চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও ছাড়েননি অধ্যক্ষের চেয়ার

শীতল চন্দ্র দে। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শীতল চন্দ্র দে'র চাকরির মেয়াদ ৬০ বছর পূর্ণ হয়েছে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। অবসরে চলে যাওয়ার পর সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াছমিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পরও তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ (গভর্নিং বডি) তাকে আবার ৫ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে বলে জানিয়েছেন শীতল চন্দ্র।

তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন বলছে, অবসরে যাওয়ার পরও শীতল চন্দ্র দে'র প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি নিয়মবহির্ভূত। গভর্নিং বডি তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে চাইলেও সেক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনাপত্তির আদেশের প্রয়োজন হবে। তিনি এমন অনাপত্তি এখনো পাননি।

চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অধ্যক্ষ পদে বহাল থাকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে তদন্তে যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইসমত আরা।

তদন্তে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শীতল চন্দ্র দে'কে নিয়ম অনুযায়ী সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমত আরা।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নিয়ম অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন প্রতিষ্ঠানটির সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিন। তার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরও করেছিলেন অবসরে যাওয়া শীতল চন্দ্র দে। কিন্তু গভর্নিং বডির এক রেজুলেশনে তিনি নিজেকে পুনরায় অধ্যক্ষের পদে রেখে দায়িত্ব পালন করছেন।'

ইসমত আরা আরও বলেন, 'অবসরে যাওয়া কোনো শিক্ষক এই দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। এটি নিয়ম বহির্ভূত। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাকে অবশ্যই সরকারি নির্দেশনা মানতে হবে।'

'শীতল চন্দ্র দে মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন' উল্লেখ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আরও বলেন, 'মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তি না পাওয়া পর্যন্ত শুধু গভর্নিং বডির রেজুলেশনের ভিত্তিতে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।'

তবে তার অধ্যক্ষ পদ না ছাড়ার কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে এই স্কুলে শীতল চন্দ্র দে বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন। এমন অভিযোগ একাধিকবার তার বিরুদ্ধে উঠেছে। কিন্তু গভর্নিং বডির সদস্যরাও এই অনিয়ম, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রতিবারই ছাড় পেয়েছেন। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তাকে স্বপদে বহাল রাখার পেছনের কারণও এই দুর্নীতি ও অনিয়ম চালিয়ে যাওয়া।'

এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমত আরার বিরুদ্ধে 'অসদাচরণের' অভিযোগ তুলে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিবাদ সভা করেছেন শীতল চন্দ্র দে'র অনুসারী কয়েকজন শিক্ষক।

সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমত আরাকে প্রত্যাহার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিলুফার ইয়াসমিনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

তাদের অভিযোগ, গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ইসমত আরা নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে স্কুলে গিয়ে শীতল চন্দ্র দে'কে অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।

শীতল চন্দ্র দে'র পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির সহকারী শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল সাইফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শীতল চন্দ্র দে স্কুলের গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ পেয়েছেন। আমরা তাকেই ওই পদে চাই। এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।'

এ বিষয়ে জানতে গভর্নিং বডির সভাপতি হামিদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শীতল চন্দ্র দে'র অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল থাকার পক্ষে যুক্তি দেন।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'গত ১৫ নভেম্বর গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শীতল চন্দ্র দে কে অধ্যক্ষ হিসেবে ৫ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। স্কুলের উন্নয়ন ও সুন্দরভাবে চালানোর স্বার্থে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এডিসি মহোদয় এসে তাকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে বৈধতা আছে কি না, এমন প্রশ্ন করলে আমরা কাগজপত্র দিয়েছি।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমরা সব নিয়ম মেনেই তাকে নিয়োগ দিয়েছি। এই বিষয়ে আপত্তি থাকলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তর করবে। তারা যদি আবেদন বাতিল করে, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

যোগাযোগ করা হলে শীতল চন্দ্র ডেইলি স্টারকে বলেন, '২০০১ সালে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাই। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হলে সব নিয়ম মেনে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাই। গত ১৪ ডিসেম্বর আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়। পরে গভর্নিং বডি আমাকে পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। গভর্নিং বডি তো আমার ব্যাপারে কোনো আপত্তি দেখাচ্ছে না।'

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh economic growth

GDP growth overstated since 1995

Bangladesh’s economic growth has been overstated since 1995 and the practice of making inflated estimates rose after the fiscal year 2012-13, according to the findings of the white paper panel..It said Bangladesh was seen as one of the fastest-growing economies but its growth became a “par

1h ago