‘ব্যবসা না করেও কুসিক মেয়র মনিরুলের আয় বেড়েছে ৮৭ শতাংশ’

সুজনের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: স্টার

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) সদ্য সাবেক মেয়র মো. মনিরুল হক সাক্কুর মূল পেশা ব্যবসায় হলেও এবারের নির্বাচনের হলফনামায় তিনি বলেছেন, দুই মেয়াদে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করায় ব্যবসায়ের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত ছিল। তবে, এরপরও তার বাৎসরিক আয় বেড়েছে প্রায় ৮৭ শতাংশ।

আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুসিক নির্বাচনে মনিরুল হক ছাড়াও আরও ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিক আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। কিন্তু, মনিরুল হক তার হলফনামায় স্থাবর সম্পদের মূল্য উল্লেখ না করায় তার প্রকৃত সম্পদ নিরূপণ করতে পারেনি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে 'কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্য উপস্থাপন' করে সুজন।

তাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার স্বল্প সম্পদের অধিকারী প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে, বেড়েছে অধিক সম্পদ অধিকারীর সংখ্যা।

বিগত নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ১৫৭ প্রার্থীর মধ্যে কোটিপতি ছিলেন মাত্র ২ জন, এবারের নির্বাচনে ১৪৪ প্রার্থীর মধ্যে কোটিপতির সংখ্যা ৯। গত নির্বাচনে ১০২ জন ছিলেন ৫ লাখ টাকার কম সম্পদের মালিক। এবার সেই সংখ্যা ৬৭।

সাবেক মেয়র মনিরুল হকের সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য উল্লেখ করে সুজনের কেন্দ্রীয় সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'জনপ্রতিনিধিদের পদের সঙ্গে যেন জাদুর কাঠির সম্পর্ক রয়েছে। যারা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পদে যান, এমপি হন, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর পদে যান, তাদের আয় ও সম্পদ কীভাবে যেন বহুগুণ বেড়ে যায়।'

২০১৭ সালে মনিরুল ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয় ছিল ১৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এ বছর তিনি বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। তার মোট সম্পদের পরিমাণও সবার চেয়ে বেশি। কিন্তু, সেটি টাকার মূল্যমানে উল্লেখ করা হয়নি।

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। রিফাত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক, যেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, পরে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মো. রাশেদুল ইসলামের। তিনি কামিল পাশ করেছেন, যা এখন স্নাতকোত্তর সমমানের।

সুজনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে বিগত বারের মতো এবারও ব্যবসায়ী প্রার্থীর সংখ্যা বেশি।

মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে, ৩ জনের বিরুদ্ধে এখনো মামলা চলছে। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা বা হত্যাচেষ্টা মামলাসহ মোট ৮টি মামলা আছে। মো. মনিরুল হকের বিরুদ্ধে একটি হত্যা বা হত্যাচেষ্টা মামলাসহ মোট মামলার সংখ্যা ২ এবং অতীতে তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা ছিল। আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান বাবুলের বিরুদ্ধে ২টি মামলা আছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা না থাকলেও আগে ৩০২ ধারার একটি হত্যা বা হত্যাচেষ্টার মামলা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উপস্থাপন করেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। তিনি বলেন, প্রার্থীদের তথ্যগুলো নির্বাচন কমিশনের উচিত জনসম্মুখে প্রকাশ করা। তাতে কোন প্রার্থী কেমন, সেটা ভোটাররা জানতে পারবেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বলে আসলেও তারা এগুলো করে না।

'তা ছাড়া, প্রার্থীরা হলফনামায় যেসব তথ্য উপস্থাপন করে, সেগুলো নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাই করে দেখা উচিত। কেউ তথ্য গোপন করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রার্থীদের স্থাবর সম্পদের উল্লেখ করার ক্ষেত্রে ছক পরিবর্তনের কথা আমরা অনেক দিন ধরে বলে আসছি, কিন্তু সেটা হয়নি। তাদের স্থাবর সম্পত্তির মূল্য অর্জনকালে না করে বর্তমান বাজারমূল্যে উল্লেখ করা উচিত', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Matarbari project director sold numerous project supplies

Planning Adviser Prof Wahiduddin Mahmud today said the Matarbari project director had sold numerous project supplies before fleeing following the ouster of the Awami League government on August 5.

1y ago