সরকারের কাছে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদকদের পাওনা ১.৫ বিলিয়ন ডলার

প্রতীকী ছবি

বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পরিচালকরা বিদ্যুতের মূল্য বাবদ সরকারের কাছ থেকে এখনো ১.৫ বিলিয়ন ডলার বুঝে পাননি।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ সপ্তাহে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আংশিকভাবে বকেয়া বিল পরিশোধ করেছে।

দেশের বিদ্যুৎখাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম বলেন, 'আমরা মার্চ থেকে শুরু করে চলতি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের বিপরীতে কোনো পেমেন্ট পাইনি।'

তিনি ইউএনবিকে আরও বলেন, 'আমাদের মধ্যে অনেকে ফেব্রুয়ারির বিলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পেমেন্ট পেয়েছি। কিন্তু অনেকে সেটাও পাননি।'

তিনি আশা প্রকাশ করেন, উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে যোগাযোগ করায় বিলের নিষ্পত্তি নিয়ে শিগগির একটি চূড়ান্ত সমাধান পাওয়া যাবে।

স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিপিডিবি প্রতি মাসে ৪ হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ ক্রয় করে।

মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুনের বিল বাকি পড়েছে। এ ছাড়া, কিছু প্রতিষ্ঠানের ফেব্রুয়ারির বিলও আংশিকভাবে মেটানো হয়েছে।

সেই হিসাবে পুরো বকেয়া বিলের পরিমাণ ১.৫ বিলিয়ন ডলার হবে বলে জানান কয়েকটি বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সত্ত্বাধিকারী কনফিডেন্স গ্রুপের পরিচালক ইমরান করিম।

কয়েক মাস ধরে বিপিডিবি নগদ অর্থ সংকটে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে বিদ্যুতের দাম খুচরা পর্যায়ে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সম্প্রতি তারা মূল্যবৃদ্ধি বিষয়ে একটি গণশুনানির আয়োজন করেছে।

বিপিডিবি বিআইপিপিএর দেওয়া হিসাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জানায়, তারা সাধারণত বিল জমা পড়ার পর বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য ৪৫ দিন সময় পায়।

বিপিডিবির জনসংযোগ পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, 'যদি এভাবে বকেয়ার হিসাব করা হয়, তাহলে পরিমাণটি আড়াই মাসের মতো হবে।'

তিনি আরও জানান, বিপিডিবি ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারির বকেয়ার বেশিরভাগ অংশ পরিশোধ করেছে।

বিপিডিবির আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট, যার মধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত উৎপাদন ছিল ২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট। বাকি ২ হাজার ৮৮৭ মেগাওয়াট 'ক্যাপটিভ' উৎপাদন, যেটি মূলত শিল্প খাতের মালিকরা তাদের নিজেদের কারখানা চালানোর জন্য উৎপাদন করে থাকেন।

গত ১৬ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যেটি দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, দেশে এ মুহূর্তে বাড়তি উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে ১০ হাজার ৪৫৩ মেগাওয়াট (প্রায় ৪১ শতাংশ)।

২২ হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াটের মধ্যে ৫০ দশমিক ৩ শতাংশ (১১ হাজার ২৪০ মেগাওয়াট) সরকারি খাত থেকে এবং বাকি ৪৯ দশমিক ৭ শতাংশ (১১ হাজার ১০৮ মেগাওয়াট) বেসরকারি খাত থেকে এসেছে।

বিপিডিবির নথি থেকে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারকে মোট ৭১ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে, যার মধ্যে ৪৪ হাজার ৪৩৪ কোটি টাকা বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার জন্য খরচ করা হয়েছে।

বেসরকারি খাতের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) এবং ছোট আইপিপি কারখানায় মোট উৎপাদনের ৩৮ শতাংশ (৮ হাজার ৮০৭ মেগাওয়াট) উৎপাদিত হয়। এই খাতে মোট ব্যয় ৩৭ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা।

বিআইপিপিএ কর্মকর্তারা জানান, বকেয়া পেতে দেরি হওয়াই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতের উদ্যোক্তাদের একমাত্র সমস্যা নয়।

বিআইপিপিএ'র প্রেসিডেন্ট ইমরান বলেন, 'ডলারের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংকে ডলারের স্বল্পতা ও বিদেশি ঋণদাতাদের ও যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীদের প্রাপ্য অর্থ সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় আরোপিত জরিমানা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।'

তিনি উল্লেখ করেন, কিছু এলসি কয়েক মাস আগে ব্যাংকে খোলা হয়েছে, যখন ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা।

তিনি জানান, ডলারের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে এলসি  নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ৯৫ টাকা বা তারচেয়ে বেশি হার ধরে হিসাব করতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, কিছু ব্যাংক সরকারের নির্ধারিত হারে ডলার বিক্রি করতেও রাজি হয় না।

তিনি উল্লেখ করেন, অনেক বিদেশি ব্যাংক আইপিপি পরিচালকদের অর্থ পরিশোধে দেরির কারণে অতিরিক্ত চার্জ নেয়। সম্প্রতি যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীরাও একই চর্চা চালু করেছে।

Comments

The Daily Star  | English

Domestic tourism heats up this winter

The local tourism industry was suffering from apprehension over the loss of business amid a long recession stemming from mass unrest, which began in July

2h ago