পুরনো পথে হাঁটলে এই ইসি আগের ইসির মতোই হবে

প্রবাদ আছে, একটি দিন কেমন হবে তা সকাল দেখেই বোঝা যায়। এভাবে চিন্তা করলে নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনের দিনগুলো খুব একটা ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না।  

নতুন নির্বাচন কমিশন শুরুর দিনগুলোতে সাহস, সংকল্প ও দূরদর্শিতার সঙ্গে জনগণের আস্থা তৈরির প্রচেষ্টার বদলে পুরনো, আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজের চর্চাই বেশি করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

নতুন নির্বাচন কমিশনের সামনে প্রথম যে বড় চ্যালেঞ্জটি আছে, সেটি হচ্ছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যেভাবে সমস্যা মোকাবিলা করছে, তাতেও পুরনো, আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজের বিষয়টি স্পষ্ট। 

একজন সংসদ সদস্য সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করার পর সিইসি যেভাবে তার কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে অস্বীকার করছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে পরিবর্তন আনার জন্য ইসির আরও অনেক কিছু করার আছে এবং এ পরিবর্তন ইসির নিজের ভেতরেই সবচেয়ে জরুরি। 'আমাদের কিছুই করার থাকে না' বলে অসহায় আত্মসমর্পণ করার প্রবণতা সিইসির পূর্বসূরির ছিল। তিনি কোনো নির্বাচনী অনিয়মেরই দায় নিতে চাইতেন না।

অত্যন্ত বিতর্কিত ২টি সাধারণ নির্বাচনের পর নির্বাচনী ব্যবস্থায় আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিল নতুন কমিশন। এসেই তারা অলৌকিক কিছু করে ফেলবে- এমনটা কেউ আশা করছে না। কিন্তু সঠিক নীতি কার্যকর করা এবং বিরোধিতার মুখে, বিশেষ করে ক্ষমতাসীনদের বিরোধিতার মুখে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেওয়া নির্বাচন কমিশনের কাজেরই অংশ।

চিন্তা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে ইসির চলমান সংলাপে বিরতি নেওয়া উচিত। প্রচুর আইডিয়া আছে, কিন্তু শক্তিশালী অনুপ্রেরণা ছাড়া সেসব কাজ করবে না। রোববার ষষ্ঠ রাউন্ডের আলোচনার সময় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনাররা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের গুরুত্ব এবং অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকাসহ এমন কিছু পর্যবেক্ষণের কথা শেয়ার করেছেন, যেগুলো বিবেচনা করে দেখার যোগ্য।

তারা নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বের কথা বলেছেন। একজন সন্ধ্যার পর 'জ্বিন ও ভূতের' প্রভাব এড়াতে দিনের বেলায় ভোট গণনা শেষ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। এমনকি এসব নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে এগুলোকে ইসির কর্তৃত্বে রাখার পরামর্শও ছিল।

এদিকে, সিইসি সবাইকে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ইসি একা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে পারে না এবং 'ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোও এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার'। কথাটি সত্য, কিন্তু ভোটার ও বিরোধী দলগুলোর আস্থা অর্জনের উদ্যোগ কোথায়?

নির্বাচনী প্রচারের সময় সবার নিয়ম মানা নিশ্চিত করতে সিইসি ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করলে ভোটার ও বিরোধী দলগুলো কী বার্তা পায়? আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসিকে নিজের অংশের দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানাই। সেই দায়িত্ব পালনে পূর্ণ, নিঃশর্ত সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতিও আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।

Comments

The Daily Star  | English

White paper on economy to be submitted on Sunday: Debapriya

The outcomes of the white paper will also be shared with the media on Monday

1h ago