মহাকাশে মানবদেহে যে পরিবর্তন ঘটে

ছবি: ইউএন নিউজ

সাম্প্রতিকালে মহাকাশ গবেষণার বিষয়টি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মহাকাশ গবেষণা ও গবেষকদের সম্পর্কে জানার আগ্রহ মানুষের কম নয়। মহাকাশ ভ্রমণে নভোচারীদের বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখীন হতে হয়। আজকে সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। 

মহাকাশে ওজনহীনতা অনুভব করেন নভোচারীরা। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭ হাজার মাইলেরও বেশি। এই গতিবেগে চলার ফলে প্রতি ৯০ মিনিটে একবার করে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে থাকে। যা বাণিজ্যিক জেট বিমানের চেয়েও প্রায় ৩০ গুণ দ্রুত। 

বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদন থেকে বলা হয়েছে, নভোচারীরা যখন মহাকাশে অবতরণ করেন, সেই সময়টা সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণার। শুরুর দিকে মাইক্রোগ্র্যাভিটির কারণে আকাশে ওড়ার মতো আনন্দ হলেও, পরে সেটাকে আর আনন্দ বলা যায় না। আকাশ বা সমুদ্র যাত্রায় অস্বস্তির মতো টানা বেশ কয়েকদিন শরীরে অস্বস্তি হতে থাকে। এ সমস্যাকে স্পেস-অ্যাডাপটেশন সিকনেস বলা হয়। 

এ ছাড়া মাধ্যাকর্ষণের অভাবে শরীরের ভেস্টিবুলার সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। অর্থাৎ, শরীরের যেসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মস্তিষ্কে ঘূর্ণন এবং ত্বরণ সম্পর্কে তথ্য পৌঁছানোর কাজ করে সেগুলো বাধাপ্রাপ্ত হয়। এ ছাড়া শরীরের হাড় এবং মাংসপেশীগুলো ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে। প্রতি মাসে নভোচারীদের হাড়ের ঘনত্ব এক শতাংশের বেশি হারে কমতে থাকে। 

শরীরের ওজন অনুভব না করায় নভোচারীরা তাদের শরীরে পানির পরিমাণ বেশি অনুভব করে। বারবার প্রস্রাব করার প্রবণতা থেকে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে।  

মহাকাশে থাকার সময় নভোচারীদের তোলা ছবিতে তাদের মুখের অংশ 'প্লাফি' বা ফুলে থাকতে দেখা যায়। মূলত ভাসমান অবস্থায় থাকার ফলে দেহের নিচের অংশের চেয়ে উপরের দিকে রক্ত চলাচল বেশি হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়। ফলে দৃষ্টিশক্তিও কমে যায়। 

গবেষকদের মতে, মাধ্যাকর্ষণের অভাব টি-কোষের কার্যকারিতাকে দুর্বল করে দেয়, যেটি রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া পৃথিবীতে যে পরিমাণ বিকিরণ পাওয়া যায় তার থেকে ১০ গুণেরও বেশি মহাজাগতিক বিকিরণের সংস্পর্শে আসে নভোচারীরা। যা চোখের জন্য বেশ ক্ষতিকর। 

মহাকাশের মতো জনমানবহীন স্থানে দীর্ঘ সময় থাকতে হয় বলে নভোচারীরা এক পর্যায়ে মানসিকভাবেও দুর্বল হয়ে পড়েন। আর ২৪ ঘণ্টার ঘুমের সাইকেল বা ঘুমচক্র না থাকার ফলে সার্কাডিয়ান রিদম বন্ধ হয়ে যায়, যা মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। 

প্রতি ৪৫ মিনিটে একবার করে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার পর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সঠিক সময় সম্পর্কে ধারণা করা নভোচারীদের জন্য কষ্টকর। এ ছাড়া মহাকাশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গামা রশ্মি ও আয়নের প্রভাব তো রয়েছেই। 

স্পেশ স্টেশনের নভোচারীদের মতে, মঙ্গল অভিযানে এর থেকেও বেশি বিকিরণ, মাধ্যাকর্ষণের অভাব এবং দীর্ঘ যাত্রার সম্মুখীন হতে হবে।

 

গ্রন্থনা: আসরিফা সুলতানা রিয়া 
 

Comments

The Daily Star  | English
US dollar price rises

Explanations sought from 13 banks for higher dollar rate

BB issued letters on Dec 19 and the deadline for explanation ends today

1h ago