‘অজ্ঞাত ব্যক্তিরা’ আমিন হিলালীকে তুলে নিয়ে বক্তব্য রেকর্ড করে, আঙুলের ছাপ নেয়: পরিবার

আমিন মো. হিলালী। ছবি: সংগৃহীত

রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ৩০৪ কোটি টাকা পাচার মামলার আসামি আমিন মো. হিলালীকে গত শুক্রবার রাজধানীর উত্তরা থেকে 'অজ্ঞাত ব্যক্তিরা' তুলে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছে পরিবার।

পরে তার করোনা পরীক্ষা করা হয় এবং সই ও আঙুলের ছাপ নেওয়ার পরে এনএসইউর মামলা সম্পর্কে তার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।

আমিন হিলালীর ভাই রফিকুল ইসলাম হিলালী আজ সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব কথা বলেন।

আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপারসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী নিখোঁজের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি জিডি করেন এবং গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করেন।

পরে রোববার দিবাগত রাতেই তার খোঁজ পায় পরিবার।

রফিকুল ইসলাম হিলালী ডেইলি স্টারকে জানান, রোববার রাতে ভাইয়ের সঙ্গে তার কথা হয়। তার ভাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। এখন তিনি বাসায় বিশ্রাম করছেন।

ভাইয়ের কাছে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনার বর্ণনা শোনেন রফিকুল।

তার বরাত দিয়ে রফিকুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাই শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে উত্তরার বাসা থেকে হেঁটে অফিসে যাওয়ার সময় ১২ নম্বর সেক্টরে ৩টি মাইক্রোবাসে করে 'অজ্ঞাত ব্যক্তিরা' পথরোধ করে।'

রফিকুল বলেন, 'তারা ভাইকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বাধা দেন। তারা "ভুল লোককে তুলে নিয়েছে," তিনি তাদের বলেন। তারা তখন তাকে জিজ্ঞেস করে, "আপনি কি আমিন মো. হিলালী?" তিনি হ্যাঁ বললে তারা বলে, "আমরা সঠিক লোককেই নিচ্ছি"।'

'পরে তারা তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে তারা চোখ বাঁধে এবং তাকে চুপ থাকতে বলে। পরে গাড়িতে করে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়,' যোগ করেন তিনি।

'সেখানে তাকে লকআপে রাখা হয়। চোখ বাঁধা হয়। করোনা পরীক্ষার জন্য তার নমুনা নেওয়া হয়। তার রক্তচাপ ও নাড়ি পরীক্ষা করা হয়।'

'লকআপের ভেতরে কেউ ঢুকলে আমিন মো. হিলালীকে দেয়ালের দিকে তাকাতে বলে। এমনভাবে খাবার দেওয়া হয়, যেন তিনি কাউকে চিনতে না পারেন। রুমের সবদিকে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল,' বলেন রফিকুল।

তিনি আরও বলেন, 'কিছু প্রয়োজন হলে তাকে হাত তুলতে বলা হয়েছিল। ভাই টয়লেটে যাওয়ার সময়, লকআপের অন্যদের দেয়ালের দিকে মুখ করে থাকতে বলত অজ্ঞাত ব্যাক্তিরা।'

আমিন মো. হিলালীকে ৩-৪ জন অন্তত ছয় থেকে সাত বার জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের মুখ ঢাকা ছিল, মাথায় ক্যাপ ছিল। তারা এনএসইউর অর্থপাচার মামলার বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চায় এবং ক্যামেরায় তা রেকর্ড করে। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন। তাই ক্যামেরার সামনে তাকে স্বাভাবিক থাকতে বলা হয়। তারা ভাইয়ের সই ও আঙুলের ছাপও নেয়।'

রফিকুল জানান, পরে রোববার রাতে আমিন হিলালীকে আবার চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয়। হেমায়েতপুরের জয়মণ্ডপ এলাকায় একটি ইটভাটার কাছে তাকে ফেলে রেখে যায় 'অজ্ঞাত ব্যক্তিরা'। 

তারা তাকে সামনের দিকে হাঁটতে বলে এবং পেছনে তাকাতে নিষেধ করে বলে জানান তিনি।

একপর্যায়ে আমিন মো. হিলালী নিজেই চোখের বাঁধন খুলে ফেলেন। কিন্তু তখন তিনি কাউকে দেখতে পাননি।

'আমার ভাই রাস্তায় একটি অটোরিকশা থামান। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি অটোরিকশাচালকের মোবাইল ফোন থেকে আমাকে ফোন করেন। পরে আমি পুলিশকে বিষয়টি জানাই,' বলেন রফিকুল।

গত ১ জুলাই আমিন হিলালি 'রহস্যজনকভাবে' নিখোঁজ হন বলে পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন।

পরে তার ভাই রফিকুল বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত ৫ মে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অফ ট্রাস্টির ৫ সদস্য এবং আশালয় হাউজিং অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালীসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

ওই মামলায় নর্থ সাউথের বোর্ড অফ ট্রাস্টির ৪ জন এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান এবং মোহাম্মদ শাজাহানকে হাইকোর্টের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Binimoy platform suspended by Bangladesh Bank

BB suspends Binimoy over irregularities

During the previous AL govt, it was developed by the IDEA under the ICT Division at a cost of Tk 65 crore.

11h ago