ফ্রান্সিয়া মার্কেজ: গৃহপরিচারিকা থেকে কলম্বিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট

কলম্বিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফ্রান্সিয়া মার্কেজ
কলম্বিয়ার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফ্রান্সিয়া মার্কেজ। ফাইল ছবি: রয়টার্স

গত রোববার কলম্বিয়ার মানুষ গুস্তাভো পেত্রোকে প্রথম বামপন্থী নেতা হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করেছেন। সঙ্গে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফ্রান্সিয়া মার্কেজ।

গতকাল ফরাসি সংবাদ সংস্থা ফ্রান্স২৪ এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

ফ্রান্সিয়া মার্কেজ একজন একক মাতা, যিনি পরিবেশরক্ষাকর্মী হিসেবে কাজ করার আগে কিছুদিন গৃহপরিচারিকার কাজ করেছেন। সামাজিক অসমতার জন্য কুখ্যাত ও ঐতিহাসিকভাবে রক্ষণশীলদের দ্বারা শাসিত দেশটির জন্য তার বিজয় একটি মাইলফলকের মত।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী নেতা ও সাবেক গেরিলা যোদ্ধা গুস্তাভো পেত্রো একজন ধনকুবের ভূমি ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে বড় ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণশীল ও মধ্যপন্থা অবলম্বনকারীদের শাসনে থাকা দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির রাজনৈতিক আবহে এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। 

একজন কৃষ্ণাঙ্গ একক মাতা থেকে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে আসতে মার্কেজকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ।

১৯৮১ সালে কলম্বিয়ার কাউকা অঞ্চলের একটি ছোট গ্রামে জন্ম নেন মার্কেজ। তিনি তার মায়ের কাছে বড় হন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে জন্ম নেয় তার প্রথম সন্তান। তিনি পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য একটি সোনার খনিতে কাজ নেন। এর কিছুদিন পর গৃহপরিচারিকার কাজ পান।

১৯৯৬ সালে তিনি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। যখন তার বয়স মাত্র ১৫ ছিল, তখনই তিনি জানতে পেরেছিলেন, একটি বহুজাতিক সংস্থা একটি প্রকল্প শুরু করতে চাচ্ছে, যার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম নদী ওভেইয়াসের ওপর বাধ নির্মাণ করা হবে। বাধটি নির্মিত হলে সে অঞ্চলের পরিবেশ ও সেখানে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের ওপর বড় আকারের দুর্দশা নেমে আসার ঝুঁকি ছিল।

ওভেইয়াস নদীকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন শুরু করেন মার্কেজ। গত ২০ বছর ধরে তিনি সে অঞ্চলকে ঘিরে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।

তবে ২০১৪ সালের আগে মার্কেজ খুব একটা পরিচিতি পাননি। সে সময় তিনি অবৈধ স্বর্ণ খননকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন, যারা পানি থেকে স্বর্ণ আলাদা করার জন্য পারদ ব্যবহার করছিলেন। পারদের ব্যবহারে খুব সহজে পানি থেকে স্বর্ণ আলাদা হয়ে আসে, কিন্তু এতে পানিতে বড় আকারে দূষণের সৃষ্টি হয়।

মার্কেজ একটি লং মার্চের আয়োজন করেন, যার অংশ হিসেবে ৮০ জন প্রতিবাদী নারী কাউকা থেকে রাজধানী বোগোতা পর্যন্ত ৫০০ কিমি পথ ১০ দিন ধরে হেঁটে যান। দলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কার্যালয়ের সামনে প্রায় ২০ দিন ধরে বিক্ষোভ করেন। পরিশেষে, এ আন্দোলনে সাফল্য আসে এবং সরকার ওভেইয়াসের আশেপাশে থাকা সব অবৈধ খনন কার্যক্রম বন্ধ করার অঙ্গিকার করে।

এরপর মার্কেজ আইন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বিভিন্ন ফোরামে অংশ নেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও এনজিও প্রতিষ্ঠানের সামনে বেশ কয়েকবার বক্তব্য দেন। তিনি ২০১৮ সালে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য 'গোল্ডম্যান প্রাইজ' পান। ২০১৯ এ তিনি বিবিসি প্রকাশিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পান।

২০২০ সালে মার্কেজ রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, 'আমি এ দেশের জন্য প্রার্থী হতে চাই। আমি জনগণকে মুক্ত ও সম্মানজনক অবস্থানে দেখতে চাই। আমি চাই আমাদের অঞ্চলগুলো নবজীবন লাভ করুক।'

২০২২ সালের মার্চে তিনি প্রাথমিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থীদের 'হিস্টোরিক প্যাক্ট' জোটের পক্ষে লড়েন এবং সবাইকে বিস্মিত করে ৩য় স্থান দখল করেন। ফলে সাবেক গেরিলা যোদ্ধা পেত্রো তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার জন্য নির্বাচন করেন।

কলম্বিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট
কলম্বিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। ফাইল ছবি: রয়টার্স

নির্বাচনী প্রচারণায় মার্কেজ বলেন, 'আমাদের সরকারগুলো জনগণ, ন্যায়বিচার ও শান্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তারা যদি তাদের কাজগুলো ঠিক মত করতো, তাহলে আমি এখানে থাকতাম না।'

২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পেত্রো ও মার্কেজ জয়ী হওয়াতে মার্কেজ পাদপ্রদীপের আলোয় এসেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, তার জন্য আগামীতে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Passport index 2025: Bangladesh in bottom 7

Bangladesh has slipped three notches in the global passport ranking for 2025, now standing at 100th place, according to the latest index released by UK-based firm Henley & Partners yesterday.

5h ago