বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাখাত

ছবি: শেখ নাসির

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে শিক্ষাখাতে। বন্যার কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১৮ জেলার অন্তত ৫ হাজার প্রাথমিক-মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, বন্যায় কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। আবার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গণে পানি জমে আছে। পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন এখন বন্যাদুর্গত মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত ১৮ জেলার ৪ হাজার প্রাথমিক ও ৯১৭ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া, এসব জেলার ১০২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ২ বছর বন্ধ থাকার পর পুনরায় খুললেও বন্যার কারণে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষার্থীরা আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কাজ করছে।

বন্যা পরিস্থিতির উন্নয়ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মুহিবুর রহমান।

মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, বন্যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী তাদের পাঠ্যপুস্তকও হারিয়ে ফেলেছে। আবার অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যাওয়ায় পড়াশোনা করতে পারছে না।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার নবীনগরে বসবাসরত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বন্যায় তার সব বই হারিয়ে ফেলেছেন।

তার বাবা আব্দুস সামাদ বলেন, 'আমি তার জন্য আরও বই কিনতে দোকানে গিয়েছিলাম। কিন্তু, আমি দেখেছি সেগুলোও বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আমার ছেলে তার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারছে না।'

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব পেকেরখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর ইকবাল বলেন, 'বিদ্যালয়টিকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। এখানে বর্তমানে ৪০০ মানুষ বসবাস করছে।'

'স্কুল পুনরায় চালু না হওয়া পর্যন্ত আমি বলতে পারব না যে কতজন শিক্ষার্থীর বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমি শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই বরাদ্দ দেওয়া হবে', বলেন তিনি।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মোশিউজ্জামান বলেন, 'সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী আমরা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকের ব্যবস্থা করব।'

সিলেট ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলো বেশ কয়েকদিন ধরে ভয়াবহ বন্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৭টি জেলার ৪ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কার্যক্রম এখন স্থগিত রয়েছে এবং বন্যায় কমপক্ষে ৪ হাজার ৩০০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক নাসিমা বেগম জানান, সিলেট জেলার ১ হাজার ১৮৫টি, সুনামগঞ্জে ১ হাজার ৪৭৫টি, হবিগঞ্জে ৪৮৮টি ও মৌলভীবাজারের ১২৮টিসহ মোট ৩ হাজার ২৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের উপ-পরিচালক মোজাহিদুল ইসলাম জানান, কুড়িগ্রামে ৩৯৪টি, গাইবান্ধায় ১১০টি, লালমনিরহাটে ১৪টি ও নীলফামারীতে পাঁচটিসহ ৪২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

তিনি বলেন, 'এ ছাড়াও, যেসব স্কুল এখনো খোলা আছে, সেখানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে।'

বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর মধ্যে ৩৫টি হবিগঞ্জের, ২৮৮টি সিলেটের, ২৬৫টি সুনামগঞ্জের, ৪০টি মৌলভীবাজারের, নয়টি গাইবান্ধার, ৫৫টি কুড়িগ্রামের, পাঁচটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার, সাতটি টাঙ্গাইলের, ২৮টি জামালপুরের, ৩২টি কিশোরগঞ্জের, ১২২টি নেত্রকোণার, আটটি বগুড়ার, ১৮টি সিরাজগঞ্জের এবং লালমনিরহাট, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নরসিংদী ও মানিকগঞ্জের একটি করে স্কুল রয়েছে।

বন্যার কারণে ১৯ জুন শুরু হতে যাওয়া এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, 'এবারের এসএসসি ও সমমানের দাখিল পরীক্ষা ঈদুল আজহার পর হতে পারে।'

এসএসসি পরীক্ষা পেছানোয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও পিছিয়ে যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

‘Shockingly insufficient’

"The proposed decision to allocate USD 250 billion per year for all developing countries is shockingly insufficient," said the adviser

3h ago