পায়রায় ভাঙন: আমতলী-তালতলীর ৬ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে

ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

প্রমত্তা পায়রার অব্যাহত ভাঙনে বরগুনার তালতলী ও আমতলী উপজেলার ৬ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ তাদের বসতবাড়ি, কৃষি জমি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

সম্প্রতি ওই নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন তীব্রতর হয়েছে। এতে তালতলী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া, সোবাহান পাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা এবং আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী ও বৈঠাকাটাসহ মোট ৬ গ্রামের মানুষ নদীর তীরে দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সম্প্রতি পায়রার স্রোতে তালতলী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। পার্শ্ববর্তী সোবাহান পাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন।

সরেজমিনে একই অবস্থা আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী ও বৈঠাকাটা গ্রামের। সেখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ভাঙন আতঙ্কে আছেন।

ছবি: সোহরাব হোসেন/স্টার

স্থানীয়দের অভিযোগ—২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর নদী-তীরবর্তী এসব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নামমাত্র সংস্কার হওয়ায় বর্ষা এলেই ভাঙন তীব্র হয় এবং ঘরবাড়ি, কৃষিজমিসহ লোকালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়।

এসব এলাকার কমপক্ষে ৩ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে বরগুনা, বরিশাল ও ঢাকায় চলে গেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত তেতুলবাড়িয়া গ্রামের এমাদুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রায় ৩ বিঘা জমি ও বড় একটা বাড়ি ছিল। ৬ বারের ভাঙনে সব হারিয়েছি। রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে ঝুপরি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে থাকি।'

তেতুলবাড়িয়া গ্রামের ষাটোর্ধ নারী আম্বিয়া বেগমের প্রশ্ন, 'বাড়িঘর নদীতে নিয়ে গেলে কোথায় থাকবো?'

জেলে হামেদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভিটেটুকু ছাড়া সব জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। এ আশ্রয়টুকু হারিয়ে গেলে পরিবার নিয়ে কোথায় দাঁড়াবো?'

আমতলীর উপজেলার বালিয়াতলী গ্রামের প্রায় ৫০০ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গত সপ্তাহে পায়রায় বিলীন হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা, রোয়ানুসহ একাধিক দুর্যোগের সময় ভাঙনে পড়ে বালিয়াতলী গ্রামটি এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন।

এই গ্রামের প্রায় ৫০০ বাসিন্দা বাড়ি, কৃষিজমি হারিয়ে এখন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। একই অবস্থা বৈঠাকাটা গ্রামের। পায়রার ভাঙনে কয়েক শ গ্রামবাসী জমি হারিয়ে এখন পথে বসেছে।

সর্বশেষ পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে রিং-বাঁধ নির্মাণ করলেও তা এখন ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড তালতলীর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. হিমেল আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তেতুলবাড়িয়া ও জয়ালভাঙ্গা গ্রামের ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল, তা এখন কাজে আসছে না। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।'

বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তালতলীর জয়ালভাঙ্গা ও তেতুলবাড়িয়া গ্রামের ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কংক্রিটের ব্লক ফেলে আমতলীর বৈঠাকাটা ও বালিয়াতলী গ্রামের ভাঙন রোধের প্রস্তাবনা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Not for kidney patient, they tried to rob bank for iPhones

Police say three robbers fabricated a story claiming that the robbery was to save a kidney patient

21m ago