‘আফাল’ আতঙ্কে বানভাসিরা
বন্যায় বাড়িঘর প্লাবিত। একমাস ধরে ২ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে নূরজাহান বেগম থাকছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ভূকশিমইল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আশ্রয়কেন্দ্রে। তাদের বাড়ি ওই এলাকার মদনগৌরী গ্রামে।
'বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। কবে পানি নামবে, আর কবে বাড়িতে ফিরব, তা এখনো অনিশ্চিত। রাতে ঘুম আসে না। মনে হয় আফালে (ঢেউ) বাড়িটি ভেঙে যাচ্ছে। এখন আমাদের বড় আতঙ্ক আফাল নিয়ে', দ্য ডেইলি স্টারকে বলছিলেন নূরজাহান বেগম।
ঈদ কেমন কেটেছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এবারের কোরবানি ঈদ আমাদের জন্য না। আমরা এখন যেভাবে দিন কাটাচ্ছি, সে পরিস্থিতিতে থেকে আনন্দ উদযাপন হয়?'
কুলাউড়া সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হাসান সিপন বলেন, 'কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনেক মানুষ বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। বন্যার পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে অনেকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
'পানি কমে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর কীভাবে সংস্কার করবেন, এমন দুশ্চিন্তায়ও আছেন অনেকে। পানি কমছে না। প্রতিদিন আফালের আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তায় অপেক্ষার প্রহর কাটছে বানভাসি মানুষের। আকাশ মেঘলা হলেই সেই আতঙ্ক আর দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়', বলেন তিনি।
উপজেলার হাওর তীরবর্তী কুলাউড়া উপজেলার ভূকশিমইল এলাকার বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে সেখানে থাকা বানভাসিরা তাদের দুর্দশার কথা জানান। দীর্ঘ ৩ দশক পরে এমন দীর্ঘ সময় পানিবন্দি উপজেলার লাখো মানুষ। গত ১৭ জুন থেকে হাওর তীরবর্তী এলাকাসহ ৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ড পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়।
বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রের জাহাঙ্গীর আলী বলেন, '২ থেকে ৩ দিন ধরে পানি একটু কমলে আবার বৃষ্টি শুরু হলে তখন আতঙ্কে থাকি আফালের ভয়ে। ঘরের ভেতর সবকিছু প্রায় পানির নিচে। দিনে নৌকা দিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখে আসি। রাতে যেতে পারি না। ঘরের মালামাল চুরি ও নষ্ট হয়ে গেলে কীভাবে কী করব এই চিন্তায় কাটছে।'
সাদেকপুর এলাকার মাহবুব আহমদ বলেন, '২০০৪ সালের পর এই প্রথম আমাদের এলাকায় শুধু রাস্তাঘাট নয়, অধিকাংশ বাসার নিচ তলায় পানি ঢুকেছে। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পানি কমেনি। উল্টো বৃষ্টি হলে পানি বাড়ছে। অনেকে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ নিরুপায় হয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। পৌর এলাকায় এরকম দীর্ঘ বন্যা আগে কখনো হয়নি।'
টিটিডিসি এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক মিফতা বলেন, 'ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করলেও অনেকেই চুরির ভয়ে বাসা ছেড়ে যাচ্ছেন না। সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়েও জলাবদ্ধ ঘরে থাকছেন।'
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি অব্যাহতভাবে আশ্রয়কেন্দ্র ও বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছি। প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনসহ সব ধরনের সহায়তায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন করবে।'
Comments