অস্ট্রেলিয়ার এক সাদা পাহাড়ের গল্প
পাঁচ দিনের ছুটিতে গিয়েছিলাম মাউন্ট হোথাম। সম্পূর্ণ তুষারে আচ্ছাদিত সাদা ধবধবে এত উঁচু পাহাড় অস্ট্রেলিয়াতে দ্বিতীয়টি নেই। মাউন্ট হোথামের উচ্চতা ১ হাজার ৮৬১ মিটার।
পাহাড়টি 'হোথাম আলপাইন রিসোর্ট' নামে পরিচিত। তার আশ্চর্যজনক প্রাকৃতিক ভূখণ্ড, গহীন গিরিপথ, চ্যালেঞ্জিং স্কি এবং স্নোবোর্ড রানের জন্য বিখ্যাত।
মাউন্ট হোথামে স্কিইং, স্নোবোর্ডিং, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উড়ন্ত ক্যাবল কার, উত্তেজনাপূর্ণ ভূখণ্ড এবং শরীরে আলিঙ্গন করা তুষার জীবনেরই একটি অংশ হয়ে যায়।
মাউন্ট হোথামকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্কি এবং স্নোবোর্ড বিলাসীরা নিজেদের আবাসস্থল বানিয়ে নিয়েছেন।
এখানে এসে মানুষ নিজেদেরকে কয়েক দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন পৃথিবীর সব কিছু থেকে। প্রশস্ত খোলা জায়গা, আনন্দদায়ক ভূখণ্ড এবং প্যানোরামিক দৃশ্যসহ চারদিকে সাদা তুলোর মত তুষার আর তুষার। সত্যিই বিস্ময়কর!
বিশাল উচ্চতায় দাঁড়িয়ে শ্বাস নেওয়ার অভিজ্ঞতা এবং সারাক্ষণ নিজেকে চ্যালেঞ্জ করার মতো খুব কম জায়গা আছে অস্ট্রেলিয়ায়।
মাউন্ট হোথামের ১৮৬১ মিটার উচ্চতায় দাঁড়িয়ে আমার বারবার মনে পড়ছিল বাংলাদেশের সাজেকের কথা। সাজেকও হতে পারতো পৃথিবীর অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ ট্যুরিস্ট স্পট। এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ এমন অপূর্ব পাহাড়গুচ্ছকে করে ফেলেছে 'বিজনেস স্পট।' সারি সারি রেটুরেন্ট, দোকান আর রিসোর্ট পাহাড়ের নির্জন সৌন্দর্যকে লুণ্ঠন করেছে। নগরীর রেস্টুরেন্টে বসা কাস্টমারদের মতো হৈচৈ, দোকানগুলোতেও একইরকমের ভিড়, রিসোর্টে সেই একই আড্ডা। বুক ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার খোলা জায়গা নেই। পাহাড়ি স্নিগ্ধ বুনো ঘ্রাণ নেই। তাহলে পাহাড়ের ডাকে কেন সাজেকে যাবে মানুষ?
হোথাম আলপাইন রিসোর্ট ভিক্টোরিয়া রাজ্যের রাজধানী মেলবোর্নের উত্তর পূর্বে প্রায় ২২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনি থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে। আমরা গিয়েছিলাম সিডনি থেকে।
৬০০ কিলোমিটার গাড়ি চালানোর পর রাস্তায় অনেকগুলো সাইনবোর্ড চোখে পড়লো। যাতে বলা হয়েছে, মাউন্ট হোথামের রাস্তা বরফে ঢাকা পড়েছে। পিচ্ছিল রাস্তা খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
আমরা যাত্রা বিরতি করলাম ব্রাইট নামের এক শহরতলীতে। এটিও পাহাড়ি অঞ্চল। সন্ধ্যার পরই বন্ধ হয়ে যায় দোকান, রেস্টুরেন্ট, বার। পাহাড়ের দেয়াল দিয়ে ঘেরা শহরতলীতে রাত কাটিয়ে রওনা হলাম ভোরে। তখনো বুল্ডোজার দিয়ে বরফ কেটে পরিস্কার করা হচ্ছে বাতাসে ওড়া শাড়ির আঁচলের মতো আঁকাবাঁকা রাস্তা।
মাউন্ট হোথাম দেখার সেরা সময় হলো জুলাই এবং আগস্ট মাসের মধ্যে। এটি 'পিক স্কি সিজন।' এ সময়েই অস্ট্রেলিয়ার অন্য যেকোনো স্কি স্পটের চেয়ে বেশি তুষারপাত হয় এখানে। এসময় এলে অনন্য এক অভিজ্ঞতায় মুগ্ধ হতেই হবে। তাপমাত্রা নেমে যায় সর্বনিম্ন ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতম গ্রাম হিসেবে পাহাড়ের চুড়ায় খুব পরিকল্পিতভাবে আছে রিসোর্ট, রেস্তোঁরা, ক্যাফে। পিৎজা, বার্গার থেকে শুরু করে ককটেল এবং টাকো প্রত্যেক অতিথির আকাঙ্ক্ষা মেটানোর জন্য সুস্বাদু খাবারে পরিপূর্ণ।
নিজস্ব গাড়ি ছাড়াও মাউন্ট হোথামে যাওয়ার জন্য প্রচুর বিকল্প ব্যবস্থা আছে। বিলাসী স্পর্শের জন্য ফলস ক্রিক এবং পেরিশারসহ বিভিন্ন অবস্থান থেকে অতিথিদের পরিবহনের জন্য হেলিকপ্টার ভ্রমণের আয়োজন করা হয়।
একটি বিলাসবহুল তুষার গম্বুজে রাত্রিযাপন করার অভিজ্ঞতা জীবনেও কেউ ভুলতে পারবেন না।
একটি বিশ্বমানের পর্যটন ভূখণ্ড অন্বেষণে যারা উদগ্রীব তাদের জন্য মাউন্ট হোথাম আদর্শ স্থান।
আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক
Comments