হোটেলের স্টার রেটিং সিস্টেমের খুঁটিনাটি

মালেশিয়ার কুয়ালামপুরের পাঁচ তারকা হোটেল বানয়ান ট্রি। ছবি: সংগৃহীত

ভ্রমণে যাওয়ার আগে কোথায় ঘুরতে যাবো সেটা ঠিক করার পরই আমরা কোথায় থাকবো এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যাই। কারণ সারাদিন ঘোরাঘুরি শেষে যদি সুন্দর একটা ঘুমই নাহয়, ভ্রমণের প্রশান্তিই তো আর পাবো না। কিন্তু থাকার জন্য হোটেল বুকিং দিতে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাটি করে অনেক সময়ই আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। 

অনেকেই হোটেলের এসব থ্রি স্টার/ফোর স্টার সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। হোটেলভেদে একটি মাত্র স্টার বা তারকার ব্যবধানে কেনই বা সেগুলোর একরাতের খরচের বিরাট ফারাক হয় তা জানেন না। 

তিন, চার কিংবা পাঁচ তারকা হোটেলগুলো কেমন হয় বা কী কী বিষয়ের ওপর নির্ভর করে হোটেলগুলোর এই স্টার নির্বাচন করা হয় সে বিষয়টা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাহলেই কেবল প্রয়োজন অনুযায়ী হোটেল নির্বাচন করতে পারবেন সাধ্যের মধ্যেই।

কিছুটা হতাশাজনক হলেও সত্যি যে সমগ্র বিশ্বে এককভাবে কোনো স্টার নির্ধারক কমিটি বা সংস্থা নেই। তাই৷ বিভিন্ন দেশ বিভিন্নভাবেই তাদের স্টারগুলো নির্ধারণ করে থাকেন। অফিসিয়াল এবং আনঅফিসিয়াল দুভাবেই হোটেলের স্টারগুলো নির্ধারণ হতে পারে। আপনি হোটেল নির্ধারণ করার আগে কীভাবে সেই হোটেলের স্টার নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি জেনে নিবেন। এতে করে হোটেলের মান সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। ১৯৫০ সালে ফোর্বস ট্রাভেল গাইড সর্বপ্রথম এই হোটেল স্টার সিস্টেম পদ্ধতি চালু করেন। এখনো যুক্তরাষ্ট্রে  ট্রিপল এ এর পাশাপাশি ফোর্বস এই স্টার সিস্টেম এর বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান। সেরকম যুক্তরাজ্যেও রয়েছে ভিজিট ব্রিটেন ও ভিজিট স্কটল্যান্ড এর মতো প্রতিষ্ঠান। 

এগুলো বাদেও বিভিন্ন দেশের বড় ট্রাভেল গাইড ও বুকিং ওয়েবসাইটগুলোর ও নিজস্ব রেটিং সিস্টেম রয়েছে। সেগুলো দিন দিন বেশ প্রচলিত হচ্ছে কেননা সেখানে গ্রাহক নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিডব্যাক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে স্টার অনুযায়ী হোটেলগুলোর ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। তাই হোটেল নির্ধারণের পূর্বেই বিষয়গুলো জেনে নিতে হবে। 

তবে সর্বোপরি এই স্টার রেটিং সিস্টেম অনুযায়ী ভরসা করলেই চলবে না। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এক দেশের ফাইভ স্টার হোটেল অন্য দেশের থ্রি স্টার হোটেলের সমতূল্যও হয়ে যেতে পারে। যেমন- সংযুক্ত আরব আমিরাত কিংবা মরোক্কোর বিভিন্ন হোটেলই তাদের নিজস্ব স্কেলে সিক্স কিংবা সেভেন স্টার বলে গণনা করে। সেদিকে থাইল্যান্ডের বিভিন্ন ঐতিহাসিক হোটেলগুলো ফাইভ স্টার হোটেল হলেও সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কিংবা অস্ট্রেলিয়ার অনেক ফাইভ স্টার হোটেলগুলোর চেয়ে কম বিলাসবহুল। তাই স্থানভেদে এই রেটিং সিস্টেমের পার্থক্যও থাকে। 

গেমরুম, বিলাসবহুল সুইমিং পুল, আকর্ষণীয় হল রুম সুবিধাসহ এই স্টার সিস্টেম দেশ ভেদে বিভিন্ন হয়। তবুও মোটা দাগে এই স্টার রেটিং সিস্টেমগুলোতে ওয়ান স্টার থেকে ফাইভ স্টার পর্যন্ত হোটেলগুলো আসলে কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা নির্দেশ করে সেগুলো কিছুটা হলেও এ বিষয়ে ধারণা দেবে।

ওয়ান স্টার বা একতারকা হোটেল

এই ধরনের হোটেলে খরচ অনেক কম হয়ে থাকে বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ ও একদম মূল সুবিধাগুলোই কেবল দিয়ে থাকে এই ওয়ানস্টার হোটেলগুলোতে। অর্থাৎ ঘুমানোর জন্য একটা বেড আর হয়ত খুব বেশি হলে একটা সাইড টেবল। ছোট সাইজের একটা রুম সেখানে কোনো সোফা বা চেয়ারের সুবিধা সাধারণত থাকেনা।  এই হোটেলগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই ম্যানেজমেন্ট খোলা থাকে না। আবার রেগুলার স্টাফ বা ক্লিনিং সিস্টেম ও নেই ওয়ানস্টার হোটেলগুলোতে। সাধারণত টেলিফোন সিস্টেম বা সুবিধা থাকে না।

টু স্টার বা দুই তারকা হোটেল

ওয়ান স্টার থেকে কিছুটা উন্নতধরনের হয় এই হোটেলগুলো। সেখানে তোয়ালে বা পরিষ্কার একটা রুমের সুবিধা আপনি পাবেন। হোটেলে টেলিফোন ও টেলিভিশন থাকে তবে বেশিরভাগ সময় সেগুলো অনেক পুরানো এবং নষ্ট থাকে। বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করার ফলে ওয়াশরুমেও আপনি তেমন বিলাসবহুল কিছু থাকেনা। কেবল মূল সুবিধাগুলো পাওয়া যাবে এই হোটেলগুলোতে। তবে এই হোটেলগুলোর ম্যানেজমেন্ট ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে। এমনকি ক্লিনিং সিস্টেমটাও মোটামুটি চলনসই।

থ্রি স্টার বা তিন তারকা হোটেল

এই হোটেলগুলো খুব সস্তা কিংবা ব্যয়বহুল নয়। একেবারেই মাধ্যম মানের এই হোটেলগুলোর রুমে পর্যাপ্ত জায়গা থাকার পাশাপাশি এসি, ও ভালো আসবাবপত্র থাকে। সেইসঙ্গে থাকে টিভি ও অন্যান্য সুবিধা। আধুনিক বাথরুম থাকলেও থ্রি স্টার হোটেলে সাধারণত বাথটাব থাকে না। ম্যানেজমেন্ট, স্টাফ এবং ক্লিনিং সিস্টেম মোটামুটি ধরনের হয়ে থাকে।

ফোর স্টার বা চার তারকা হোটেল

আপনি হোটেলের লবিতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই দেখবেন কতটা সুশৃঙ্খলভাবে রুম সাজানো গোছানো রয়েছে। আরামদায়কভাবে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছুই থাকে এই হোটেলগুলোতে। রুম সার্ভিস, সুইমিং পুল, সাইড বার, কফিশপসহ আরও অনেক সুবিধাই পাওয়া যায় এই হোটেলে। এসব হোটেলের নিজস্ব টয়লেট্রিজ আইটেমের পাশাপাশি কন্টিনেন্টাল ব্রেকফাস্টের সুবিধা দেওয়া হয়। মোট কথা এই হোটেলে অসুবিধা হবার সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে।

ফাইভ স্টার বা পাঁচ তারকা হোটেল

এক ছাদের নিচে প্রায় সবকিছু পাওয়া যায় এসব হোটেলে। বিশাল লবি ও এরিয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রকমের খেলাধুলার জায়গা থাকে। বিশাল রুমের পাশাপাশি বড় বাথরুম থাকে৷ জিম, পার্সোনাল হেলথকেয়ারসহ অতিরিক্ত অনেক সুবিধা পাওয়া যায় ফাইভ স্টার হোটেলে। ২৪ ঘণ্টা রুম সার্ভিস, কার পার্কিং সুবিধার পাশাপাশি এসব হোটেলে থাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

এবার আপনি কিছুটা হলেও বুঝবেন কোন হোটেল কেমন। সুবিধার সঙ্গে তাদের সার্ভিস চার্জের ভারসাম্য আছে কিনা তাও নির্ধারণ করে উপযুক্ত হোটেল নির্বাচন করতে পারবেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
challenges for police to regain public trust

Cops want own commission with sweeping powers

Independent body to end politicisation, nepotism, corruption

16h ago