যত দোষ মোটরসাইকেল ঘোষ

একদা বলা হয়েছিল, ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। এখন বলা হচ্ছে, ‘যত দোষ মোটরসাইকেল ঘোষ’। কী দোষ তাদের? বলা হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য তারা দায়ী। যদি সত্যি সত্যিই তারা দায়ী হয়, তাহলে নিয়ম-কানুন কঠোর করার পাশাপাশি তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করলেই তো হয়। এটা যৌক্তিক-ন্যায়সঙ্গত ও নাগরিক অধিকারও বটে। কিন্তু এসবের কিছুতো করা হলোই না,
স্টার ফাইল ছবি

একদা বলা হয়েছিল, 'যত দোষ নন্দ ঘোষ'। এখন বলা হচ্ছে, 'যত দোষ মোটরসাইকেল ঘোষ'। কী দোষ তাদের? বলা হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য তারা দায়ী। যদি সত্যি সত্যিই তারা দায়ী হয়, তাহলে নিয়ম-কানুন কঠোর করার পাশাপাশি তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করলেই তো হয়। এটা যৌক্তিক-ন্যায়সঙ্গত ও নাগরিক অধিকারও বটে। কিন্তু এসবের কিছুতো করা হলোই না, উপরন্তু কেবল দোষ চাপিয়ে নয়, মোটরসাইকেল চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করা হয়েছে। ঈদের আগের  ৩ দিন, ঈদের দিন ও ঈদের পরের ৩ দিন মোট ৭ দিন একজেলা থেকে আরেক জেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং (ভাড়ায় চালিত) বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজন হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। বিষয়টা কতটা যাত্রীঘাতী তা এবারের ঈদযাত্রায় যারা দূরপাল্লায় মহাসড়ক পাড়ি দিয়েছেন, সেটা টের পেয়েছেন হাড়ে হাড়ে। যারা এরকম সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন তারা যে প্রকারান্তরে মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা বোধকরি ঈদের আগের  ৩ দিনের মহাসড়কগুলোর যানজট ও অব্যবস্থাপনায় স্পষ্ট দেখেছেন।

মোটরসাইকেলকে নন্দ ঘোষ বানিয়ে যারা এবারের ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন ও সুন্দর করতে চেয়েছিল। বাস্তবে হয়েছে তার উল্টো। মোটরসাইকেল বন্ধ হওয়ার সুবাদে ঢাকার বাস টার্মিনালগুলোতে যে অরাজকতা, অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য প্রত্যক্ষ করেছে যাত্রীরা-তা স্মরণকালের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মোটরসাইকেল চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাত্রীদেরকে রীতিমতো নরক যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। কোনো সভ্য দেশের, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দ্বিতীয় প্রধান ধর্মোৎসবের সময় যাতায়াত ব্যবস্থা এতোটা নাজুক ও অব্যবস্থাপনার সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি হয়ে উঠতে পারে তা বোধ করি কল্পনা করাও দুরূহ। বাস্তবতা হলো, এবারের ঈদে দুরূহ কল্পনার বিষয়টাই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে ঈদযাত্রায় নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষেরা।

স্মরণকালের ভয়াবহতম যানজটের মুখোমুখি হতে হয়েছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীদের, ঢাকা-গাজীপুর রুটের ময়মনসিংহগামী যাত্রীদের, ঢাকা-মানিকগঞ্চ রুটের পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ ঘাটের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটা অংশের যাত্রীদের। ঈদের আগের  ৩ দিন ঘরে ফেরা মানু্ষদের  ৩ ঘণ্টার পথ ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হয়েছে। শিশু-নারী ও বৃদ্ধদের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। যারা শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান তারাও অসুস্থ হয়ে পড়েন দীর্ঘ সময়ের অচলাবস্থার খপ্পরে পড়ে।

উৎসবের আনন্দের ষোল আনার বারো আনা ফিকে হয়ে গেছে যন্ত্রণাদায়ক যানজট ও মহাসড়কগুলোর অব্যবস্থাপনায়। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা, তা ফুটে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া কয়েকজনের স্ট্যাটাসে।

১. সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া শুক্রবার সকাল ৯টায় দেওয়া স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, 'দেড় কিলোমিটার রাস্তা পার হলাম ৩ ঘণ্টায়, হ্যাপি ঈদ জার্নি'। উনি হয়তো তখনও বুঝে উঠতে পারেননি আরও কত ভোগান্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য। অবশ্য ১২ ঘণ্টা পর তিনি জানিয়েছেন সেই উপলব্ধির কথা। লিখেছেন, 'ঢাকা থেকে মধুপুর ১২৯ কিলোমিটার পেরুতে সড়কপথে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় লাগল। হ্যাপি ঈদ মোবারক।

২. সাংবাদিক লাবণ্য লিপি বৃহস্পতিবার এক স্ট্যাটাসে ঈদযাত্রার অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন। লিখেছেন, 'গরু আর মানুষের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য নেই! যে ট্রাকগুলো গরু এনেছিল ২০টা, সেখানে মানুষ নিয়ে যাচ্ছে হয়েতো ৫০ জন। পার্থক্য এটুকুই! গাবতলী থেকে সাভার পর্যন্ত অসংখ্য মানুষ রাস্তায় বসে আছে গাড়ির জন্য। আমিও দুটো টিকিট কিনেছি ডাবল দামে। অনেক দুর্ভোগের পর গাড়িতে উঠেছি। ঠাকুরগাঁও যাচ্ছি। প্রচণ্ড যানজট। কখন পৌঁছাব আল্লাহ জানেন। আচ্ছা কোনোদিন কি এমন হবে, আমরা কষ্টের টাকা দিয়ে আরও একটু সহজ-মানসম্পন্ন জীবন যাপন করব! এটা কি খুব বেশি চাওয়া? লাবণ্য লিপির আরেকটি স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, '২৩ ঘণ্টা জার্নি করে দুপুর ২টায় বাড়ি এসেছি। আমার দুই পা অনেকটাই ফুলে গেছে।'

৩. ঢাকা থেকে কুড়িগ্রাম এক যাত্রী জানিয়েছেন যানজটে পড়ে ইতোপূর্বে তিনি ২৩ ঘণ্টায় পৌঁছেছিলেন গন্তব্যে। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে গেল।

৪. কুষ্টিয়াগামী এক যাত্রী বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে না গিয়ে রাজবাড়ি হয়ে গেছেন। সময় লেগেছে ১৬ ঘণ্টার বেশি। শুধুমাত্র পদ্মা সেতু হয়ে যারা এবারের ঈদ যাত্রা সম্পন্ন করে চলেছেন তারাই ছিলেন স্বস্তিতে, বাকীদের অবস্থা সত্যিই করুণ।

৫. অনিক রহিম ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখছেন, 'ঈদ যাত্রা। ঢাকা থেকে রংপুর। শুরু গতকাল (০৭.০৭.২০২২) রাত ১০টা। ইতিমধ্যে ২৩ ঘণ্টা পেরিয়েছে। এখনো গোবিন্দগঞ্জ। অপেক্ষার প্রহর চলছে।'

৬. সাংবাদিক রণজিৎ সরকার লিখেছেন, 'ভোর হলো দোর খোলো খুকুমণি ওঠো রে!/ ঐ ডাকে যুঁইশাখে ফুল-খুকি ছোট রে!/ খুকুমণি ওঠো রে! …

শুভসকাল বঙ্গবন্ধু সেতু (১৫ ঘণ্টায় কল্যাণপুর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু)।

৭. লেখক ও বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকর্তা সাইফুল আজম লিখেছেন, '৭ জুলাই বেলা ২টা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে এলেঙ্গা, টাঙ্গাইল, ৮ জুলাই, সময় সকাল ৭টা, মাত্র ১৭ ঘণ্টা! টঙ্গী চেরাগ আলী থেকে কালিয়াকৈর এর মাঝে শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীল কাউকে নজরে পড়েনি!'

৮. সাংবাদিক আসাদুজ্জামান শনিবার সকাল ৭টায় ঈদ যাত্রার অভিজ্ঞতা দুটো স্ট্যাটাসে জানান দিয়েছেন এভাবে, এক. 'নিকৃষ্টতম যাত্রা!! ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক।' দুই, 'দীর্ঘ ৪/৫ ঘণ্টা জ্যামের পর গাড়ির চাকা ঘুরতে দেখে, যাত্রীদের চোখে মুখে সে কি উচ্ছ্বাস!'

৯. সাংবাদিক আরিফুন নেছা সুখী শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় লিখেছেন, 'কয় তারিখ থেকে কয় তারিখ যেন কোন কোন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে! আজ কি সেই তারিখ আর এগুলো কি সেইসব যান? টাংগাইল কে মনে হচ্ছে পুরো বাংলাদেশের সমান। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা একই জায়গায়... আর কতক্ষণ থাকতে হবে আল্লাহ জানেন... রাস্তার কোথাও চোখে পড়েনি কোনো পুলিশ। ছুটি শুরু, সো ঈদ মোবারক।

সুতরাং, যারা মনে করেছিলেন, মোটরসাইকেল চালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেই ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ হবে তাদের সেই ভাবনাটা যথার্থ নয়, তা স্পষ্ট হয়েছে। হ্যাঁ আমরা স্বীকার করি, মোটরসাইকেলের কারণে মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে, জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫২৪ জন। ২০৪ জন মারা গেছে ১৯৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।

এইসব পরিসংখ্যান জানার পরও সত্যের খাতিরে বলতে হয় মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ কোনো সমাধান নয়, যৌক্তিকও নয়। যেমন যৌক্তিক নয় মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার নীতি। মাথা ব্যথা হলে তার চিকিৎসা করানোই যৌক্তিক এবং সেটাই বিজ্ঞানসম্মত ও সভ্য হয়ে ওঠার মাপকাঠি।

মোটরসাইকেলের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে সেটা কীভাবে বন্ধ করা যায় সেটাই হওয়া উচিৎ আলোচনার বিষয়। কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে সেই আলোকে। পৃথিবীর কোনো দেশে মোটরসাইকেল চালনার ক্ষেত্রে আলটপকা নিষেধাজ্ঞা আরোপের এরকম নজির নেই। চীনও মোটরসাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে নানা ধরণের নিয়ম-নীতি প্রয়োগ ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে এসেছে। মালয়েশিয়াতেও একই ঘটনা ঘটেছে। এরা মহাসড়কে মোটরসাইকেলের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করেছে। অথচ আমরা মোটরসাইকেল চালনার ক্ষেত্রে এসবের কিছুই না করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলাম। এর পেছনে অন্য কোনো দুরভিসন্ধি আছে কি না সেটাও তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে পারার ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্যই কি তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথ বেছে নেওয়া হলো? নাকি মোটরসাইকেল চালকদের সমিতি, ফেডারেশন, ইউনিয়ন নাই বলে এবং তাদেরকে রক্ষা করার জন্য সরকারের কাছের লোকজন অনুপস্থিত থাকায় তাদেরকে নন্দ ঘোষ বানিয়ে অন্যদের পোয়াবারো করা হলো। অবস্থাদৃষ্টে তো সেটাই মনে হচ্ছে।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রীতিমতো ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই বেদনাবিধুর এই অধ্যায় সংঘটিত হচ্ছে। তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরের হত্যাকারী বাসের চালকের আজও শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। বরং এদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই দেশ অচল করার হুংকার ছোঁড়া হয়, বাস্তবেও সেটাই করা হয়। সরকারের ভেতরে থেকেও সরকারের কোনো কোনো সিদ্ধান্তকে কীভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয় এবং পরিবর্তন করে দেওয়া হয় আমাদের সেই অভিজ্ঞতাও আছে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কোনো প্রকার যুক্তি-তর্ক ছাড়াই নন্দ ঘোষ বানিয়ে দেওয়া হলো মোটরসাইকেলকে।

মোটরসাইকেল যদি এতোই নন্দ ঘোষ হয় তাহলে তার রেজিস্ট্রেশনের সময় কেনো এ ব্যাপারে সুবিবেচনাপ্রসূত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো না? ভিমড়ি খাওয়ার যোগাড় হলেও এটাই সত্য যে, শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকায় ৫ বছরে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৫ লাখ। বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা যায়, রাজধানী ঢাকায় রেজিস্ট্রেশন করা মোটরসাইকেলের সংখ্যা ৯ লাখ ৬১ হাজার ২১২টি। সারা দেশের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ১৩৮টি।

ঈদের আগে আগে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কতো লাখ মানুষের কর্মসংস্থানে যে তালা দিয়ে দেওয়া হলো, কর্তাব্যক্তিরা কি ভেবে দেখার ফুরসত পেয়েছেন? অথচ ওদেরতো পরিবার আছে, ওদের জীবনেও তো ঈদের আনন্দের দরকার আছে? এই ঈদ তাদের জীবনে-পরিবারে কোনো খুশী নিয়ে এলো?

মোটরসাইকেল বন্ধ থাকার পরও কিন্তু সারা দেশে বেশ কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যদি মনে করা হয়, একমাত্র কারণ মোটরসাইকেল তাহলে সেটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। ভাষাচিত্র প্রকাশনীর কর্ণধার খন্দকার সোহেল তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, 'যারা নিজেরা মরে/ তাদের করা হলো ঘরবন্দী/ যারা অন্যকে মারে/ রাস্তায় তারা আঁটছে নানান ফন্দি।' ফ্যাক্ট : মোটরসাইকেল বনাম বাস।

গত ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রার কথা মনে আছে নিশ্চয়। ওই ঈদযাত্রা ছিল স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে নির্বিঘ্নে ঘরে ফেরার উৎসব। সেইসময় অনেকেই অনেক রকমের বাহাদুরি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আসল জায়গায় চোখ রাখেননি কেউ। এই আসল জায়গাটি হলো মোটরসাইকেল। গত ঈদে শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের কারণে বাস মালিক-শ্রমিক-কর্মচারীরা তাদের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনাকে জাঁকিয়ে বসাতে পারেননি। বাস মালিক শ্রমিক কর্মচারীদের নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দিতেই কি এবার তড়িঘড়ি করে মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলো? লেজ টানলে যেমন মাথা আসে, তেমনি বিবিধ কারণতো ওদিকেই আঙ্গুল তুলছে। ঈদুল ফিতরের অভিজ্ঞতায় হওয়া উচিৎ ছিল মোটরসাইকেল চালনাকে উৎসাহিত করা-কিন্তু কঠোর নিয়ম বেঁধে দেওয়া এবং সেই নিয়ম যেন যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হয় তার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করা। কিন্তু সেসবের কিছুই করা হয়নি। চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন এক সিদ্ধান্ত যা অসাধুদের পকেট ভারী করেছে আর ঈদযাত্রীদের হয়রানি ও যন্ত্রণার কারণ হয়েছে।

ঈদ আসে ঈদ চলে যায়, মহাসড়কের যাত্রী হয়রানী ও ভোগান্তি বন্ধ হয় না, ব্যতিক্রম শুধু গত ঈদুল ফিতর। কোনোকিছুই বন্ধ করার মধ্যে কোনোপ্রকার বাহাদুরি নেই। বাহাদুরি হলো অচলায়তন দূর করা এবং নিয়মের আওতায় নিয়ে আসা এবং তদারকি ব্যবস্থাকে আধুনিক-মানসম্পন্ন-মানুষবান্ধব ও ত্রুটিমুক্ত করা। মোটরসাইকেলকে শুধু শুধু নন্দ ঘোষ বানানো কোনো কাজের কথা নয়।

দুঃখের সঙ্গেই বলতে হয় আমাদের দেশে পরিবহন ব্যবস্থা এখনও উৎসব বান্ধব হয়ে ওঠেনি। রেল যোগাযোগের চিত্র বড়ই করুণ। টিকিট সংগ্রহ নিয়ে প্রতি ঈদে যে দৃশ্যের অবতারণা হয় তা সংশ্লিষ্টদের জন্য লজ্জার কারণ হলেও-সেই লজ্জা দূর করার চেষ্টা দেখা যায় না কখনোই। উৎসবে পৃথিবীর দেশে দেশে টিকিটের মূল্য কমিয়ে আনা হয়। আর আমাদের দেশে দ্বিগুণ-তিনগুণ-চারগুণ এমনকি পাঁচগুণ হওয়ারও ঘটনা ঘটে। এটা সবার সামনে ঘটলেও এসব দূর করার দায়িত্ব যাদের ওপর রয়েছে তাদের চোখে পড়ে না কখনোই। ফলে, অচলায়তনের বিষবৃক্ষ মহীরুহে পরিণত হচ্ছে। আর বেচারা মোটরসাইকেলকে হতে হচ্ছে একালের নন্দ ঘোষ।

কাজল রশীদ শাহীন: সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক।

kazal123rashid@gmail.com

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Chhatra League banned

The interim government last night banned Bangladesh Chhatra League amid demands from the student movement against discrimination.

5h ago