শিক্ষককে লাঞ্ছিত করায় ভীষণ মর্মাহত হয়েছি: রামেন্দু মজুমদার

রামেন্দু মজুমদার। ছবি: শাহরিয়ার কবির হিমেল/স্টার

বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ রামেন্দু মজুমদার। নাট্যদল থিয়েটারের প্রধান ব্যক্তিত্ব তিনি। প্রায় ২০ বছর পর মঞ্চের জন্য নতুন নাটক নির্দেশনা দিয়েছেন। আজ শুক্রবার নাটকটির প্রথম মঞ্চায়ন হবে শিল্পকলা একাডেমিতে।

নতুন নাটক, মঞ্চ নাটকের অর্জন, সমাজের নৈতিক অবক্ষয়সহ নানা বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার।

দ্য ডেইলি স্টার: প্রায় দুই দশক পর মঞ্চ নাটক পরিচালনায় ফিরলেন?

রামেন্দু মজুমদার: ঠিকই বলেছেন। ২০০৩ সালে 'মাধবী' নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আবার ২০২২ সালে এসে 'পোহালে শর্বরী'র নির্দেশনা দিলাম। মঞ্চের সঙ্গেই একটি জীবন কাটিয়ে দিলাম। নতুন এই নাটকটি আমাদের নাটকের দল থিয়েটারের। কোভিডের আগে আমরা মহড়া শুরু করেছিলাম। অবশেষে আজ মঞ্চে আসছে আমার সঙ্গে সংযুক্ত নির্দেশক হিসেবে আছেন ত্রপা মজুমদার। বলতে গেলে ৯০ ভাগই ত্রপা করেছেন। তারপরও আমি কীভাবে চাই, কী চাই, সেসব বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে।

পোহালে শর্বরী নাটকের মূল গল্প পড়ার পর ভালো লেগেছিল। তারপর দলের সঙ্গে শেয়ার করি। এরপর অংশুমান ভৌমিক মূল গল্প থেকে অনুবাদ করেন।

রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

ডেইলি স্টার: এই নাটকের প্রতিটি চরিত্রের জন্য দুই জন অভিনয়শিল্পী নেওয়ার মূল কারণ কী?

রামেন্দু মজুমদার: আমাদের থিয়েটারের ইতিহাসে এবারই প্রথম এই ঘটনা ঘটল। একটি নাটকের প্রতিটি চরিত্রের জন্য দুই জন করে অভিনয়শিল্পী অভিনয় করেছেন। এতে করে আমাদের দলের ও শিল্পীদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। সময় বেশি লেগেছে। সুবিধা হচ্ছে, এতে করে বেশি সংখ্যক শিল্পী অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছেন। কারও জন্য যেন নাটক প্রদর্শনী বন্ধ না হয়, সেটাও বড় সুবিধা হিসেবে কাজ করবে।

ডেইলি স্টার: 'পোহালে শর্বরী' নাটকের মূল বক্তব্য কী?

রামেন্দু মজুমদার: এই নাটকের মূল গল্প হচ্ছে—নারীর চাওয়া-পাওয়াকে মূল্য না দেওয়া। নারীর চাওয়া-পাওয়াকে মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি এখনো উদাসীন। নারীর ভূমিকা প্রাধান্য পেয়েছে নাটকে। দর্শকদের যদি বিষয়টি একটুও ভাবায়, তাহলেই আমাদের শ্রম সার্থক হবে।

দর্শকরাই নাটকের প্রাণ। দর্শকরা যদি আবারও মঞ্চে ফিরে আসে, তাহলে নাটকের জন্যই উপকার হবে। দর্শকরা আবারও মঞ্চে ফিরে আসুক। তাহলে নাট্যদলগুলো উৎসাহিত হবে। আরও নতুন নতুন নাটক আসবে।

ডেইলি স্টার: গত ৫০ বছরে থিয়েটার কত দূর এগিয়েছে?

রামেন্দু মজুমদার: প্রথমত মঞ্চ নাটক বিনোদনমাধ্যম হিসেবে আরও আগেই প্রতিষ্ঠিত। মঞ্চ নাটক অনেকদূর এগিয়েছে। দর্শকও বেড়েছে। আবার দর্শক কমেছেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে। বাস্তবতা বদলেছে। দর্শকরা মঞ্চে নতুন কিছু চায়। তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। সেটা পূরণ করতে পারলে আরও বহুদূর যাবে।

ডেইলি স্টার: তরুণরা থিয়েটারের প্রতি কতটা আগ্রহী?

রামেন্দু মজুমদার: বেশিরভাগ তরুণই টেলিভিশন মাধ্যমে কাজ করতে চায়। থিয়েটারে সময় দিলেও অনেকেরই চাওয়া থাকে টেলিভিশন বা চলচ্চিত্র। দ্রুত বড় হতে চায়। কিন্তু, শিল্প তো দ্রুত বড় হওয়ার ক্ষেত্র নয়। কেউ কেউ আছে শিখতে চায়। কেউ কেউ অনেক দায়িত্ববান। থিয়েটার নিয়ে ভাবে। আমি বলব, তরুণদের থিয়েটারের প্রতি আরও যত্নবান ও আগ্রহী হওয়া প্রয়োজন।

কারণ, তরুণ প্রজন্মই থিয়েটারকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। 'পোহালে শর্বরী' নাটকের সিংহভাগ কাজ কিন্তু ত্রপা মজুমদার
করেছে। আমি বিশ্বাস করি তরুণরাই হাল ধরবে।

রামেন্দু মজুমদার। ছবি: সংগৃহীত

ডেইলি স্টার: থিয়েটার নিয়ে আপনার জীবনের শেষ স্বপ্ন?

রামেন্দু মজুমদার: থিয়েটার স্কুলের জন্য একটা জায়গা যদি করে যেতে পারতাম! তাহলে ছোট থিয়েটার স্টুডিও করা সম্ভব হতো। মনে হয় না হবে। তারপরও আশায় আছি। থিয়েটার নিয়ে আপাতত এটাই আমার শেষ স্বপ্ন এবং অন্যতম একটি স্বপ্ন।

ডেইলি স্টার:‍ সমাজের নানা ক্ষেত্রে অস্থিরতা, শিক্ষককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে, জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এই বিষয়গুলো কতটা মর্মাহত করে আপনাকে?

রামেন্দু মজুমদার: এই ঘটনাগুলো আমাকে ভীষণ মর্মাহত করেছে। শিক্ষককে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনাটি ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। কীভাবে এটা সম্ভব? কতটা বর্বর সমাজে আমরা বাস করছি? এরকম ঘৃণ্য কাজের জন্য উপযুক্ত শাস্তি হতে হবে। শাস্তি না হলে এসব ঘটনা আবারও ঘটার সম্ভাবনা থেকে যাবে।

শিক্ষক সমাজের এ বিষয়ে আরও প্রতিবাদী হওয়ার দরকার ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর আরও বড় ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। আমরা সাংস্কৃতিককর্মীরা  প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু, সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিবাদ করা উচিত ছিল।

Comments

The Daily Star  | English
Banking sector crisis

Why is the banking sector crisis so deep-rooted?

The regime-sponsored immorality to protect or pamper the financial gangsters not only eroded the future of the banking sector, but also made the wound too difficult to recover from.

4h ago