বানভাসি শিশুদের জন্য এক শিক্ষকের মহতী উদ্যোগ

আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে পড়া শিশুদের পাঠ দিচ্ছেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। ছবি: স্টার

চারদিকে বন্যার পানি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। পড়ালেখার সুযোগ নেই। খেলাধুলার পরিবেশও নেই কোথাও। এ অবস্থায় মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে পড়া শিশুদের সহায় হয়ে উঠেছেন উপজেলার দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস।

সম্প্রতি সিলেট অঞ্চলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যার কারণে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়। এখানে আশ্রয় নিয়েছে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার ৫৪টি পরিবার। সম্প্রতি আশ্রয়কেন্দ্রে আটকে পড়া এসব পরিবারের শিশুদের পাঠদান শুরু করেছেন শিক্ষক দীপক রঞ্জন দাস। পাঠদানের পাশাপাশি শিশুদের বিনামূল্যে বই-খাতা-কলমের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। এই কাজে তার সহযোগী হয়েছেন একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাসিম আলী।

এই কাজে দীপক রঞ্জন দাসের সহযোগী হয়েছেন একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাসিম আলী। ছবি: স্টার

প্রধান শিক্ষক দীপকের এমন মহতী উদ্যোগ হাসি ফুটিয়েছে অভিভাবকদের মুখে। পাশাপাশি মানসিকভাবে প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে আটকে পড়া শিশুরাও।

জানা যায়, দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে এই পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে গত ২২ জুন থেকে। প্রতিদিন সকাল ১১ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এই কার্যক্রম।

ঈদের তৃতীয় দিন গত মঙ্গলবার দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে শিশুদের ইংরেজি পড়াচ্ছেন দীপক রঞ্জন দাস। ওই কক্ষে থাকা ১৭ শিশু উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় এবং দুটি মাদরাসার শিক্ষার্থী।

দীপক রঞ্জন জানান, এই শিশুদের গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে পাঠদানের দায়িত্ব নিয়েছেন দাসেরবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. হাসিম আলী। তিনি সাধারণত সকালের শিফটে ক্লাস নেন।

ক্লাসের এক শিক্ষার্থী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলে, 'দিনের পর দিন এখানে আটকে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। কিছুই করার ছিল না। পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছিল। এ অবস্থায় দীপক স্যার ক্লাস নিতে শুরু করলে তা আমাদের জন্য দারুন একটি বিষয় হয়ে ওঠে। স্যার তো কেবল পড়ানই না। আমাদের সঙ্গে গল্প করেন। অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। নতুন অনেক কিছু জানতে পারি।'

আশ্রকেন্দ্রে থাকা শিশুদের ২ অভিভাবক শামীম আহমদ ও আবুল হোসেনের ভাষ্য, দিনের পর দিন বন্দি থেকে তারা শিশুদের পড়ালেখার বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু ২ শিক্ষকের এমন চমৎকার একটি উদ্যোগ তাদের দুশ্চিন্তা কিছুটা হলেও লাঘব করেছে। এর ফলে শিশুরা মানসিকভাবেও প্রফুল্ল হয়ে উঠেছে।

আর এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক দীপক রঞ্জনের বক্তব্য হলো, 'আমি দেখলাম শিশুরা দিনের পর দিন এমন বন্দি অবস্থায় কাটালে, তা তাদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এতে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ে। আমি যেহেতু দিনের একটা বড় অংশ বিদ্যালয়েই থাকি, তাই ভাবলাম এখানে আটকে পড়া শিশুদের জন্য কিছু করা যাক। এখন দেখছি এতে শিশু ও অভিভাবক- ২ পক্ষই খুশি।'

Comments

The Daily Star  | English

4 years could be maximum one can go before election: Yunus tells Al Jazeera

Says govt's intention is to hold election as early as possible

27m ago