ্ছে, আমাদের ৫ মাসের বেশি আছে। অতএব আমাদের ঝুঁকি নেই। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ বলছে, বৈশ্বিক মন্দা হতে পারে। বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে, তাদের অর্থনীতি হোঁচট খাচ্ছে তাহলে আমরা কি কোনো প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো না?

তিনি বলেন, প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তাদের যে পসিবল ফান্ড উইন্ডোগুলো আছে সেই উইন্ডো থেকে আমরা কী নিতে পারি তার প্রস্তাবনা দিয়েছি। এটার সঙ্গে 'বেইল আউট'; যে শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে, এটাতে আমার চরম আপত্তি। আমাদের দেশ কি চরম ঝুঁকিতে যে বেইল আউট করতে হচ্ছে? আমাদের গত মাসে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে, যেটি আমাদের আত্মবিশ্বাসের জায়গা, সেই আত্মবিশ্বাসে সমুন্নত না হয়ে কেন নিচের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ১৯৯৩ সালে ৭৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এক্সটেনডেড ট্রেড ফ্যাসিলিটি থেকে নেওয়া হয়েছিল। ২০০৩ সালে ৫০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সহায়তা নেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালে ৯৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যালেন্স অব পেমেন্ট সহায়তা নেওয়া হয়েছে আইএমএফ থেকে। করোনা অতিমারিকালে ২০২০ সালে আমরা র‌্যাপিড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি এবং র‌্যাপিড ফিন্যান্সিং ইনস্ট্রুমেন্ট থেকে ৭৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নেওয়া হয়েছিল আইএমএফ থেকে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি থেকে আমরা নিয়মিত নিচ্ছি।

আগে আমরা প্রজেক্ট ফিন্যান্সিং বেশি নিতাম। তাতে দীর্ঘ মেয়াদি হয়ে যায়। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি এত মজবুত হয়েছে এবং আমাদের ই-পেমেন্ট এত ভালো সে জন্য ওরা আমাদের বাজেট সহায়তা দিচ্ছে। করোনা অতিমারিকালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি ও জাইকা আমাদের বাজেট সহায়তা দিয়েছে। অর্থাৎ আমার স্বাধীনতা আছে আমি কোন জায়গায় খরচ করবো। টাকাটা তারা দিচ্ছে ঋণ হিসেবে। এটার ভালো দিক হলো আমাদের ওপর আস্থা এসেছে, আমরা এটার বেটার ইউজ করতে পারি। এবারও বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এটা বেইল আউট না। মূলত উন্নয়ন কাজে ব্যয়ের জন্য আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা দরকার, বলেন তিনি।

অসত্য তথ্য পরিবেশন করা হলে দুঃখ হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বলা হচ্ছে আদানি যেটা তৈরি হচ্ছে সেটা বসিয়ে বসিয়ে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা দিতে হবে। কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র সিওডি হওয়ার আগে একটা পয়সাও দেওয়া হয় না, সুযোগও নেই। মেঘনা ঘাট নিয়ে যেগুলো বলা হচ্ছে, এগুলোর প্রত্যেকটার সিওডি ডেট বদলে দেওয়া হয়েছে। এই সংকটে প্রত্যাশিত তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা বিদ্যুৎকেন্দ্র যতক্ষণ পর্যন্ত সে আসবে না, ততক্ষণ আমি একটা পয়সা তাকে দেবো না। তাহলে কেন হরোর স্টোরি তৈরি করছে? টেল দ্য ট্রুথ। যদি ভুল হয়ে থাকে আমরা মাথা পেতে নেব।

যে কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্বাভাবিক খরচ ৬৫ শতাংশ ব্যয় হয় জ্বালানি। ৩০-৩৫ শতাংশ হলো ক্যাপিটাল। ইনভেস্টমেন্ট কস্ট। বিশ্বব্যাপী একটি স্বীকৃত পথ হলো ৩৫ শতাংশ যেটা আমি বিনিয়োগ করেছি, সেই রি-পেমেন্ট হলো ক্যাপসিটি চার্জ। এখন আমি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখলাম, কারণ আমি এখন খরচ বাড়াতে চাচ্ছি না। তাহলে ৩০-৩৫ শতাংশ খরচ আমার হবে, ৬৫ শতাংশ আমি সাশ্রয় করছি, বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
High Court

Fresh probe by home ministry needed: HC

The August 21, 2004 grenade attack case should be referred to the home ministry for a fresh probe by a proper and expert investigation agency to ensure justice, observed the High Court in its full verdict

30m ago