নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা হবে অসাম্প্রদায়িক: শিক্ষামন্ত্রী

আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সময়
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি | ফাইল ছবি | বাসস

নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক ভাবাদর্শে গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। 'শিক্ষাব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতা' এক ওয়েবিনারে শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেছেন।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত এই ওয়েবিনারে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'সাম্প্রদায়িকতার সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের মনোজগতে পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে যারা আইন প্রয়োগ করেন।'

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, 'বিদেশ থেকে কেবল রেমিট্যান্স আসছে না, বিদেশি সংস্কৃতি ও পোশাক আমাদের দেশে আসছে। আমাদের দেশের একটি গোষ্ঠী যারা নিজেদের পছন্দ ও বিশ্বাস অন্যের উপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার জন্য সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ব্যক্তি স্বার্থের জন্যও কিছু মানুষ এ ধরনের হামলা করছে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে আলোচনা করেন নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কলামিস্ট জুলিয়ান ফ্রান্সিস, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, শিক্ষাবিদ ও সংস্কৃতিকর্মী অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল) ও কাজী মুকুল।

বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার শিক্ষক শংকর দেবনাথ, মুন্সিগঞ্জের শিক্ষক হৃদয় মন্ডল, পটুয়াখালীর ছাত্র জয়দেব এবং সুনামগঞ্জের সমাজকর্মী ঝুমন দাস।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, 'শিক্ষক নিপীড়নের ঘটনাগুলো পরিকল্পিত। '৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীরা জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য শিক্ষকদের খুঁজে খুঁজে বের করে হত্যা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজও শিক্ষকরা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীরা মৌলবাদীদের হাতে নিগৃহীত, নিপীড়িত হচ্ছেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তার শিক্ষক গুরুকে যেভাবে সম্মান প্রদর্শন করেন তা আমাদের কাছে শিক্ষণীয়।'

সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরলে শিক্ষামন্ত্রী তাদের মামলাগুলো দ্রুত সুরাহার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'আমি বির্বত, লজ্জিত, মর্মাহত ভুক্তভোগীদের সহমর্মিতা জানাতে কেবল একথাগুলো বলাই যথেষ্ট নয়।'

নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, 'অতি সম্প্রতি নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা থেকে আমরা যদি এক দশক আগে সংঘটিত রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর হামলার পর্যালোচনা করি কোনওটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বিবেচনা করা যাবে না।'

'আমরা গত কয়েক বছর ধরে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি পাকিস্তানপন্থী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের শিক্ষাঙ্গনগুলো এবং শিক্ষাব্যবস্থাকে আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে, যার প্রধান উদাহরণ- হেফাজতে ইসলামের দাবির কারণে ২০১৭ সালে আমাদের স্কুল পাঠ্যসূচিতে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবর্তন।'

শাহরিয়ার কবির আরও বলেন, 'আমরা প্রায় এক দশক ধরে "সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন" প্রণয়ন এবং বিচারিক ক্ষমতাসম্পন্ন "জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন" গঠনের দাবি জানিয়েছি, যা ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারেও ছিল। এই দাবি পুনর্ব্যক্ত করার পাশাপাশি আজকের ওয়েবিনারে আমাদের দাবি- বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকতার মূল উৎপাটন করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর দর্শনের আলোকে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে।'

নির্মূল কমিটির সহসভাপতি শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, 'শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। মৌলবাদীরা জানে এই মেরুদণ্ডটি যদি দুর্বল করে দেয়া যায় তাহলে পুরো জাতিকেই বিভ্রান্ত করা যাবে। এতে তারা সফলতাও অর্জন করেছে। তার প্রমাণ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নড়াইলের পর পর দুটি ভয়ঙ্কর লজ্জাস্কর ও কলঙ্কজনক ঘটনা। নিকট ও দূর অতীতের বহু এ ধরনের সাম্প্রদায়িক ঘটনার কথা সকলেই জানেন। আমাদের অবিলম্বে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।'

ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা কলামিস্ট জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, 'আমরা দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের সময় কীভাবে বাংলাদেশের সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ একে অপরকে সাহায্য সহযোগিতা করে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। ভারতে শরণার্থী শিবিরগুলোতে শরণার্থীরা ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ভাগাভাগি করেছিল -সেই মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের মানুষের মাঝে অসাম্প্রদায়িকতা আজ অনুপস্থিত। জামায়াত-হেফাজতসহ অন্যান্য দল ও সংগঠনের নেতারা এদেশের মানুষের মগজ ধোলাই করে সাম্প্রদায়িকতার বীজবপন করছে।'

অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, 'ভিকটিমদের বক্তব্য শুনে বুকটা ভেঙে গেছে। সবাই একভাবে থাকতে না পারলে আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। শঙ্কর দেবনাথ, জয়দেব ও হৃদয় চন্দ্রের উপর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকায় আমি হতাশ। তাদের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নেওয়া দরকার ছিল।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

15h ago