নোয়াখালীতে প্রস্তুত ১ লাখ ৩৯ হাজার কোরবানির পশু

নোয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম চর উড়িয়া গ্রামের একটি খামারে গরু পরিচর্যা করছেন খামারিরা। ছবি: আনোয়ারুল হায়দার/স্টার

আগামী ১০ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। লকডাউনের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ইতোমধ্যেই গরু পরিচর্যা ও মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন নোয়াখালীর খামারী ও ব্যবসায়ীরা। 

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ১০ হাজার অতিরিক্ত পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। চলতি বছর নোয়াখালীতে কোরবানি পশুর চাহিদা ১ লাখ ৩০ হাজার রয়েছে। নোয়াখালী জেলার ৯টি উপজেলায় ছোট-বড় ৪ হাজার ৩৫১টি পশু খামার রয়েছে। 

জানা গেছে, জেলার চাটখিল-সোনাইমুড়ী বেগমগঞ্জ, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট ও হাতিয়া উপজেলায় ৪ হাজার ৩৫১টি খামারে প্রায় ১ লাখ ৩৯ হাজার গরু ছাগল, মহিষ ও ভেড়া কোরবানির জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

এদিকে খামারিরা বলছেন, এবছর কোরবানির জন্য দেশি গরুকেই বেশি পছন্দ করছেন ক্রেতারা। স্থানীয় খামারগুলোতে জেলার চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পশু থাকা সত্ত্বেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে  ঈদের এক মাস আগেই বিপুল পরিমাণ গরু দেশে প্রবেশ করায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়া নিয়ে আশঙ্কা করছেন তারা। 

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার নোয়াখালী জেলার কয়েকটি পশু খামার ঘুরে দেখা গেছে, খামারীরা রাত-দিন গরু পরিচর্চায় ব্যস্ত সময় পার করছে। অনেক ক্রেতাই ইতোমধ্যে খামারে গিয়ে তাদের পছন্দের গরু বাচাই করে কিনে খামারেই রেখে আসছেন। 

সোনাইমুড়ীর আমিশাপড়া, আমকি, চাটখিলের খিলপাড়া, দশঘরিয়া, চাটখিল এর কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর গরুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। তবে ক্রেতাদের ধারণা, ভারত ও মিয়ানমার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে গরু আসা শুরু হলে দেশি গরুর দাম আগামী কয়েকদিনের মধ্যে অনেকটা কমে যাবে।  দাম কমার আশায় অনেক ক্রেতা কোরবানির পশু না কিনে এখন বাজার দর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। 

এদিকে নোয়াখালী জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. কাজী রফিকুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এ বছর ভারত ও মায়ানমার থেকে গরু আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। চলতি বছর নোয়াখালীর হাতিয়া সুবর্ণচর থেকে প্রচুর কোরবানির পশু বিভিন্ন জেলায় যাবে। সুতরাং এ বছর স্থানীয় খামারিদের লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ১০৭ পশুর হাটে ৩৩টি ভেটেনারী মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম বিভিন্ন খামারে গিয়ে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দিয়ে যান।' 

তিনি বলেন, 'একটু চেষ্টা করলেই বাজারে আসা কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ পশুগুলো সহজেই চিনতে পারবেন ক্রেতারা। যেসব গরুর গায়ে আঙুল এর চাপ দিলেই মাংস দেবে যাবে এবং পশুগুলো নড়াচড়া কমসহ ঝিমানো ভাব থাকবে সেগুলো রোগা। তাছাড়া হাটে স্টেরয়েড  ও হরমোন ব্যবহার করে মোটাতাজাকরণ করা গরু বাজারে যাতে তুলতে না পারে সেজন্য পশুর হাট গুলোতে প্রাণীর সম্পদ কার্যালয়ের চিকিৎসকদের কঠোর নজরদারি রয়েছে। এছাড়াও প্রতি উপজেলায় খামারীদের সঙ্গে সভা করে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড কুফল সম্পর্কে খামারীদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।'

নোয়াখালী সদর উপজেলার মানফাত মিট ক্যাটল এন্ড ডেইরি ফার্মএর মালিক সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট শিহাব উদ্দিন শাহীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি বছর দেশি গরুর ব্যপক চাহিদা রয়েছে। আমার খামারে ৩০০ এর বেশি গরু রয়েছে। গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম গত বছরের তুলনায় একটু বেশি। তবে শৌখিন ক্রেতারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও তরতাজা গরুর দিকে বেশি ঝুঁকছেন।' 

চলতি বছর তিনি দাম ও ভালো পাওয়ায় বিগত করোনাকালীন সময়ের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী।

গত ১০-১২ বছর ধরে মৌসুমি গরুর ব্যবসা করে আসছেন নোয়াখালীর শহরে তরুণ উদ্যোক্তা খামারী আজাদ, রাজন মেম্বার, মিজানুর রহমান, শামসুদ্দিন, বেলাল মাঝিসহ আরও অনেকে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বছর রমজানের ঈদের পর তারা ২০০ এর বেশি দেশীয় গরু কিনে জেলার সুবর্ণচর এলাকায় বিভিন্ন খামার লালনপালন করে পরে কোরবানির হাটে বিক্রি করে থাকেন। লাভও মোটামুটি ভাল হয়। 

তারা জানান, এ বছর অনলাইনে পশু বেচাকেনায় তারা ইতোমধ্যেই ব্যস্ত সময় পার করছেন। শৌখিন ক্রেতাদের অনেকেই আবার আগে ভাগে পশু কিনে বাড়িতে রেখেই পরিচর্চা শুরু করেছেন।

 

 

 

Comments

The Daily Star  | English

Kuet returns to normalcy after 65 days of unrest

Around 10:00am, only a few police officers were seen patrolling near the main gate

1h ago