কলম্বিয়া উপকূলে নৌকাডুবি: ৫ বাংলাদেশি উদ্ধার, এখনো নিখোঁজ ৫
কলম্বিয়ার কর্ডোবার পুয়ের্তো এস্কোনিডো উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় পাঁচ জন অভিবাসী বাংলাদেশিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত পাঁচ জন বাংলাদেশি এখনো নিখোঁজ আছেন।
প্রাথমিক খবরে ১০ জন নিখোঁজের খবর জানা গেলেও দেশটিতে অবস্থানরত অভিবাসী বাংলাদেশিরা পাঁচ জন নিখোঁজের সর্বশেষ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কলম্বিয়ায় নিকোক্লিতে অবস্থানরত কয়েকজন অভিবাসী বাংলাদেশির সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের যোগাযোগ হয়েছে। তাদের তথ্য মতে, স্থানীয় সময় শনিবার রাতে ক্যারিবীয় সাগরের উরাবা উপসাগর দিয়ে নিকোক্লি থেকে কাপুরগানা যাওয়ার পথে অভিবাসীদের স্পিডবোটটি ঝড়ের কবলে পড়ে উল্টে যায়। এসময় বোটে ১০ জন বাংলাদেশি এবং আট জন নেপালি ছিলেন।
তারা জানান, গত মঙ্গলবার জেলে ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা চার জন বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করেন। বুধবার সকালে আরেকজন বাংলাদেশি সাঁতার কেটে স্থানীয় কলাবাগান এলাকায় সাগরপাড়ে উঠতে সক্ষম হন।
কলম্বিয়ার গণমাধ্যম শুরুতে চার জন বাংলাদেশি উদ্ধারের কথা নিশ্চিত করে বোটে ১৮ জন যাত্রী থাকার কথা উল্লেখ করেছিল। তাদের সর্বশেষ খবরে বলা হয়, বোটটিতে দুজন কলম্বিয়ানসহ ১৭ জন যাত্রী ছিলেন। এ পর্যন্ত ছয় জন এশিয়ান নাগরিককে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১১ জনের খোঁজে কোস্টগার্ডের তিনটি ইউনিট অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
পুয়ের্তো এস্কোনিডো পৌরসভার প্রতিনিধি আর্সিসিও ম্যানুয়েল ভার্গাস সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘একজন দোভাষীর মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি যে, ১৭ জন নৌকায় ছিলেন, তাদের মধ্যে ১৫ জন বাংলাদেশি এবং দুজন কলম্বিয়ান নাগরিক।’
কোস্টগার্ড কর্মকর্তা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের কাছে পাসপোর্ট বা কোনো দলিল পাওয়া যায়নি, এতে প্রাথমিকভাবে তাদের পুরো পরিচয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল।’
কর্ডোবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া পাঁচ বাংলাদেশি সান জেরেনিমো দে মন্টেরিয়ায় চিকিৎসাধীন। তাদের অবস্থা বেশ নাজুক, কারণ তারা হিটস্ট্রোক, হাইপোথার্মিয়া এবং অপুষ্টিতে ভুগছেন।
পুয়ের্তো এস্কোনিডোর মেয়র বলেন, ‘যেখানে তাদের পাওয়া গিয়েছিল, সেখানে তারা বেশ কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। তাদের সবার ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ রয়েছে এবং একজন নাজুক অবস্থায় আছেন।’
নিকোলির অভিবাসী বাংলাদেশিরা উদ্ধার হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। তারা হলেন, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার আমিশাপাড়ার সাহাব উদ্দিন ও মো. ওমর ফারুক এবং সিলেটের সাইদুর রহমান। এর মধ্যে, সাইদুর নিজে সাঁতার কেটে তীরে ওঠে রক্ষা পান।
এ ছাড়া, নিখোঁজদের মধ্যে বাংলাদেশি পাঁচ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এরা হলেন, সিলেটের সোয়েব ও বদরুল, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার চাঁদ কাশিমপুরের ফয়সাল আহমেদ এবং সোনাইমুড়ির আমিশাপাড়ার শেখ দিদার ও রাসেল আহমেদ।
পানামা রওনা হওয়ার আগে এই ১৮ অভিবাসী কলম্বিয়ায় একটি হোটেলে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানে তোলা ছবিতে অভিবাসীদের মধ্যে নয় জন বাংলাদেশি ও চার জন নেপালি বলে নিকোলির প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিশ্চিত করেছেন।
নিখোঁজ শেখ দিদারের বড় ভাই নুর ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এক বছর আগে তার ভাই দেশ ছেড়েছিলেন। দীর্ঘ সময় আটলান্টিক পাড়ের ছোট দেশ সুরিনামে কাজ করেন। কিছুদিন আগে ব্রাজিল হয়ে কলম্বিয়ায় পৌঁছান। বাংলাদেশ সময় রোববার তার সঙ্গে পরিবারের শেষ কথা হয়। তখনই জানা যায়, দিদার পানামা রওনা হচ্ছেন। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
কলম্বিয়া থেকে পানামার সীমানায় পৌঁছতে অ্যান্টিওকিউয়া ইউরাবা অঞ্চলের অবৈধ মাইগ্রেশন রুটটির শেষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। এই ভ্রমণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকির অংশ পানামার দরিয়েন জঙ্গল, যা বিশ্বের অন্যতম ঘন এবং ভয়ংকর জঙ্গল।
প্রতিবছর বাংলাদেশিসহ হাজার হাজার অভিবাসী এই রুটের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিভিন্ন দেশের ১৭ হাজার ৬৬৮ জন অভিবাসী এই অঞ্চল দিয়ে পাড়ি জমান। ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে এ সংখ্যা নেমে দাঁড়ায় মাত্র তিন হাজার ৮৮৭ জনে।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে’র মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি অভিবাসী পানামায় প্রবেশ করেছেন এবং দিন দিন সেই সংখ্যা বাড়ছে।
Comments