মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোই প্রস্তাবিত বাজেটের মূল চ্যালেঞ্জ: ডিসিসিআই

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থায়নের মতো বিষয়গুলোকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থায়নের মতো বিষয়গুলোকে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে গণমাধ্যমকে এসব কথা জানিয়েছে ডিসিসিআই। 

প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করজাল পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা, কর কাঠমোর অটোমেশন, যৌক্তিক রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও সরকারি ব্যয়ে সামঞ্জ্যসতা নিশ্চিত করতে হবে। 

এ ছাড়া বাজেটে আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে আয়-ব্যয়ের ঘাটতির কারণে স্থানীয় ব্যাংকিং ও অন্যান্য বৈদেশিক খাত থেকে অর্থ সংস্থানের ওপর নির্ভরতা তৈরি করতে পারে। ঢাকা চেম্বার মনে করে, বাজেটের আকার বাড়ানোর চাইতে পরিকল্পিত, সময়োপযোগী, ব্যয় কার্যক্রমে দক্ষাতা অর্জন এবং বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়ন একান্ত অপরিহার্য।

করপোরেট কর হ্রাসের ক্ষেত্রে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশের বেশি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে ছাড়া এবং লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বমোট ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ ছাড়া সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন না করলে লিস্টেড কোম্পানির ২৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব পুনঃবিবেচনা করা প্রয়োজন। স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আরও বেশি হারে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান করপোরেট কর হ্রাস করা প্রয়োজন বলে মনে করে, ঢাকা চেম্বার।

বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর নতুন করে করের বোঝা আরও না বাড়িয়ে, করজাল বৃদ্ধির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে অন্যান্য জেলাগুলোর আয়করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। ব্যক্তি শ্রেণির আয়করে ন্যূনতম সীমা অপরিবর্তিত না রেখে তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

আরও বলা হয়েছে, পণ্য জব্দ করার ক্ষমতা ধারা ৮৩, ৮৪ এবং ১০০ নম্বর ধারাগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন, যাতে হয়রানিমুক্ত ভ্যাট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়। 

প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল সাপ্লাইয়ে উৎসে কর ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয় উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উৎসে করের হার সব রপ্তানিকারদের জন্য সমানভাবে নির্ধারণ করা একান্ত আবশ্যক। এর ফলে তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের বৈষম্য হ্রাস পাবে।

আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ও পরিচালন ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব সংগ্রহ কাঙিক্ষত হারে বৃদ্ধি না পেলে সরকারের ব্যাংকনির্ভরতা আর্থিক খাতকে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে। এমন বাস্তবতায় আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য খাতে যেমন: সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ এবং সুদের হারের মধ্যে ভারসাম্য রাখার আহ্বান জানাচ্ছে ডিসিসিআই।

বাজেটে বেসরকারি খাত থেকে ২৪ দশমকি ৯ শতাংশ বিনিয়োগ প্রাপ্তির প্রাক্কলন করা হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এট বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ নিশ্চিতকরা প্রয়োজন। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়নের গতি আশাব্যঞ্জক নয়। ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার ৫৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ । এ ছাড়া বৃহৎ প্রকল্পগুলো স্বল্প সময় ও খরচের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যক্রম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বাঁধা তৈরির পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণ নির্ভরতা আরও বাড়বে।

চলতি অর্থবছরে ৪৭ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানির বিপরীতে আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এতে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ দশমকি ৭ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বৈচিত্র্যকরণ ও রেমিট্যান্স আহরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বাজেটে বিশেষ নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।

Comments

The Daily Star  | English

Political parties want road map to polls

Leaders of major political parties yesterday asked Chief Adviser Prof Muhammad Yunus for a road map to reforms and the next general election.

3h ago