ঈদুল আজহার প্রস্তুতি

Eid
ছবি: সংগৃহীত

সময় গড়িয়ে আবারও ঈদ দোরগোড়ায়। মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই বাড়তি খুশি, বাড়তি আনন্দ। আনন্দ আয়োজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে কাজের পরিধিও।

ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ নামেই বেশি পরিচিত। যেহেতু কোরবানির ঈদ মুসলমানরা উদযাপন করেন পশু কোরবানির মাধ্যমে, তাই পশু জবাইয়ের ব্যবস্থা, কোরবানির পশু কিনে আনার পর তাকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা, নিয়ম করে খাবার দেওয়া, কোথায় জবাই হবে, কে জবাই করবে সবকিছু আগে থেকে ঠিক করে রাখলে কাজ অনেকটাই এগিয়ে যায়। এ-তো গেল ঈদের আগের অবস্থা। ঈদের দিন বা ঈদের পরেও ঝক্কি-ঝামেলাও কিন্তু কম নয়। তবে কিছু কাজ এগিয়ে রাখা যায় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল করে।

* ঈদের দিনের অন্যতম অংশ রান্না। রান্নার কাজ অনেকটাই গুছিয়ে রাখতে আগে থেকে কিছু কাজ সেরে রাখা যায়। যেমন: রান্নার জন্য যেসব মশলাপাতি দরকার, তা আগে থেকে গুছিয়ে বা তৈরি করে রাখা, যেসব মসলা গুঁড়ো করা দরকার, সেগুলো গুঁড়ো করে আর যেগুলো বেটে রাখা দরকার সেগুলো বেটে কিংবা ব্লেন্ড করে রাখা। কোরবানির মাংসের সাধারণত বিভিন্ন পদ রান্না হয়ে থাকে। সেজন্য প্রয়োজনীয় মশলা, কাবাব মসলা, গরম মসলা, গোল মরিচ (আস্ত কিংবা গুঁড়ো) কিনে রেখে দেয়া যায়। বাটা মসলা (পেঁয়াজ, আদা, রসুন, জিরা) আগে বেটে ছোট ছোট বাকশে রেখে দিলে এতে প্রয়োজনের সময় হাতের কাছে সব মশলা পেলে রান্না হবে অনেকটাই সহজ।

* কোরবানির মাংস কাটাকুটির জন্য দরকার ধারালো ছুরি, দা, বটিসহ অন্যান্য সামগ্রী। তাই এখনই ধার করে পরিষ্কার করে রাখা যায় এগুলো। একটি বড় পাত্রে ফোটানো পানিতে সব সরঞ্জাম এক মিনিট পর্যন্ত ডুবিয়ে রেখে অথবা পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া যায়, যাতে জীবাণু না থাকে।

* কোরবানির মাংস বাসায় আনার পর রান বা সিনার অংশ, পায়ের মাংস এভাবে ভাগ করে ফেলা মঙ্গলজনক। আবার কলিজা ও মগজ ফ্রিজে না রেখে সঙ্গে সঙ্গে রান্না করে ফেলা উত্তম। এগুলো বাসি রান্না করলে স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজে চাকা মাংস না রেখে ছোট করে রাখুন।

* ফ্রিজে রাখার আগে মাংস ধোয়ার পর পানি ভালো করে ঝরিয়ে ফুড গ্রেডেড বা খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পারে, এমন প্লাস্টিক বা ব্যাগে রাখা উচিত।
এ ছাড়াও মাংস সংরক্ষণে জিপলক ব্যাগও হতে পারে সমাধান। এতে গুণগত মান ঠিক থাকে।

* প্যাকেট করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে প্রত্যেকবার বড় বড় প্যাকেট বের করে বরফ ছাড়িয়ে অল্প একটু নিয়ে বাকিটুকু আবার রেখে দিলে মাংসের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাংস ফ্রিজে রাখার আগে মার্কার দিয়ে পলিথিনের প্যাকেটের তারিখ লিখে রাখা যায়। এতে মাংস কতদিন ধরে ফ্রিজে আছে এবং কোনটা কী কাজে রাখা হয়েছে, তা সহজেই বের করা যায়।

৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার নিচে কাঁচা মাংস ৪ থেকে ৬ দিন রাখা যায়। জিরো ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার নিচে রাখলে গরুর কাঁচা মাংস ১২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।

* ঈদের দিনে অতিথি আপ্যায়নের পর্ব থাকে। উৎসবের অংশ হিসেবে আত্মীয়-পরিজনের বাড়ি যাওয়ার রীতি হয়েছে। আবার আপ্যায়নের শুরুই হয় মিষ্টান্ন বা চা দিয়ে। তাই কিছু খাবার আগে থেকেই তৈরি করে রাখা যায়। যেমন: ফিরনি, পায়েস, পুডিং আর চায়ের জন্য কুকিজ বা পাউন্ড কেক তৈরি করে ফ্রিজে রাখা যায়। যেসব পাত্রে পরিবেশন করা হবে, সেগুলো আগে থেকে ধুয়ে-মুছে রাখা।

* পরিপাটি করে ঘর ও আশপাশ সাজানোও উৎসবের অংশ। ঈদের উৎসবে সবচেয়ে ভালো চাদরটি বিছানায়, ভালো পর্দাগুলো দরজায়-জানালায় টাঙালে, বাড়ির সব জায়গায় পরিচ্ছন্নতার ছোঁয়া থাকলে ঘরের দিকে তাকালেই মন প্রফুল্ল হয়ে যাবে যে কারো।

* কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করার অন্যতম উপায় ডিপ ফ্রিজিং। কোরবানির আগে ডিপ ফ্রিজ পরিষ্কার করা এবং নিশ্চিত করা যে ফ্রিজের প্রতিটি ইঞ্চি জায়গারই সঠিক ব্যবহার হচ্ছে। তবে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে মাংস অবশ্যই সঠিকভাবে জাল দিয়ে রাখতে হবে।

* কোরবানির মাংস সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য প্রয়োজন পরিপূর্ণ প্যাকেজিং। মাংস অবশ্যই প্লাস্টিকের, জিপলক ব্যাগে বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়িয়ে রাখতে হবে। এতে মাংসে বাতাস ঢুকবে না। ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মানোর আশঙ্কা কমবে।

* সব কিছুর দিকে খেয়াল রাখতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল রাখার কথা ভুললেও সমস্যা। ঈদের সময়টায় সব কাজ সামলাতে গিয়ে নিজেও সতেজ ও সুস্থ থাকা জরুরি।

সময় মতো খাওয়ার বিষয়ে বেখেয়ালি হওয়া যাবে না। ঈদে যেহেতু ভারী খাবার বেশি থাকে, তাই স্বাস্থ্যের দিকেও সচেতন দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। শরীরের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, এমন খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষত মাংসের চর্বি এড়িয়ে চলতে মাংসের টুকরোগুলো স্তরে স্তরে কেটে চর্বির অংশটুকু বাদ দিতে পারেন। সিনার, রানের বা যে কোনো অংশ থেকে চর্বি বাদ দিয়ে শুধু লাল মাংসটুকু রাখা যেতে পারে। যাদের কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তারা মাংস প্রথমে সেদ্ধ করে পানিটুকু ফেলে রান্না করলেও চলে যাবে অনেকখানি চর্বি। সাদা সিরকা বা ভিনেগার, লেবুর রস ও লবণ মাখিয়ে কাঁচা মাংস ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। এভাবে রাখলে প্রায় আশি শতাংশ চর্বি চলে যায়। এরপর তা সংরক্ষণ করা যেতে পারে অথবা পছন্দমতো রান্নাও করা যায়।

ঈদ মানে উৎসব। আর সূর্যের আলোর মতো উৎসবের রঙও প্রতিটি প্রাণ স্পর্শ করে। সবার জন্যই ঈদ আনুক আনন্দের বার্তা। সুস্থতা, ভালোবাসা আর ত্যাগের মহিমায়।

Comments

The Daily Star  | English

US starts war with Iran bombing key nuclear sites

Iran says 'no signs of contamination' after US attacks on key nuclear sites

1h ago