দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে সর্বাত্মক চেষ্টায় সরকার
সরকার বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর মধ্যে থাকছে, আমদানির ওপর থেকে সব শুল্ক ও কর তুলে নেওয়া এবং বাজার কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
এসব উদ্যোগের অংশ হিসেবে, বেসরকারি খাদ্য আমদানিকারকরা ঝামেলাবিহীন ভাবে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য নিত্যপণ্য আমদানি করার জন্য সব ধরণের সহায়তা পাবেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আমদানির প্রক্রিয়া আরও সহজ করবে এবং পণ্যের চাহিদা ও মূল্যের দিকে নজর রাখবে, যাতে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরির মাধ্যমে দাম না বাড়ে।
লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলার সময় নিত্যপণ্য আমদানিকারকদের বিকল্প আমদানি উৎস উল্লেখ করতে হবে। একই সঙ্গে, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে।
শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দিয়েছেন।
সকাল ১০টায় শুরু হওয়া জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির (এনসিএসএ) বৈঠকে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, শীর্ষ পর্যায়ের বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শেখ হাসিনা নিত্যপণ্য আমদানির ওপর থেকে শুল্ক ও কর প্রত্যাহার করতে বলেন, যাতে মূল্যবৃদ্ধি সীমিত রাখা যায়।
প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে এবং দল-মত নির্বিশেষে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে বলেন।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার পর খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয়। তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান, যাতে কেউ সরকারের বিরুদ্ধে গুজব ছড়াতে ও কালোবাজারি করতে না পারে।
এর আগে, সরকার পণ্যের দাম ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে। গত ২৩ মে এই টাস্কফোর্স সরকারকে পরিশোধিত সয়াবিন, পাম, রাই-সরিষা, ক্যানোলা ও জলপাই তেল আমদানির ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহারের পরামর্শ দেয়।
এ ছাড়াও, এই টাস্কফোর্স সরকারকে ভারত থেকে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট ব্যবস্থার অধীনে গম আমদানি করার এবং দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় থেকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য ভোজ্যতেল আমদানি করার সুপারিশ করে।
এ ছাড়াও, সরকার ১৩৫টি বিলাসবহুল পণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার জন্য এগুলোর ওপর ২০ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রক শুল্ক আরোপ করেছে এবং রাইস ব্র্যান তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছে। বিদেশি মুদ্রার বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসব উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্ররা প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে আরও জানান, বিরোধী দলগুলোর কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী জানান, রাজনৈতিক দলগুলোকে সমাবেশ ও মিছিল করাসহ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দেওয়া হবে।
তবে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে দলগুলো যদি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাহলে প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি সতর্ক করেন।
১২ জুন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভায় একই ধরনের বক্তব্য দেন।
সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে তার সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।
এনসিএসএ'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, বিরোধী দলগুলোর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও যানজট নিরসনের বিষয়ে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
'এ ছাড়াও তিনি সিন্ডিকেট বন্ধ করতে নিয়মিত বাজার মনিটর করতে বলেন,' যোগ করেন আসাদুজ্জামান।
আসাদুজ্জামান আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী যানজটকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে রোহিঙ্গাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তারা অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানে জড়িত হতে না পারে। তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতেও নির্দেশনা দেন।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান থেকে পালিয়ে আসা সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গাসহ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে।
সূত্ররা আরও জানান, বৈঠকে শেখ হাসিনা ঢাকায় যানজট কমাতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। তিনি জানান, মেট্রোরেল, বাস র্যাপিড ট্রানজিট, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মতো বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
তিনি যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে কর্তৃপক্ষকে রাস্তা থেকে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করার নির্দেশ দেন।
তিনি একই সঙ্গে যানজটের কারণ হিসেবে এলোমেলোভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডকে দায়ী করেন এবং সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সজাগ থাকতে এবং নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি তাদের প্রতি সরকার ও পদ্মা সেতু সংক্রান্ত সব ধরণের গুজব প্রতিরোধ করার নির্দেশনা দেন।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments