‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাইনি বলে আফসোস নেই’

শর্মিলী আহমেদ। ছবি: শেখ মেহেদি মোর্শেদ/স্টার

মঞ্চ, টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার গুণী অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। টেলিভিশনের প্রথম ধারাবাহিক নাটকের অভিনেত্রী তিনি। ৫ দশকেরও বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন সুনামের সঙ্গে। সিনেমায় অভিনয় করেও খ্যাতি অর্জন করেছেন।

আজ শুক্রবার সকালে মারা গেছেন খ্যাতিমান অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ। মে'র প্রথম সপ্তাহে দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অভিনয় জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টার: অভিনয়ে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আপনার পথচলা। শুরুর সময় পরিবার থেকে কি কোনো বাধা এসেছিল?

শর্মিলী আহমেদ: শিল্পচর্চার জন্য পরিবার থেকে কোনো বাধা আসেনি। অভিনয়ের বিষয়ে আমার পরিবার সব সময় সহযোগিতা করেছে। বাধা কী, তা টেরই পাইনি। বাধা আসেনি বলেই সেই সময়ে অভিনয়ে আসা সম্ভব ছিল। অভিনয়ের হাতেখড়ি আমার বাবার কাছে। মা সেতার বাজাতেন। কিন্তু ঘরের বাইরে বাজাতে পারতেন না। বাবা ও চাচারা শিল্পচর্চা করতেন। আমরা সব ভাইবোনরা এই শিল্পচর্চা করেছি। মা সেই আমলে গল্প উপন্যাস পড়তেন। মা চাইতেন আমরা কিছু করি। তবে, পড়ালেখাটা চালিয়ে তারপর করতে বলতেন। এমন শিল্পমনা পরিবারে জন্মে আমি ধন্য।

শর্মিলী আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ডেইলি স্টার: ৭৫ বছরের জীবন আপনার। এখনো অভিনয় করছেন। এটা কীভাবে সম্ভব?

শর্মিলী আহমেদ: ইচ্ছাশক্তির কারণেই সম্ভব। আমি মনে করি, মনের জোর ও ইচ্ছাশক্তি থাকলে কাজ করা সম্ভব। আমি কখনো ক্লান্ত বোধ করি না। কখনো থেমে যাই না। অভিনয় আমার সারাজীবনের সাধনা। এদেশের এত এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, তা তো অভিনয় করি বলেই। ভেতর থেকে শক্তিটা পাই। মনের মধ্যে জোর পাই ভেতর থেকে। তাই তো এখনো অভিনয় করতে পারছি।

ডেইলি স্টার: দীর্ঘদিন ধরে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন, কেমন লাগে?

শর্মিলী আহমেদ: শোবিজ জগতের এত এত শিল্পী আমাকে মা ডাকেন, কী বলব? মাঝেমাঝে ভাবি, আমি ভীষণ ভাগ্যবতী। এত মানুষ আমাকে মা ডাকেন, সত্যিই নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে করি। কতজন পারে এটা? আমি পেরেছি। সবাই আমাকে মায়ের চোখে দেখে। এটা তো বিরাট পাওয়া আমার জন্য। দেখুন, শুটিংয়ে গিয়ে ফিরে আসব, দেখি আমার কাপড় গুছিয়ে দিয়েছেন শিল্পীরা। আমার জন্য খাবার নিয়ে আসেন শিল্পীরা। সবাই মা হিসেবে সম্বোধন করেন। এই সম্মান তো সবাই পায় না। ভীষণ ভালো লাগে। আনন্দে চোখ ভিজে আসে। শিল্পীরা আমার আরেকটি পরিবার।

ডেইলি স্টার: অভিনয় আপনার কাছে কী?

শর্মিলী আহমেদ: অভিনয় আমার কাছে সবকিছু। সবচেয়ে ভালোবাসার জায়গা হচ্ছে অভিনয়। অভিনয় আমার কাছে সাধনা। অভিনয় আমার রক্তে মিশে আছে। অভিনয়ই আমার ধ্যান-জ্ঞান।

শর্মিলী আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ডেইলি স্টার: একজন শিল্পী হিসেবে কি কোনো কষ্ট কাজ করে?

শর্মিলী আহমেদ: যখন ভাবি চেনা-জানা অনেক শিল্পী আজ বেঁচে নেই, তখন কষ্ট লাগে। কত চেনা মুখকে হারিয়েছি। তাদের কথা ভাবতেই খারাপ লাগে, কষ্ট পাই, চোখে পানি আসে। কয়েক মাস আগে মাহমুদ সাজ্জাদ চলে গেলেন। কত স্মৃতি তার সঙ্গে। ৩ বছর মাহমুদ সাজ্জাদের সঙ্গে 'তুমি আছ তাই' নামে একটি সিরিয়ালে টানা অভিনয় করেছি। কেএস ফিরোজকে হারিয়েছি গত বছর। টানা ৯ বছর তার সঙ্গে 'ও আমার চক্ষু নাই' নামে একটি নাটকে অভিনয় করেছি। এভাবে কতজনকে হারিয়েছি। নায়ক রাজ্জাককে হারিয়েছি। তাদের কথা মনে পড়লে কষ্ট পাই। ভীষণ খারাপ লাগে।

ডেইলি স্টার: বেশ কিছু আলোচিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন। কখনো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি, আফসোস কাজ করে না?

শর্মিলী আহমেদ: না। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাইনি বলে কোনো আফসোস নেই। আমি ওসব নিয়ে ভাবি না। মানুষের ভালোবাসা আমার কাছে বড় পুরস্কার। এখনো কোথাও গেলে মানুষ যতটা সম্মান করেন, দাঁড়িয়ে যান, চেয়ার ছেড়ে দেন, এসব সম্মান কোথায় পাব? বহু মানুষ আমাকে ভালোবাসেন শিল্পী হিসেবে। এটাই আমার বড় অর্জন। কাজেই আফসোস করি না। যা পাইনি, তা নিয়ে ভাবি না। একটা পুরস্কার বাসায় এনে সাজিয়ে রাখা যায়। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা জনম জনম থাকে। এটাই বড় অর্জন।

Comments

The Daily Star  | English
British Bangladeshi Labour Party lawmaker and  minister Tulip Siddiq

Tulip seeks meeting with Yunus over corruption allegations, Guardian reports

Tulip, in a letter to the chief adviser, asked for a chance to discuss the ongoing controversy during his trip to London

1h ago