এ যেন চালের চেয়ে কাঁকড় বেশি

‘অবৈধ’ উপায়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো চলবে না: ক্যাব

cab.jpg
ছবি: সংগৃহীত

জ্বালানি বিভাগ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) যেভাবে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করে সেই প্রক্রিয়াকে 'অবৈধ' আখ্যা দিয়ে ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব দাবি করেছে, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের মতো গণশুনানি করে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করতে হবে।

আজ সোমবার কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) জ্বালানির দাম বৃদ্ধির চেষ্টার প্রতিবাদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায়। সংগঠনের নেতারা বলেন, জ্বালানি খাতের চুরি কমানো, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় কমাতে গণশুনানির কোনো বিকল্প নেই। একইসঙ্গে বিপিসির অধীনে বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডকে আমলামুক্ত করারও দাবি জানান তারা।

লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জ্বালানি তেলের মূল্য অবৈধভাবে আবারও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। দিনে ৯০ কোটি টাকা ভতুর্কি কমানোর অজুহাতে তারা পরিবহন খাতের ব্যয় বৃদ্ধিসহ ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় শত শত কোটি টাকা বাড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত।

তিনি বলেন, বিপিসির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সর্বমহলের। ক্যাব দীর্ঘ দিন ধরে সংস্থাটির আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরপেক্ষ অডিট করানোর দাবি করে আসছে। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের (বিইআরসি) ২২ ও ৩৪ ধারা অনুযায়ী, সব পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার তাদের।

বিইআরসি'র একটি লাইসেন্সি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আবেদনের মতো বিপিসিকেও ৩৪(৬) ধারা অনুযায়ী আবেদন করার কথা। ধারা ৩৪(৪) অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শুনানি করে বিইআরসি দাম নির্ধারণ করবে উল্লেখ করে শামসুল আলম বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশে বিইআরসি এলপিজি দাম নির্ধারণ শুরু করার পর দেখা যায়, আগের ১০ বছরে কোম্পানিগুলো প্রতি সিলিন্ডার এলপিজিতে ভোক্তাদের কাছে গড়ে ১৫০ টাকা বেশি নিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ খাতের দাম বৃদ্ধির আবেদনের সূত্র ধরে তিনি বলেন, গ্যাসে ১১৭ শতাংশ ও বিদ্যুতে ৬৯ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু গণশুনানিতে প্রতিয়মান হয়, গ্যাসে ঘাটতি ৬২ শতাংশ। আর কোম্পানিগুলোর অযৌক্তিক ব্যয় আরও প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুতেও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।

'পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য তথা তরল জ্বালানির মূল্য বিইআরসি কর্তৃক শুনানির ভিত্তিতে নির্ধারিত হলে জানা যেত লিটার প্রতি বাড়তি কত টাকা বিপিসি নিচ্ছে,' উল্লেখ করে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, গত নভেম্বরে একবার অবৈধভাবে দাম বাড়ানোর প্রজ্ঞাপন চ্যালেঞ্জ করে ক্যাব উচ্চ আদালতে রিট করেছে।

'উক্ত মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বিপিসি নিজেই বিইআরসি আইন লঙ্ঘন করে ফার্নেসওয়েল-এর মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রাখে। বিষয়টি অপর একটি সম্পূরক আবেদনের মাধ্যমে অবহিত হয়ে উচ্চ আদালত মূল মামলাটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য তালিকায় আনতে গত ২২ মে আদেশ দেন। এর মধ্যেই আবারও দাম বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে।'

জ্বালানি বিভাগ বা বিপিসির পরিবর্তে সব তরল জ্বালানির মূল্য সমন্বয় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের শুনানির ভিত্তিতে করা ছাড়াও তিনি ক্যাবের পক্ষ থেকে আরও ৩টি দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো—কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল দ্বারা বিপিসির আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তরল জ্বালানি ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়াদি নিবিড় পর্যালোচনা করা, বিপিসির অধীনস্ত কোম্পানিগুলোর পরিচালনা বোর্ড থেকে সরকারের কর্মকর্তাদের অবমুক্ত করা এবং আইন লঙ্ঘন করে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য নির্ধারণের অপরাধে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, সরকারের সচিব বা কর্মকর্তা হিসেবে কাউকে বিপিসির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেসব পদে নিযুক্ত হয়ে তারা দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান অনেক সুবিধা নিয়ে থাকে। কেউ কেউ গাড়ি নিয়েছেন, কেউ ড্রাইভার নিয়েছেন, কেউ গাড়ির জ্বালানি ব্যবহার করেছেন, ১০ হাজার টাকা করে সিটিং এলাউন্স নেন—এ যেন চালের চেয়ে কাঁকড় বেশি। এভাবে তসরুফ হওয়া সব অর্থ সুদসহ তাদের থেকে আদায় করতে হবে।

তিনি বলেন, 'তারা কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে থেকে তেলের দাম বাড়ানোর দাবি তোলে, একইসঙ্গে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে সেই দাবির বাস্তবায়ন করে।'

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বদরুল ইমাম, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়াসহ অনেকে।

Comments

The Daily Star  | English

‘Should we grieve, rejoice, or cry’

Thousands of displaced, war-weary Gazans set off across the devastated Palestinian territory to return to their home areas yesterday after a long-awaited truce between Israel and Hamas took effect following an initial delay

2h ago