লোডশেডিং করতেই হবে, উৎপাদনও সীমিত রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

pm2_6jul22.jpg
ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে দিয়েছি এটা ঠিক। বর্তমানে কিন্তু আমাদের লোডশেডিং করতেই হবে এবং উৎপাদনও আমাদের সীমিত রাখতে হবে। যাতে আমাদের এই ভর্তুকিটা না দিতে হয়।

আজ বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর' এবং 'শেখ জামাল ডরমেটরি ও রোজী জামাল ডরমেটরি'র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কল্যাণে যা যা করার সেই ব্যবস্থাটাই আমরা করছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন আমরা বাড়িয়েছি এবং আমরা বাংলাদেশে প্রত্যেকটা ঘরে বিদ্যুৎ দিতে সক্ষম হয়েছি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং আমেরিকা ও ইউরোপের স্যাংশনের কারণে ফলাফলটা এই দাঁড়িয়েছে, তেলের দাম-ডিজেলের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) দাম বেড়ে গেছে। সব কিছুর দাম এমনভাবে বেড়ে গেছে যে এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালিয়ে রাখা আমাদের নিজস্ব যেটুকু গ্যাস আছে...তাছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালিয়ে রাখাটা একটা কষ্টকর ব্যাপার হয়ে গেছে। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে গেছে।

তিনি জানান, ফার্নেস অয়েলের দাম ছিল মাত্র ৭০৮ টাকা সেটা ইউক্রেনের যুদ্ধের পর হয়ে গেছে ১ হাজার ৮০ টাকা। অর্থাৎ ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এলএনজি এমএমবিটিইউ ১০ মার্কিন ডলারে কেনা হতো সেটা এখন ৩৮ মার্কিন ডলার। প্রায় ২৮০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে। কয়লা ১৮৭ মার্কিন ডলার ছিল, সেটা এখন ২৭৮ মার্কিন ডলার। ৬১ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজেলের লিটার ছিল ৮০ মর্কিন ডলার, সেটা এখন ১৩০-এ চলে এসেছে। শোনা যাচ্ছে এটা নাকি ৩০০ ডলার পর্যন্ত দাম বাড়তে পারে। অর্থাৎ এখন একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে সারা বিশ্বই যাচ্ছে। আমরা অনেক নির্ভরশীল ডিজেলের ওপর, ইতোমধ্যে ২৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিনিয়ত বাড়ছে।

এই স্যাংশনটা যদি না হতো তাহলে কিন্তু রাশিয়া থেকে ইউক্রেন থেকে; তারা যুদ্ধও করতো আবার তাদের তেল, ফার্টিলাইজার, গম সাপ্লাইটাও ঠিক থাকতো। যদিও জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের উদ্যোগে আলোচনা করে খাদ্যটা, যেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ—খাদ্য ও ফার্টিলাইজারটা যাতে তারা আসতে দেয়, এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্যাংশনের কারণে এবং সুইফট বন্ধ করার কারণে আমরা ডলার দিয়ে রাশিয়া থেকে, ইউক্রেন থেকে জিনিস কিনতে পারছি না। কাজে ফিন্যানশিয়াল মেকানিজম যে কী হবে এটার প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারেনি। ইউরোপের খুবই দুরাবস্থা, যদিও তারা রুবল দিয়ে কিনে নিচ্ছে। বাংলাদেশের সে ব্যাপারে খুব সীমিত সুযোগ আছে। তবু আমাদের প্রচেষ্টা আছে, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি—বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, তবে বিদ্যুৎ আমরা সবার ঘরে দিয়েছি এটা ঠিক। বর্তমানে কিন্তু আমাদের লোডশেডিং করতেই হবে এবং উৎপাদনও আমাদের সীমিত রাখতে হবে। যাতে আমাদের এই ভর্তুকিটা না দিতে হয়। বিদ্যুতে মোট ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। আর যে এলএনজি আমদানি করছি গ্যাসের চাহিদা পূরণের জন্য, আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র বা ইন্ডাস্ট্রি চালিয়ে রাখার জন্য সেখানে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। প্রতি কিউবিক মিটার এলএনজি কেনায় সরকারের ব্যয় হয় ৫৯ দশমিক ৬০ টাকা কিন্তু আমরা সেটা বিক্রি করছিলাম, গ্রাহকদের কাছে দিচ্ছিলাম মাত্র ৯ দশমিক ৬৯ টাকায়। যেটা সম্প্রতি ১১ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তারপরও বিশাল অংকে ভর্তুকি রয়ে গেছে সেখানে। রিনিউবল জ্বলানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটের উৎপাদন ব্যয় পড়ে ১২ দশমিক ৮৪ কিলোওয়াট ঘণ্টা কিন্তু একক প্রতি পাইকারি মূল্য দিচ্ছি ৫ দশমিক ০৮ টাকায়। ফার্নেস অয়েল প্রতি একক উৎপাদন ব্যয় হচ্ছে ১৭ দশমিক ৪১ টাকা, সেখানেও আমরা ৫ দশমিক ০৮ টাকায় দিচ্ছি; সেখানওে ভর্তুকি। ডিজেল প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৩৬ দশমিক ৮৫ টাকা, সেখানেও আমরা ৫ দশমিক ০৮ টাকায় বিদ্যুৎ বিক্রি করছি। কয়লা থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় সেটা ১২ দশমিক ৩৭ টাকা, দেওয়া হচ্ছে মাত্র ৫ দশমিক ০৮ টাকায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যে একটা বিশাল অংক আমরা ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি ভর্তুকি কতক্ষণ আমরা দিতে পারবো? কারণ আমাদের মানুষের খাদ্য দিতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। গৃহহীনদের ঘর দিতে হবে। তাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের নজর দিতে হবে। আমরা কৃষিতে ভর্তুকি দিচ্ছি। এবারের বাজেটেও প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি দিতে হবে। আমরা যদি ভর্তুকি না কমাই, সরকারের টাকা আসবে কোত্থেকে? যুদ্ধের কারণে আমাদের না, বিদেশেও সব কিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে যেগুলো আমাদের কিনে আনতে হয়। ভোজ্য তেলও কিনে আনতে হচ্ছে। সে কারণে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি, প্রত্যেকের নিজের সঞ্চয়টা বাড়াতে হবে, খরচের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হবে এবং যতটুকু পারা যায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে হবে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। আমাদের এখন একটাই উপায়, ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি কখন কোন এলাকায় কত ঘণ্টা লোড শেডিং হবে সেটার একটা রুটিন তৈরি করে সেভাবে লোড শেডিং করতে যেন মানুষ সেভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে। মানুষের কষ্টটা যেন আমরা লাঘব করতে পারি। সে বিষয়টাই আমাদের এখন নজর দিতে হবে। আমি আশা করি, দেশবাসী আমাদের এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন।

তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আজকে আমাদের যে উদ্যোগটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিশু থেকে শুরু করে সবাইকে আমরা যে শিক্ষাটা আমরা দিচ্ছি তার ফলাফল দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাবে। সেটাই আমরা চাই আর সেভাবেই আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি কাজ করতে। এ ক্ষেত্রেও সবার সহযোগিতা আমরা কামনা করি। আগের মতো আবার ওই যে সেবার যা যা করে গেলাম, সরকার পরিবর্তন হলো, সব বাতিল; সেটা যাতে না হয়, এটার ধারাবাহিকতা থাকে সেটাও আপনারা দেখবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Power, Energy Sector: Arrears, subsidies weighing down govt

The interim government is struggling to pay the power bill arrears that were caused largely by “unfair” contracts signed between the previous administration and power producers, and rising international fuel prices.

9h ago