বাড়ছে ব্রডব্যান্ড, স্মার্টফোন, ল্যাপটপের দাম
প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বাড়ছে মোবাইল ফোন ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রস্তাবিত এই বাজেট আইসিটি খাতের উন্নয়নের পক্ষে অনুকূল নয়।
দেশের অনেক মানুষের হাতে মোবাইল ফোন নেই এবং অধিকাংশই স্মার্টফোন ব্যবহার করেন না। মোবাইল ফোন বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট গ্রাহকদের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবার ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর শেষ পর্যন্ত গ্রাহকদেরই বহন করতে হবে, যা মহামারি চলাকালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করবে।
সরকার ল্যাপটপ আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছে। এতে গ্রাহকদের ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। কারণ, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় এবং ডলারের দাম বাড়ার কারণে ইতোমধ্যেই ডিভাইসের দাম ১০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।
বাজেট প্রস্তাবে লোকসানকারী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য ন্যূনতম আয়কর মওকুফ, ডিজিটাল কমার্স থেকে ভ্যাট অব্যাহতি এবং ডেলিভারি ফি থেকে ভ্যাট হ্রাসসহ আইসিটি অ্যাসোসিয়েশনের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে 'আজকের ডিল'র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) একেএম ফাহিম মাশরুর বলেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রস্তাবিত বাজেট প্রযুক্তি শিল্প ও ডিজিটাল কমার্সের উন্নয়নে সহায়ক নয়। এনবিআরের আগের কোনো প্রস্তাবই গ্রহণ করা হয়নি।'
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সত্ত্বেও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইটি বা আইটিইএস সেক্টর, যারা বিভিন্ন ধরনের কর ছাড় পায়, তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।'
'উল্টো এনবিআর ইন্টারনেট পরিষেবার ওপর ১০ শতাংশ অগ্রিম আয়কর চাপিয়েছে। যেহেতু আমাদের লাভের পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে তাই শেষ পর্যন্ত আমাদের ইন্টারনেটের দাম ১০ শতাংশ বাড়াতে হবে এবং ব্যবহারকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন,' বলেন তিনি।
তবে প্রস্তাবিত বাজেটে স্টার্ট আপ ও প্রযুক্তি খাতের জন্য কিছু সুখবর রয়েছে। প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের টার্নওভার করহার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে এবং ব্যবসার প্রসারের জন্য স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যয় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের আগে চালু হওয়া স্টার্ট-আপগুলো এই বিশেষ সুবিধার আওতার বাইরে থাকবে।
'আজকের ডিল'র সিইও মাশরুর আরও বলেন, 'বেশিরভাগ নামকরা স্টার্ট-আপ যেমন চালডাল, শপআপ, পাঠাও, আজকের ডিল, পেপারফ্লাই ও ট্রাক লাগবে এই সুবিধা পাবে না কারণ তাদের বয়স ৫ বছরের বেশি।'
এটি স্থানীয় প্রযুক্তি শিল্পের জন্য সুখবর কারণ সরকার হাই-টেক পার্কগুলোতে সরকার হাই-টেক পার্কে কম্পিউটার অ্যাসেম্বল করার জন্য ব্যাটারি, এলইডি/এলসিডি/টাচ প্যানেল এবং প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড তৈরির কাঁচামালের ওপর আমদানি শুল্কে রেয়াত বাড়িয়েছে।
অন্যদিকে, গুগল বা মেটা (ফেসবুক) এর মতো টেক জায়ান্টকে আগামী অর্থবছর থেকে এনবিআরে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-এর সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি আশা করেছিলাম যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের চেতনায় আগামী জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, মোবাইল ব্যাংকিং, রাইড-শেয়ারিংসহ মোবাইলভিত্তিক পরিষেবাগুলোর ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট এর বিপরীত বলে মনে হচ্ছে।'
Comments